দুই কার্যদিবসে মুনাফা সংগ্রহ ৪৯৩ কোটি টাকা!

আতাউর রহমান: শেষ কার্যদিবসে গতকাল সূচকের কিছুটা উত্থানের মধ্য দিয়ে সপ্তাহ শেষ করেছে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার। সপ্তাহের শুরুটা উত্থান দিয়ে শুরু করলেও পরে উত্থান-পতনের মধ্যেই ছিল বাজার। এতে এক দিনে লেনদেন যেমন দুই হাজার ৮০০ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে, তেমনি বাজার মূলধন বেড়ে আবার কমেছেও। বাজারের এই উত্থান ও পতনের মাধ্যমে দুই কার্যদিবসে ২০ ও ২১ সেপ্টেম্বরে প্রায় ৪৯৩ কোটি টাকা মুনাফা বিনিয়োগকারীরা সংগ্রহ করেছে বলে বাজার পর্যালোচনায় দেখা গেছে।

বাজার পর্যালোচনায় দেখা যায়, গত ১৪ সেপ্টেম্বর ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেন শেষে বাজার মূলধন ছিল ৫ লাখ ১৮ হাজার ৯০০ কোটি ৫৩ লাখ ৭১ হাজার টাকা। এরপর চলতি সপ্তাহে উত্থানের মাধ্যমে লেনদেন শুরু করার পর দ্বিতীয় কার্যদিবসে গত ১৯ সেপ্টেম্বর লেনদেন শেষে বাজার মূলধন দাঁড়ায় ৫ লাখ ২৩ হাজার ২৩৬ কোটি ৯০ লাখ ৩৬ হাজার টাকা। সে হিসাবে তিন কার্যদিবসে বাজার মূলধন বেড়েছে ৪ হাজার ৩৩৬ কোটি ৩৬ লাখ ৬৫ হাজার টাকা।

এর ঠিক পরের কার্যদিবসেই গত ২০ সেপ্টেম্বর ডিএসইতে ১৫ বারের মতো লেনদেন দুই হাজার ৮০০ কোটি টাকা ছাড়ালেও সূচক কমার সঙ্গে বাজার মূলধন কমতে শুরু করে এবং ২০ ও ২১ সেপ্টেম্বর দুই কার্যদিবসেই পুঁজিবাজারে সূচক ও বাজার মূলধন কমে। এরপর আবার গতকাল সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে সূচকের সঙ্গে বাজার মূলধন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ ২২ হাজার ৭৪৩ কোটি ৯৯ লাখ ২৩ হাজার টাকা। এই শেষ তিন কার্যদিবসের উত্থান-পতন এবং বাজার মূলধন কমা ও বৃদ্ধির বিষয়টিকে মুনাফা সংগ্রহ এবং পুনরায় বিনিয়োগের কারণ হিসেবে জানিয়েছেন বাজার-সংশ্লিষ্টরা।

এতে দেখা যাচ্ছে, গত ১৪ সেপ্টেম্বর থেকে পরের তিন কার্যদিবসে ৪ হাজার ৩৩৬ কোটি টাকার বাজার মূলধন বাড়লেও পরের তিন কার্যদিবস শেষে ২২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাজার মূলধন বেড়েছে ৩ হাজার ৮৪৩ কোটি ৪৫ লাখ ৫২ হাজার টাকা। সে হিসাবে গত ১৯ সেপ্টেম্বরের তুলনায় ২২ সেপ্টেম্বর লেনদেন শেষে বাজার মূলধন এখনও ৪৯২ কোটি ৯১ লাখ ১৩ হাজার টাকা কম রয়েছে। এতে বাজারের উত্থানের ফলে বিনিয়োগকারীরা গত সপ্তাহে যে মুনাফা সংগ্রহ করেছে তার পুরোটা পরে আবার বিনিয়োগ করেনি। যে কারণে সপ্তাহ শেষে বাজার মূলধন ৪৯৩ কোটি টাকা কম থাকাকে মুনাফা তুলে নেয়া বলছেন সংশ্লিষ্টরা।

বাজার-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত সপ্তাহে প্রথম দিকে উত্থানের মাধ্যমে এবং লেনদেন দুই হাজার ৮০০ কোটি টাকা ছাড়ানোর মাধ্যমে যে বাজার মূলধন বেড়েছে তা সপ্তাহ শেষে ধরে রাখতে পারেনি। কারণ সপ্তাহের শেষের দিকের দুই কার্যদিবসে বড় একটি বিনিয়োগ তুলে নিয়েছেন বিনিয়োগকারীরা। এরপরে আবার কম দামে বেশি কিছু শেয়ারে বিনিয়োগের ফলে সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে সূচকের উত্থান দেখা যায়। কিন্তু এর আগে যে বিনিয়োগ তুলে নেয়া হয় তা পুরোটা বিনিয়োগে আসেনি।

তারা বলেন, দেখা যায় তুলে নেয়া বিনিয়োগের সমপরিমাণ শেয়ার দাম কমে যাওয়ার ফলে আরও কমে কিনতে পারে এবং আবার অনেকে নতুন করে কিছু কম দামি শেয়ারে বিনিয়োগ করে। এতে করে তুলে নেয়া পুরো টাকা বিনিয়োগ করতে হয় না। তাই নতুন করে বিনিয়োগের পরেও তুলো নেয়া টাকার যেটা বাকি থাকে সেটা মুনাফা হিসেবেই তারা সংগ্রহ করে। এই মুনাফা করা অর্থ আবার বিনিয়োগে আসে কি না তা দেখা যাবে আগামী সপ্তাহে। যদি আগামী সপ্তাহে বাজার মূলধন এই সপ্তাহের সর্বোচ্চ অবস্থানের জায়গায় ফিরে আসে তাহলে বোঝা যাবে বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ বাড়ছে এবং আরও বৃদ্ধি পেলে নতুন করে বিনিয়োগ আসছে। আর যদি কমে যায় তাহলে বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগ তুলে নিচ্ছে বলে জানান তারা।

এদিকে গত সপ্তাহে উত্থান-পতনের মাধ্যমে সপ্তাহ শেষে ডিএসইর মোট লেনদেনের পরিমাণ বেড়েছে ৩ হাজার ২৭ কোটি ৪৬ লাখ ৯ হাজার ৬৫ টাকা। এক্ষেত্রে আগের সপ্তাহে ডিএসইর মোট লেনদেন ছিল ৭ হাজার ৮২ কোটি ৯২ লাখ ৯৯ হাজার ৭২৪ টাকা এবং গত সপ্তাহে লেনদেন হয়েছে ১০ হাজার ১১ লাখ কোটি ৩৯ লাখ ৮ হাজার ৭৮৯ টাকা।

অপরদিকে সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসইর বাজার মূলধন বেড়েছে ২ হাজার ৬১৭ কোটি ৪২ লাখ ৪১ হাজার ১২৬ টাকা বা দশমিক ৫০ শতাংশ। গত সপ্তাহের শুরুতে বাজার মূলধন ছিল ৫ লাখ ২০ হাজার ১২৬ কোটি ৫৬ লাখ ৮১ হাজার ৯২১ টাকা এবং সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস লেনদেন শেষে বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ ২২ হাজার ৭৪৩ কোটি ৯৯ লাখ ২৩ হাজার ৪৭ টাকা।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০