দুই কোটি টাকার ফুল বিক্রির লক্ষ্য ঝিনাইদহের চাষিদের

নয়ন খন্দকার, ঝিনাইদহ: বিশ্ব ভালোবাসা দিবস আজ। এ দিবসটি সামনে রেখে কয়েক দিন ধরে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন শহরে নানা রঙের ফুল সরবরাহে ব্যস্ত সময় পার করছেন ঝিনাইদহের ফুলচাষিরা। কভিডের প্রথম দিকে ফুল চাষে ধস নামলেও বর্তমানে ক্ষতি পুষিয়ে নিতে চাইছেন চাষিরা। ফুলের রাজধানী হিসেবে পরিচিত যশোরের গদখালী। দ্বিতীয় রাজধানী হিসেবে পরিচিতি ঝিনাইদহ। এ জেলার ফুলচাষিরা বিশ্ব ভালোবাসা দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে দুই কোটি টাকার ফুল বিক্রির লক্ষ্য নির্ধারণ করেছেন।

এছাড়া প্রতিবছর বসন্তবরণ, ভালোবাসা দিবস, বাংলা ও খ্রিষ্টীয় নববর্ষ, স্বাধীনতা দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের মতো দিবসগুলোয় ফুলের অতিরিক্ত চাহিদা থাকে। এসব চাহিদার সিংহভাগ জোগান দিয়ে থাকেন কালীগঞ্জের ফুলচাষি ও ব্যবসায়ীরা।

গদখালীর পর ফুলের আরেকটি বড় বাজার সৃষ্টি হয়েছে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে। বিশ্ব ভালোবাসা দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের দুই দিনে এখানকার ফুলচাষিরা দুই কোটি টাকার বেশি ফুল বিক্রি করবেন বলে আশা করছেন।

জেলার সবচেয়ে বেশি ফুল উৎপাদিত হয় কালীগঞ্জ উপজেলায়। এ উপজেলার ত্রিলোচনপুর গ্রামের সফল ফুলচাষি ও ব্যবসায়ী এসএম টিপু সুলতান ১০ বিঘা জমিতে ফুল চাষ করেছেন। তার ফুলের মধ্যে রয়েছে গোলাপ, জারবেরা ও চন্দ্রমল্লিকা।

এসএম টিপু সুলতান জানান, তিনি ২৭ বছর ধরে ফুলের সঙ্গে জড়িত। ঢাকায় তার ফুলের দোকানও আছে। সেখানে তিনি ফুলের ব্যবসা করেন। তিনি নিজে শেরেবাংলা নগর ফুলচাষি ও ফুল ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি লিমিটেডের সহ-সাধারণ সম্পাদক। তিনি সর্বপ্রথম গ্লাডিওলাস দিয়ে ফুলের চাষ শুরু করেন। এবার তিনি পাঁচ বিঘা জমিতে জারবেরা, দুই বিঘা জমিতে গোলাপ ও বাকি তিন বিঘা জমিতে চন্দ্রমল্লিকাসহ অন্যান্য ফুলের চাষ করেছেন। তিনি জানান, এবার গোলাপ ফুলের বাজার খুব চড়া যাচ্ছে। এক চালানে একটি গোলাপ সর্বোচ্চ ৩০ টাকা দরেও বিক্রি করেছেন।

কালীগঞ্জের সুন্দরপুর ইউনিয়নের ডুমুরতলা গ্রামের ফুলচাষি মিজানুর রহমান জানান, তিনি গাঁদাফুল চাষ করেন। চলতি বছর তিনি পাঁচ কাঠা, একই এলাকার মোহাম্মদ আলী ও এমদাদুল হক দুই ভাই মিলে আট কাঠা ও আব্দুল আলীম পাঁচ কাঠা জমিতে ফুলের আবাদ করেছেন।

তিনি আরও জানান, দড়িতে ফুল গেঁথে ঝোপা তৈরি করা হয়। এক ঝোপায় ৬৫০ থেকে ৭০০ গাঁদাফুল থাকে। ফুলের মূল্য কম থাকলে এক ঝোপা বিক্রি হয় ৩০ থেকে ৪০ টাকায়। দাম বাড়লে সর্বোচ্চ ৭০০ টাকায় পর্যন্ত বিক্রি করতে পারেন। বর্তমানে ৬০ থেকে ৭০ টাকায় এক ঝোপা ফুল বিক্রি হচ্ছে।

ঝিনাইদহ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আজগর আলী জানান, জেলার প্রায় ৪০০ হেক্টর জমিতে ফুলের আবাদ হয়ে থাকে। কিন্তু করোনা শুরু হওয়ার পর ফুলের আবাদ কমেছে। চলতি বছর প্রায় ২১৭ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন ধরনের ফুলের আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে জেলা সদরের গান্না, কোটচাঁদপুর উপজেলার ইকড়া, কালীগঞ্জ উপজেলার বালিয়াডাঙ্গা, মহেশপুর উপজেলার নেপা ও শ্যামকুড় এলাকায় সবচেয়ে বেশি ফুল আবাদ হয়ে থাকে। জেলায় আবাদকৃত মোট ফুলের মধ্যে গাঁদাফুলই শতকরা ৭০ ভাগ। 

সরেজমিনে বালিয়াডাঙ্গা বাজার ও কালীগঞ্জের মেইন বাসস্ট্যান্ডে দেখা যায়, দুপুর থেকে শত শত কৃষক তাদের ক্ষেতের উৎপাদিত ফুল ভ্যান, স্কুটার ও ইঞ্জিনচালিত বিভিন্ন পরিবহনযোগে নিয়ে আসছেন। বেলা গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে বালিয়াডাঙ্গা বাজার ও কালীগঞ্জ মেইন বাসস্ট্যান্ড ভরে যায় লাল, সাদা আর হলুদ ফুলে ফুলে।

সারাদেশের আড়তগুলোয় ফুল পাঠাতে আসা একাধিক ফুলচাষির সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, সারাবছরই তারা ফুল বিক্রি করে থাকেন। তবে প্রতিবছর বাংলা ও খ্রিষ্টীয় নববর্ষের দিন, স্বাধীনতা দিবস, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, ভালোবাসা দিবস প্রভৃতি দিনে ফুলের অতিরিক্ত চাহিদা থাকে। এ সময় দামও থাকে ভালো।

ফুলচাষিরা নিজেরা না এসে সারাবছর তাদের ক্ষেতের ফুল চুক্তি মোতাবেক ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেটসহ দেশের বড় বড় শহরের আড়তে পাঠিয়ে দেন। এসব স্থানের আড়তদারেরা বিক্রির পর তাদের কমিশন রেখে বাকি টাকা পাঠিয়ে দেন। তারা মোবাইল বা ফোনালাপের মাধ্যমে বাজারদর ঠিকঠাক করে ফুল পাঠিয়ে থাকেন বলেও জানান কৃষকেরা।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০