নিয়াজ মাহমুদ: দিন দিন বড় হচ্ছে ব্র্যান্ডের আইসক্রিমের বাজার। চলতি বছরে এ বাজার ১৫ শতাংশ সম্প্রসারণ হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। দেশীয় আইসক্রিমের বাজারে নেতৃত্ব দিচ্ছে মূলত পাঁচটি কোম্পানি। এর মধ্যে দুই-তৃতীয়াংশ বাজার দখল করে আছে ঈগলু ও পোলার ব্র্যান্ডের আইসক্রিম।
সবশেষ প্রকাশিত লংকাবাংলা বিনিয়োগ গাইডের তথ্যমতে, বাংলাদেশের আইসক্রিমের বাজার প্রায় এক হাজার কোটি টাকার। এর মধ্যে ৩৮ শতাংশ বাজারই আবদুল মোনেম লিমিটেডের ব্র্যান্ড ‘ঈগলু’র দখলে। বাজার দখলে এরপরেই রয়েছে ঢাকা আইসক্রিম ইন্ডাস্ট্রিজের পোলার আইসক্রিম। এ ব্র্যান্ডের দখলে রয়েছে ২৮ শতাংশ বাজার। দুই ব্র্যান্ডের আইসক্রিমের বাজার শেয়ার রয়েছে ৬৬ শতাংশ; যা মোট বাজার শেয়ারের দুই-তৃতীয়াংশ।
২০১৬ সালের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখানো হয়, বাজার দখলে এরপর রয়েছে কাজী ফুড ইন্ডাস্ট্রিজের জাএনজি আইসক্রিম। এর দখলে রয়েছে বাজারের ১৩ শতাংশ। কোয়ালিটি ব্র্যান্ডের বাজার শেয়ার রয়েছে ১১ শতাংশ। এরপরেই রয়েছে গোল্ডেন হারভেস্ট অ্যাগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজের ব্ল–প ব্র্যান্ড আইসক্রিম। পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত এ কোম্পানিটির আইসক্রিমের বাজার শেয়ার রয়েছে আট শতাংশ। বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরুর মাত্র দুই বছরের মাথায় এ অবস্থান করে নেয় কোম্পানিটি।
অন্যান্য ব্র্যান্ডের আইসক্রিমের বাজার শেয়ার রয়েছে মাত্র দুই শতাংশ। বাসকিন রবিনস ও মুভএনপিকের মতো খ্যাতনামা বৈশ্বিক ব্র্যান্ডের আইসক্রিমও এখন বাংলাদেশে বাজারজাত হচ্ছে। এদিকে ‘লাভেলো’ নামের দেশীয় একটি ব্র্যান্ড নতুন আইসক্রিম বাজারে এনেছে তাওফিকা ফুডস অ্যান্ড অ্যাগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড। ২০১৬ সালের ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলায় এ আইসক্রিমের আনুষ্ঠানিক বিক্রি শুরু হয়। খুব শিগগির আইসক্রিমের বাজারে বড় অবস্থান করে নেবে কোম্পানিটি। ‘লাভেলো’ আইসক্রিমে বিদেশ থেকে আমদানি করা কাঁচামাল ও প্রাকৃতিক ফ্লেভারে ভিন্ন স্বাদ এবং গুণগত মান নিশ্চিত করা হয়েছে বলে জানান কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. একরামুল হক।
লংকাবাংলার গবেষণায় দেখা যায়, আইসক্রিম শিল্প মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) শূন্য দশমিক শূন্য ৬৪ শতাংশ অবদান রাখছে; যা প্রতিবেশী দেশ ভারতের দ্বিগুণ। ভারতে আইসক্রিম শিল্প খাত জিডিপিতে অবদান রাখছে শূন্য দশমিক শূন্য ৩১ শতাংশ। তবে ভিয়েতনামে এ শিল্প অনেকটা বেশি অবদান রাখছে। দেশটির জিডিপিতে আইসক্রিম শিল্প অবদান রাখছে শূন্য দশমিক শূন্য ৯৪ শতাংশ। আর সারা বিশ্বের জিডিপিতে শূন্য দশমিক শূন্য ৫৩ শতাংশ অবদান রাখছে আইসক্রিম শিল্প।
খাতসংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দেশে আইসক্রিমের বাজার সম্প্রসারণের মাধ্যমে কর্মসংস্থান ও আয় বাড়ছে। শিল্পটি সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে আমদানি করা কাঁচামালে শুল্ক কমাতে হবে। আইসক্রিম তৈরির প্রধান উপাদান দুধ, দুগ্ধজাত ক্রিম, কনডেন্সড মিল্ক, গুঁড়ো দুধ, বাটারফ্যাট প্রভৃতি কাঁচামাল; যার পুরোটাই আমদানি করতে হয় অস্ট্রেলিয়া, মালয়েশিয়া, নিউজিল্যান্ড ও ডেনমার্ক থেকে।
এছাড়া আইসক্রিমে রঙ, ফ্লেভার ও স্বাদের মতো গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গের জন্য ব্যবহৃত ফলের নির্যাস, চায়ের আস্তরণ, কোকো পাউডার, বাদাম, মিষ্টি পাউরুটি, নারকেলের নির্যাস, ফ্লেভার ও চকোলেট কোটিন আমদানি করা হচ্ছে মালয়েশিয়া, চীন, স্পেন ও ফ্রান্স থেকে। মোড়কীকরণে ব্যবহৃত বিশেষ র্যাপার আমদানি করা হয় থাইল্যান্ড ও কোরিয়া থেকে। আর কোনো আইসক্রিমের মোড়ক আনা হচ্ছে তুরস্ক থেকে। উচ্চহারে এসব পণ্য আমদানি করতে হয় বলে জানান উদ্যোক্তারা।
জানা যায়, ঐতিহ্যগতভাবে খোলা আইসক্রিম কিংবা নন-ব্র্যান্ডের বাজারও বেশ বড়। প্রতি বছর গ্রীষ্মকালে খোলা বাজারে বিক্রি হওয়া আইসক্রিমের একটা বড় অংশ উৎপাদিত হয় মৌসুমি ব্যবসায়ীদের হাতে। এর বাইরে হোটেল-মোটেলকেন্দ্রিক ব্যবসার জন্য কিছু আইসক্রিম আমদানি করা হয়।
গোল্ডেন হারভেস্ট অ্যাগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজের কোম্পানি সচিব নির্মল চন্দ্র সরদার শেয়ার বিজকে বলেন, আইসক্রিমের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। কিছু প্রতিবন্ধকতার মাঝেও কোম্পানিগুলো ভালো করছে। গোল্ডেন হারভেস্ট (ব্ল–প ব্র্যান্ড) বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরুর দুই বছরের মধ্যে আইসক্রিমের বাজারে ব্যাপক সফলতা দেখিয়েছে। সর্বশেষ হিসাববছরে মোট বিক্রির ৫৬ শতাংশই ছিল আইসক্রিমে। ফ্রোজেন ফুড ও ডেইরি পণ্যের তুলনায় বিক্রয় প্রবৃদ্ধি অনেক বেশি হওয়ায় ভবিষ্যতে আইসক্রিমে বেশি বিনিয়োগ বাড়ানো হতে পারে বলে জানান তিনি।
Add Comment