নিজস্ব প্রতিবেদক: কয়েকটি ইস্যুতে বৈঠকে মিলিত হয়েছিল আর্থিক খাতের ছয় নিয়ন্ত্রক সংস্থা। কিন্তু দুই ঘণ্টার ওই বৈঠকে কোনো কিছুতেই একমত হওয়া যায়নি। বিশেষ করে কোম্পানি আইন ও ব্যাংক কোম্পানি আইন মেনে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নির্দেশনা পরিপালন ইস্যুতে সিদ্ধান্ত নেয়া যায়নি। শেষে সিদ্ধান্ত হয়েছে নিয়মিত বৈঠক করার।
গতকাল আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয় সভায় এমন সিদ্ধান্ত হয়েছে। অনলাইনে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংক, বিএসইসি, বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ), বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) ও ক্ষুদ্র ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রক সংস্থা এমআরএ’র প্রধানরা অংশগ্রহণ করেন।
অনুষ্ঠিত বৈঠকের বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে জানায়নি কোনো পক্ষই। বৈঠকে অংশ নেয়া দায়িত্বশীল সূত্র থেকে জানা গেছে, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রক সংস্থা হচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা হচ্ছে বিএসইসি। পুঁজিবাজারে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বাইরেও বিভিন্ন খাতের কোম্পানি তালিকাভুক্ত। সেক্ষেত্রে আইন ও বিধিবিধান পালনে মতদ্বৈধতা তৈরি হয়।
এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর লভ্যাংশ ঘোষণার ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানগুলোর পুঞ্জীভূত লোকসান বিদ্যমান থাকলেও সংশ্লিষ্ট বছরের অর্জিত মুনাফা থেকে নগদ লভ্যাংশ সুপারিশ, ঘোষণা ও বিতরণ করতে পারবে বলে ঘোষণা করেছিল বিএসইসি। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলেছে, বিএসইসির এমন নির্দেশনা ‘ব্যাংক কোম্পানি আইন ১৯৯৯’-এর ২২ ধারা এবং ‘আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইন ১৯৯৩’-এর ১০ ধারার সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
জানা গেছে, বিএসইসি টেকসই পুঁজিবাজার স্থাপন ও তারল্য সরবরাহের ধারা বজায় রাখতে বেশ কিছু নির্দেশনা দিয়েছিল। এতে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করে দেশের পুঁজিবাজার। কিন্তু বিএসইসির এসব নির্দেশনার কিছু কিছু ক্ষেত্রে ব্যাংক কোম্পানি আইনের বিদ্যমান ধারার সঙ্গে সাংঘর্ষিক হওয়ায় তা পরিপালনে উভয় সংকটে পড়ে যায় তালিকাভুক্ত ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, বিএসইসির গত ২৭ জুনের গেজেটে বলা হয়, তালিকাভুক্ত কোনো সিকিউরিটিজের ইস্যুয়ারের কাছে যদি তিন বছর বা বেশি সময় ধরে কোনো ক্যাশ বা স্টক ডিভিডেন্ড বা রাইটস শেয়ারি অদাবিকৃত অবস্থায় থাকে বা বিতরণ বা বরাদ্দ প্রদান করা না হয়, অথবা কোনো আইপিওর সাবস্ক্রিপশন অর্থ ফেরত প্রদান করা না হয়, তবে তা পারপেচুয়াল ফান্ড হিসেবে পুঁজিবাজার স্ট্যাবেলাইজেশন তহবিল নামে ব্যবহৃত হবে।
গতকালের বৈঠকে এ নির্দেশনা সম্পর্কে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে বলা হয়, বিএসইসির এ নির্দেশনা ‘ব্যাংক কোম্পানি আইন ১৯৯১’-এর ৩৫ ধারার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এ কারণে এ বিধিমালা প্রয়োগ সম্ভব নয় বলে বৈঠকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে বিএসইসিকে জানিয়ে দেয়া হয়েছে।
সম্প্রতি একটি ব্যাংক কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আপত্তি উপেক্ষো করে বিএসইসির নীতিমালা মেনে লভ্যাংশ ঘোষণা করা হয়েছিল। গতকালের বৈঠকে এ বিষয়টি তুলে ধরা হয়। বৈঠকে যে কোনো নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থার নির্দেশ পরিপালনে বাধা সৃষ্টি হয়, এরূপ বিষয়গুলো ভবিষ্যতে আরও গভীরভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষাপূর্বক সিদ্ধান্ত প্রদানের জন্য এবং সংস্থাগুলোর মধ্যে তাৎক্ষণিক যোগাযোগের মাধ্যমে উদ্ভত মতদ্বৈধতা নিরসনের বিষয়ে ঐকমত্য পোষণ করা হয়েছে।
বৈঠকের বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম শেয়ার বিজকে বলেন, ‘ব্যাংক কোম্পানি আইন ও অন্যান্য বিশেষ করে উৎপাদন খাতের কোম্পানি পরিচালনায় কিছু স্বাতন্ত্র্য রয়েছে। সেক্ষেত্রে আলোচনা হতেই পারে। বাংলাদেশ ব্যাংক সব সময়ই আর্থিক খাতের উন্নয়নে ভূমিকা রেখে আসছে।’
জানা গেছে, অনলাইনে অনুষ্ঠিতব্য এ বৈঠকে পুঁজিবাজার ইস্যুতে যেকোনো সিদ্ধান্ত নিতে বিএসইসি ও অন্যান্য নিয়ন্ত্রক সংস্থার সঙ্গে আলোচনা করার প্রস্তাব দেয়া হয় বিএসইসির পক্ষ থেকে। বিষয়টিতে ঐকমত্য পোষণ করে বাংলাদেশ ব্যাংক।
এছাড়াও মূলত পিএসআই (মূল্য সংবেদনশীল তথ্য) ইস্যুতে বাংলাদেশ ব্যাংক ও বিএসইসির মধ্যে দ্বিমত তৈরি হয়েছে। পিএসআই ঘোষণা দেয়ার পরে ওই তথ্যের মধ্যে কোনো সংশোধনী আনা যাবে না। কিন্তু ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুযায়ী, এমন তথ্যর কোনো আইনি ভিত্তি নেই। এটি বিএসইসির জারি করা প্রবিধান মাত্র। এর বাইরেও বাজার উন্নয়নে বিমা ও বাংলাদেশ ব্যাংকের মধ্যে আরও সমন্বয় করার প্রসঙ্গ ওঠে।
তখন বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রক সংস্থা হচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এটি আইন দ্বারা পরিচালিত হয়। সেক্ষেত্রে অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের মতো পুঁজিবাজারের সব বিধান এ খাতে বাস্তবায়ন করতে আইনের দিকে খেয়াল রাখতে হবে।
বৈঠকের বিষয়ে বিএসইসির কমিশনার শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ শেয়ার বিজকে বলেন, ‘আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংক ও বিএসইসির সঙ্গে স্বার্থসংশ্লিষ্ট সংযোগ রয়েছে। নীতিমালা বাস্তবায়নে কিছু সমস্যা দেখা দিচ্ছে। এই ভিন্নতা থাকাটাই স্বাভাবিক। পুঁজিবাজার উন্নয়নে আমরা চাই সমন্বিতভাবে কাজ করতে। এজন্যই কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে।’