নিজস্ব প্রতিবেদক: বহুল আলোচিত করোনাভাইরাসের টিকাদান কর্মসূচির উদ্বোধনী দিনে ২৬ জনকে টিকা দেয়ার পর গতকাল দ্বিতীয় দিন ঢাকার পাঁচটি হাসপাতালে আরও ৫৪১ জনকে টিকা দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছেন আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক ও সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কেএম খালিদ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এবিএম খুরশীদ আলম জানান, গতকাল সকাল ৯টা থেকে এসব হাসপাতালের স্বাস্থ্যকর্মীদের ওপর টিকার প্রয়োগ শুরু হয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে চারটি, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চারটি, মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চারটি, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে চারটি এবং কুয়েত-বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতালে একটি বুথে টিকা দেয়া হয়।
এই পাঁচটি হাসপাতালে ৫০০ স্বাস্থ্যকর্মীকে টিকা দেয়ার লক্ষ্য ধরে সকালে কাজ শুরু হলেও শেষ পর্যন্ত টিকা নেন ৫৪১ জন। সকাল ৯টায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের বুথে প্রথম টিকা নেন উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া। পরে বেলা পৌনে ১১টায় টিকা নেন আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। তিনিই দেশের প্রথম সংসদ সদস্য এবং সরকারের প্রতিমন্ত্রী, যিনি টিকা পেলেন।
ঢাকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) টিকাদান কেন্দ্রে গতকাল সকালে করোনাভাইরাসের টিকা নিয়েছেন হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. আইনুন নাহার রাবেয়া দিবা। সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো. আবদুল মান্নান ও তথ্য সচিব খাজা মিয়া বঙ্গবন্ধু মেডিকেলে গিয়ে টিকা নেন।
হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জুলফিকার আহমেদ আমিন বলেন, বেলা ২টা পর্যন্ত টিকাদান চলে, মোট ১৯৮ জনকে টিকা দেয়া হয়।
সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কেএম খালিদও এদিন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে করোনাভাইরাসের টিকা নেন। টিকা নেয়ার পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে কেএম খালিদ বলেন, ‘ভালো লাগছে। তবে বিশেষ কিছু অনুভব করছি না। এটি অন্য সাধারণ টিকার মতোই। দায়িত্বশীলতার জায়গা থেকে বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনা নিয়ে আজ টিকা নিতে এসেছি। সাধারণ মানুষ বুঝুক, এটি একটি নিরাপদ টিকা।’
কভিড-১৯ টিকা নিয়ে গুজব ও অপপ্রচারে বিভ্রান্ত না হয়ে সাধারণ মানুষকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে টিকা নেয়ার আহ্বান জানান তিনি।
বেলা ১১টায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে যান স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘উৎসবমুখর পরিবেশে’ টিকা দেয়া হচ্ছে। ‘অনেক গুরুত্বপূর্ণ মানুষ’ টিকা নিচ্ছেন।
‘একটা আনন্দঘন পরিবেশে টিকা দেয়া কার্যক্রম শুরু হয়েছে। অনেকেই টিকা নিয়েছেন, অনেকেই এসেছেন। যে পরিবেশ, মনে হলো যে ঈদের ভাব। যেভাবে ঈদ হয়, সেরকম আনন্দমুখর পরিবেশে টিকা নেয়া হচ্ছে। সব জল্পনা-কল্পনার অবসান হয়েছে।’
এখন পর্যন্ত যারা টিকা নিয়েছেন, তারা সবাই সুস্থ আছেন, ভালো আছেন এবং কারও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কথা শোনেননি বলে জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
মুগদা মেডিকেল কলেজে চিকিৎসক, নার্সসহ ৬৫ জনকে করোনাভাইরাসের টিকা দেয়া হয়েছে বলে জানান অধ্যক্ষ মো. আহমাদুল কবীর।
তিনি বলেন, ‘হাসপাতালের স্টাফদের অনেকেই টিকা নিতে চাচ্ছেন। ভ্যাকসিনের সেরকম কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। অথচ বিভিন্ন ধরনের গুজব আছে। ধীরে ধীরে মানুষের সংশয় দূর হয়ে যাবে। মানুষও টিকা নিতে আগ্রহী হবে।’
গতকাল কুয়েত-বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতালে ৫৮ জনকে টিকা দেয়া হয়েছে বলে হাসপাতালের মুখপাত্র ডা. মোহাম্মদ শিহাব উদ্দিন জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য ছিল ৫০ জনকে দেয়ার। তবে আগ্রহীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় এ সংখ্যাও বেড়েছে। আজ আমাদের হাসপাতালের স্টাফরাই টিকা নিয়েছেন। আমি নিজেও নিয়েছি। কারও মধ্যে কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই।’
কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে এদিন ১০০ জনকে টিকা দেয়ার পরিকল্পনা ছিল। শেষ পর্যন্ত সেই ১০০ জনকেই টিকা দেয়া হয়েছে বলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।
এ হাসপাতালের একজন নার্সকে করোনাভাইরাসের টিকা দেয়ার মধ্য দিয়ে গত বুধবার বিকালে বহু প্রতীক্ষিত টিকাদান কার্যক্রম শুরু হয় বাংলাদেশে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে অনুষ্ঠানে যুক্ত হয়ে এ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন এবং প্রথম পাঁচজনকে টিকা দেয়া দেখেন। প্রথম দিন সব মিলিয়ে মোট ২৬ জনকে টিকা দেয়া হয়, যাদের মধ্যে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার প্রতিনিধিরা রয়েছেন।
সব ঠিক থাকলে আগামী ৭ ফেব্রুয়ারি সারা দেশে টিকাদান কার্যক্রম শুরু হবে বলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক জানান।