Print Date & Time : 23 June 2025 Monday 6:36 pm

দুই বছরেও শুরু হয়নি জাপানি হান্নানসহ ১৩ জনের বিচার

নিজস্ব প্রতিবেদক: দুই বছর আগে, ২০২১ সালের ২৪ মার্চ রাজধানীর দক্ষিণখানের আইনুছবাগে রড-সিমেন্ট ব্যবসায়ী আবদুর রশিদকে (৩৯) প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় করা মামলায় এক বছর আগে জাপানি হান্নানসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করে পুলিশ। তবে মামলার বিচার শুরু হয়নি এখনও।

বর্তমানে মামলাটি ঢাকার তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতে বিচারাধীন। সর্বশেষ গত ২০ ফেব্রুয়ারি অভিযোগ গঠনের দিন ধার্য ছিল। তবে সেদিন আসামিপক্ষ সময়ের আবেদন করে। আগামী ২ এপ্রিল এ অভিযোগ গঠন শুনানির জন্য পরবর্তী দিন ধার্য রয়েছে।

মামলার আসামিরা হলেনÑআমিনুল ইসলাম ওরফে জাপানি হান্নান, তার ছেলে ইকরামুল ইসলাম, হান্নানের ভাই শফিকুল ইসলাম, আল আমিন, জহিরুল ইসলাম রিপন প্রধান, খোরশেদ আলম, মোশারফ হোসেন, নুরনবী, সবুজ, হাবিবুর রহমান, স্বজল, ধলা মিয়া ও আব্দুল মালেক। এদের মধ্যে জাপানি হান্নান বাদে সবাই জামিনে রয়েছেন।

মামলার সূত্রে জানা যায়, ২০২১ সালের ২৪ মার্চ সকাল সাড়ে ৯টা থেকে দুই গ্রুপের মধ্যে কয়েক দফা উত্তেজনাকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। জাপানি হান্নান ও নিহত আব্দুর রশিদের মধ্যে বালু চুরি নিয়ে তর্ক-বিতর্কের একপর্যায়ে গেটের বাইরে এসেই হান্নান তার হাতে থাকা শটগান রশিদের মুখে ঠেকিয়ে গুলি করেন। রাজধানীর দক্ষিণখান থানার আইনুসবাগের পানির পাম্প সড়কে হান্নানের বাড়ি ‘জাপানি কটেজ’ ভবনের সামনে বেলা ১১টা ৫০ মিনিটে ওই ব্যবসায়ীকে গুলি করে হত্যা করা হয়।

নিহত রশিদ আশকোনা এলাকার ডিলার বাড়ির আবদুল মালেকের ছেলে। দক্ষিণখানের নদ্দাপাড়া এলাকায় তার রড-সিমেন্টের দোকান রয়েছে। গুলির পরই কয়েকজন তাকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক রশিদকে মৃত ঘোষণা করেন।

এ ঘটনায় ওই দিন রাতেই ভুক্তভোগীর পরিবার বাদী হয়ে জাপানি হান্নানসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে দক্ষিণখান ধানায় হত্যা মামলা দায়ের করে। তদন্ত শেষে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা, দক্ষিণখান থানার পরিদর্শক (নিরস্ত্র) আজিজুল হক মিঞা হান্নানসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করেন।

মামলার অভিযোগপত্রে বলা হয়, আমিনুল ইসলাম হান্নান ওরফে জাপানি হান্নানসহ অন্য আসামিরা সংঘবদ্ধ পেশাদার চাঁদাবাজ ও সন্ত্রাসী দলের সক্রিয় সদস্য। তারা দীর্ঘদিন ধরে সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে মারপিটসহ চাঁদা আদায় করত। সৌদিপ্রবাসী সোহেল ১৫ বছর আগে রাজধানীর দক্ষিণখানের আইনুসবাগে তিন কাঠা জমি কেনেন। এ জমির সীমানা প্রাচীর নির্মাণের জন্য ২০২১ সালের ২১ মার্চ সিমেন্ট, বালি ও ইট নিয়ে আসেন। পরবর্তী সময়ে জাপানি হান্নানের নেতৃত্বে আসামিরা সিমেন্ট, বালু ও ইট নিয়ে যায়। এরপর ২৪ মার্চ মালামাল নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে আসামিরা বলেন, তাদের এলাকায় কাজ করতে হলে অনুমতি নিতে হবে এবং তাদের লোকজনকে এক লাখ টাকা চাঁদা দিয়ে কাজ করতে হবে। তখন হত্যা মামলার বাদীসহ অন্যরা প্রতিবাদ করলে আসামি জাপানি হান্নান প্রকাশ্যে আবদুর রশিদ ও সোহেলকে লক্ষ্য করে গুলি করেন। হাসপাতালে নেয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক আব্দুর রশিদকে মৃত ঘোষণা করেন।

এতে স্থানীয়রা ক্ষুব্ধ হয়ে হান্নানের গাড়ি আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেয়। এরপর হান্নানের বাড়ি জাপানি কটেজ থেকে অস্ত্রসহ হান্নানকে গ্রেপ্তার করে দক্ষিণখান থানা পুলিশ।

ব্যবসায়ী আবদুর রশিদ রাজধানীর আশকোনার পানির পাম্পের পাশে ৪৩৪ নম্বর নিজ বাড়িতে স্ত্রী ও দুই ছেলে-মেয়ে নিয়ে থাকতেন। আগে তিনি গার্মেন্টস

অ্যাকসেসরিজের কারখানা পরিচালনা করতেন। পরে সেটি বন্ধ করে বাড়ি ও মার্কেট দেখাশোনা করছিলেন।

অভিযুক্ত হান্নানের গ্রামের বাড়ি চাঁদপুরের মতলব উপজেলার হাইমচর এলাকায়। তিনি জাপানি কটেজে স্ত্রী এবং দুই মেয়ে ও এক ছেলেকে নিয়ে বসবাস করতেন।