Print Date & Time : 21 June 2025 Saturday 2:56 am

দুই বছরের ব্যবধানে ব্যাংকঋণ লক্ষ্যমাত্রার প্রায় দ্বিগুণ

নিজস্ব প্রতিবেদক: প্রতি অর্থবছরই ঘাটতি বাজেট পূরণে সরকারের ব্যাংকঋণের ওপর নির্ভরতা বাড়ছে। গত দুই বছরের ব্যবধানে সরকারের ব্যাংকঋণ লক্ষ্যমাত্রার প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে।

২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে সরকারের এক লাখ ৩২ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকার ব্যাংকঋণ নেবে বলে লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছে সরকার। এ লক্ষ্যমাত্রা ২০২১-২২ অর্থবছরের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ। ২০২১-২২ অর্থবছরে সরকারের ব্যাংক খাত থেকে ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৭৫ হাজার ৫৩৩ কোটি টাকা। অর্থাৎ দুই বছরের ব্যবধানে সরকারের ব্যাংকঋণের লক্ষ্যমাত্রা ৫৬ হাজার ৮৬২ কোটি টাকা বেড়েছে। আর চলতি অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৬ হাজার ৯৭০ কোটি টাকা বেড়েছে। চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে এক লাখ ১৫ হাজার ৪২৫ কোটি টাকা ঋণ নেয়ার লক্ষ্য ঠিক করেছে সরকার।

সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ কমার কারণে সরকার ঘাটতি পূরণে ব্যাংকঋণ বাড়াচ্ছে। সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ আরও কমলে ঘাটতি বাজেট পূরণে ব্যাংকঋণে আরও চাপ বাড়বে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাবের আকার ধরা হয়েছে সাত লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা। বিশাল বড় এ বাজেটের ঘাটতি ধরা হচ্ছে দুই লাখ ৫৭ হাজার ৮৮৫ কোটি টাকা। আর অনুদান ছাড়া ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়াবে দুই লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা, যা মোট জিডিপির ৫ দশমিক ২ শতাংশ।

বাজেটের আয়-ব্যয়ের বিশাল ঘাটতি পূরণে প্রধান ভরসাস্থল হিসাবে ব্যাংক খাত বেছে নিয়েছে সরকার। ফলে এবারও ঘাটতি পূরণে ব্যাংক খাত থেকে এক লাখ ৩২ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা নেয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। এছাড়া সঞ্চয়পত্রে থেকে ১৮ হাজার কোটি টাকা এবং অন্যান্য খাত থেকে আরও পাঁচ হাজার কোটি টাকা নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছে। চলতি অর্থবছরে সঞ্চয়পত্রের ৩৫ হাজার কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে সংশোধিত বাজেটে ২০ হাজার কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। মূলত বিনিয়োগ কমে যাওয়ার কারণে লক্ষ্যমাত্রা কমানো হয়েছে।

আসন্ন বাজেটে মোট রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে চার লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে চার লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। করবহির্ভূত ও অন্যান্য আয়ের লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে ২০ হাজার কোটি টাকা। কর ছাড়া প্রাপ্তি ধরা হয়েছে ৫০ হাজার কোটি টাকা। আর বৈদেশিক অনুদান থেকে সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা রাখা হয়েছে তিন হাজার ৯০০ কোটি টাকা।

বাজেটে মোট ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়াচ্ছে (অনুদান ছাড়া) দুই লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা। অনুদানসহ এ ঘাটতি দাঁড়ায় দুই লাখ ৫৭ হাজার ৮৮৫ কোটি টাকা। বিশাল এ ঘাটতি পূরণে সরকার কোন খাত থেকে কত টাকা ঋণ নেবে, তারও একটি ছক তৈরি করেছে।

ছক অনুযায়ী, এর মধ্যে অভ্যন্তরীণ ঋণ নেবে এক লাখ ৫৫ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা। এছাড়া বৈদেশিক ঋণ হিসাবে নেবে এক লাখ দুই হাজার ৪৯০ কোটি টাকা, চলতি অর্থবছরের বাজেটে যা আছে ৯৫ হাজার ৪৫৮ কোটি টাকা।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্য বলছে, চলতি অর্থবছরের ১ জুলাই থেকে ১০ মে পর্যন্ত সরকার কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ৬৭ হাজার ৯০৬ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে। আগের অর্থবছরে সরকার নিয়েছিল ৩১ হাজার ৪০৩ কোটি টাকা। গত ১ জুলাই থেকে ১০ মে পর্যন্ত বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে ১০ হাজার ৬৫৪ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে সরকার। ফলে ব্যাংকিং উৎস থেকে সরকারের সামগ্রিক ঋণের পরিমাণ বেড়ে ৭৮ হাজার ৫৬০ কোটি টাকা হয়েছে।

অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছে ৬ দশমিক ৫ শতাংশ। মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ঠিক করেছে সাড়ে সাত শতাংশ।

গতকাল দুপুরে জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে বিশেষ মন্ত্রিসভার বৈঠকে এই প্রস্তাবিত বাজেট অনুমোদিত হয়। এরপর এই প্রস্তাবে সই করবেন রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন। বেলা ৩টায় জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেট সংসদে পেশ করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।