মীর কামরুজ্জামান মনি, যশোর: যশোর-খুলনা মহাসড়কের মণিহার মোড় থেকে মুড়লী পর্যন্ত প্রায় তিন কিলোমিটার সড়কের উন্নয়ন কাজের ধীরগতির কারণে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠছে এ সড়ক দিয়ে চলাচলকারী সাধারণ মানুষ। দুই বছরের অধিক সময় ধরে ১৩১ কোটি টাকা ব্যয়ে চার লেনের এ সড়ক উন্নয়নের কাজ শুরু হলেও এখন পর্যন্ত ৩০ শতাংশ কাজও শেষ করতে পারেনি সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার। যশোর শহরের সঙ্গে দেশের দক্ষিণ ও উত্তরাঞ্চলের মানুষের যাতায়াতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এ সড়কের উন্নয়নকাজের স্থবিরতার কারণে মানুষের ভোগান্তি চরমে উঠেছে। রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি করে রাখা হলেও বাকি কাজের কোনো অগ্রগতি না হওয়ার কারণে সড়কটি দীর্ঘদিন ধরে জনভোগান্তির মূল কারণ হয়ে দেখা দিয়েছে। যে কারণে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা।
জানা গেছে, মণিহার মোড় থেকে মুড়লী পর্যন্ত প্রায় তিন কিলোমিটার সড়কটি চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়লে ২০১৭ সালের শেষ দিকে বিটুমিনের ওপরে ইট বিছিয়ে তিন বছর পার করে দেয় সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ। সে সময় সড়কটি চার লেনে উন্নীত করা হবেÑএসব অজুহাত দেখিয়ে বছরের পর বছর ফেলে রাখে সওজ যশোর কর্তৃপক্ষ। পরে যশোর শহরের মুড়লী মোড় থেকে মণিহার বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত প্রায় তিন কিলোমিটর এ সড়কটিকে চার লেনে উন্নীত করতে সড়ক ও জনপথ ২০২০ সালে টেন্ডার আহ্বান করে। ১৩১ কোটি টাকা ব্যয়ে উন্নয়ন প্রকল্পের মধ্যে সড়কটি চার লেনে উন্নীতকরণ ছাড়াও দুই পাশে ড্রেন, ফুটপাত নির্মাণ, মাঝখানে কম গতিসম্পন্ন সড়ক নির্মাণসহ সড়কের দুই পাশে স্ট্রিক লাইটিংয়ের পরিকল্পনা নেয়া হয় বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
সওজ যশোর অফিস সূত্রে জানা গেছে, ২০২০ সালের অক্টোবর মাসে সড়কটি উন্নয়নের দায়িত্ব পায় খুলনার ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান মেসার্স মাহবুব ব্রাদার্স প্রাইভেট লিমিটেড। ওয়ার্ক অর্ডারে চলতি বছরে জুনের মধ্যে সড়কটির শতভাগ উন্নয়নকাজ শেষ করার নির্দেশনা দেয়া হয় সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারকে। তবে সড়কের দুই পাশের জমি অধিগ্রহণ ও অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের বিষয়ে কিছু জটিলতার কারণে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারের ওয়ার্ক অর্ডার পেতে প্রায় ৬ মাস অপেক্ষা করতে হয়। যে কারণে নির্ধারিত মেয়াদে সড়কটির উন্নয়নকাজ শেষ করতে না পারায় সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০২৩ সালের ২৩ জুন পর্যন্ত আবারও উন্নয়ন কাজের মেয়াদ বাড়ানো হয়।
এদিকে কাজের মেয়াদ বাড়ানো হলেও সড়কটি উন্নয়নে কোনো গতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। শুধু রাস্তা-খোঁড়াখুঁড়ি করে রাখা হলেও বাকি কাজের কোনো গতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। যে কারণে সড়কটি দীর্ঘদিন ধরে জনভোগান্তির মূল কারণ হয়ে দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে ওই সড়ক দিয়ে চলাচলকারী যাত্রীবাহী বাস, পণ্যবাহী ট্রাকসহ অন্যান্য যানবাহনের চালক ও যাত্রীদের ভোগান্তির যেন শেষ হচ্ছে না। খানাখন্দে ভরা সড়ক দিয়ে যানবাহন চলাচল করতে গিয়ে প্রতিনিয়ত বিকল হয়ে পড়ছে। দিনে-রাতে অধিকাংশ সময়েই সড়কের মণিহার মোড় থেকে বকচর কোল্ডস্টোরেজ পর্যন্ত তীব্র যানজট লেগেই থাকে।
গতকাল সকালে মণিহার মোড় ফলপট্টি এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ওই সড়কের প্রায় এক কিলোমিটার জুড়ে যানজট। এ সময় সাধারণ মানুষ ও গাড়ি চালকরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। শরিফুল ইসলাম নামে খুলনাগামী একটি বাসের চালক ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, প্রায় দুই বছর ধরে আমরা কষ্ট ভোগ করছি। অথচ সড়কের কাজ শেষ হচ্ছে না। মাত্র তিন কিলোমিটার সড়কের উন্নয়নকাজ শেষ করতে এতদিন সময় লাগে এমন নজির কোথাও নেই।
সাখাওয়াত হোসেন নামে অন্য এক ট্রাক ড্রাইভার বলেন, সড়কের সামান্য এ অংশটুকু মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে। প্রতিদিন ঝুঁকি নিয়ে আমাদের চলাচল করতে হয়। জরাজীর্ণ সড়কে চলাচল করতে গিয়ে গাড়ির মূল্যবান যন্ত্রাংশ নষ্ট হয়ে যায়। তিনি বলেন, গুরুত্বপূর্ণ একটি সড়কের উন্নয়নকাজের এমন ধীরগতি মেনে নেয়া যায় না।
এ বিষয়ে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান মাহবুব ব্রাদার্স প্রাইভেট লিমিটেডের স্বত্বাধিকারী শেখ মাহবুবুর রহমান বলেন, সড়ক ও জনপথ বিভাগ সড়কটির উন্নয়নকাজের ওয়ার্ক অর্ডার বুঝে দিতে একটু বিলম্ব করে। এর বড় কারণ ছিল, জমি অধিগ্রহণ ও অবৈধ স্থাপনা জটিলতা। এরপর উন্নয়নকাজের যাবতীয় উপকরণের দাম বেড়ে যাওয়ায় আমরা কিছুটা সমস্যায় পড়ি। সবমিলে কাজের গতি প্রথম দিকে কিছু সময় কম থাকলেও এখন আমরা পুরোদমে কাজ শুরু করেছি। তিনি বলেন, রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে যুদ্ধ বাধার পর বৈশিক যে অর্থনৈতিক সংকট দেখা দিয়েছে তার বড় একটি প্রভাব পড়েছে আমাদের দেশের রড-সিমেন্টসহ যাবতীয় নির্মাণ সামগ্রীর ওপর। এ কারণে আমাদের অনেক বেগ পেতে হচ্ছে। তারপরও নির্ধারিত সময়ে সড়কটির শতভাগ কাজ শেষ হবে বলে তিনি দাবি করেন।
সড়কের কাজের ধীরগতি স্বীকার করে সড়ক ও জনপথ বিভাগ যশোরের নির্বাহী প্রকৌশলী আবুল কালাম আজাদ বলেন, নানা কারণে গুরুত্বপূর্ণ এ সড়কের কাজ নির্ধারিত সময়ে শেষ করা যায়নি সত্য। তবে আমরা ইতোমধ্যে মানুষের ভোগান্তির বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে সড়কের ফোর লেনের কাজ শেষ করার জন্য সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারকে নির্দেশ দিয়েছি। আমরা আশা করছি, আগামী বছরের জুনের আগেই সড়কটির শতভাগ কাজ শেষ হবে।