নিজস্ব প্রতিবেদক:‘নো ইলেকট্রিসিটি নো পেমেন্ট’ শর্তে ৪৫৭ মেগাওয়াট উৎপাদনক্ষমতার দ্রুত ভাড়াভিত্তিক (কুইক রেন্টাল) পাঁচ বিদ্যুৎকেন্দ্রের মেয়াদ দুই বছর বাড়িয়েছে সরকার।
গতকাল বুধবার বিকালে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে ভার্চুয়ালি সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি ও অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এ কথা জানান অর্থমন্ত্রী।
কুইক রেন্টাল বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আগে বিদ্যুৎ পাই বা না পাই আমাদের মূল্য পরিশোধ করতে হতো। আমরা এখন বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারলেও সরবরাহসহ বিভিন্ন ধরনের কাজ করা দরকার। আমরা বিশ্বাস করি, আগামী এক বছরের মধ্যে তিন হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাবো। যখন আমরা নতুন করে এই বিদ্যুৎ পাবো তখন এগুলোকে (কুইক রেন্টাল) বিলুপ্ত করতে পারব। কুইক রেন্টাল আগের চেয়ে এখন ভিন্ন। কারণ এগুলোতে যতটুকু ব্যবহার করব তার মূল্যই দিতে হবে, আগের মতো নয়।
অর্থমন্ত্রী বলেন, আমরা এগুলোর (কুইক রেন্টাল) মেয়াদ বাড়িয়েছি বুঝে শুনেই, আগামী দুই বছরের জন্য। আমরা এসময়ে নিজেদের পায়ে দাঁড়াতে পারব। আমরা আজ কুইক রেন্টালের প্রস্তাবটি অনুমোদন দিয়েছি একটি শর্তে, ‘নো ইলেকট্রিসিটি, নো পেমেন্ট’।
সভাশেষে অনুমোদিত প্রস্তাবগুলোর বিস্তারিত তুলে ধরে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. জহিরুল ইসলাম জানান, যশোর, খুলনা ও নারায়ণগঞ্জের ৪৫৭ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ক্ষমতাসম্পন্ন ৫টি রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের মেয়াদ দুই বছর বাড়িয়েছে সরকার। ফলে স্পন্সর কোম্পানিগুলোকে অতিরিক্ত ৫ হাজার ২০৫ কোটি ৯০ লাখ টাকা পরিশোধ করতে হবে।
এর মধ্যে বিদ–্যৎ বিভাগের অধীন বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের যশোর জেলার নোয়াপাড়ায় ৪০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতার এইচএফও (হেভি ফুয়েল অয়েল) ভিত্তিক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের মেয়াদ দুই বছর বাড়ানোর অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এতে স্পন্সর কোম্পানি খুলনা পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেডকে ৪৫৯ কোটি ৯৪ লাখ টাকা পরিশোধ করতে হবে।
বিদ্যুৎ বিভাগের অধীন বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের খুলনা জেলার গোয়ালপাড়ায় ১১৫ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতার এইচএফও (হেভি ফুয়েল অয়েল) ভিত্তিক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের মেয়াদ দুই বছর বাড়ানোর অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এতে স্পন্সর কোম্পানি খুলনা পাওয়ার কোম্পানি ইউনিট-২ লিমিটেডকে এক হাজার ২৯৫ কোটি ৪২ লাখ টাকা পরিশোধ করতে হবে।
অতিরিক্ত সচিব বলেন, বিদ–্যৎ বিভাগের অধীন বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের নারায়ণগঞ্জ জেলার সিদ্ধিরগঞ্জে ১০০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতার এইচএফও (হেভি ফুয়েল অয়েল) ভিত্তিক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের মেয়াদ দুই বছর বাড়ানোর অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এতে স্পন্সর কোম্পানি ডাচবাংলা পাওয়ার অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটস লিমিটেডকে এক হাজার ১৪৬ কোটি ৫১ লাখ টাকা পরিশোধ করতে হবে।
নারায়ণগঞ্জ জেলার মেঘনাঘাটে ১০০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতার এইচএফও (হেভি ফুয়েল ওয়েল) ভিত্তিক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের মেয়াদ দুই বছর বাড়ানোর অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এতে স্পন্সর কোম্পানি ওরিয়ন পাওয়ার মেঘনাঘাট লিমিটেডকে এক হাজার ১৪৬ কোটি ৫১ লাখ টাকা পরিশোধ করতে হবে।
নারায়ণগঞ্জ জেলার মদনগঞ্জে ১০২ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতার এইচএফও (হেভি ফুয়েল ওয়েল) ভিত্তিক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের মেয়াদ দুই বছর বাড়ানোর অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এতে স্পন্সর কোম্পানি সামিট নারায়ণগঞ্জ পাওয়ার লিমিটেডকে এক হাজার ১৫৭ কোটি ৫২ লাখ টাকা পরিশোধ করতে হবে।
সভায় অনুমোদিত অন্য প্রস্তাবগুলো হলো:
বিদ্যুৎ বিভাগের অধীন বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের নরসিংদীর ঘোড়াশাল চতুর্থ ইউনিট রি-পাওয়ার্ড কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎকেন্দ্রের গ্যাস টারবাইন (জিটি) এবং গ্যাস টারবাইন জেনারেটর অংশের ক্রয় করা মালামাল স্থাপন, সুষ্ঠু পরিচালন ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বিশেষজ্ঞ সেবা সুইজারল্যান্ডের জেনারেল ইলেকট্রিক গ্লোবাল সার্ভিসেস জিএমবিএইচের কাছ থেকে ৯২ কোটি ৪২ লাখ ৪৫ হাজার ৮০০ টাকায় ক্রয়ের অনুমোদন দেয়া হয়েছে।
এছাড়া বিদ্যুৎ বিভাগের অধীন বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড হবিগঞ্জের বিবিয়ানা-ওওও, ৪০০ মেগাওয়াট কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎকেন্দ্রের গ্যাস টারবাইন (জিটি) এবং গ্যাস টারবাইন জেনারেটর অংশের শিডিউল মেইনটেনেন্স কাজ সম্পাদনের জন্য খুচরা যন্ত্রাংশ এবং বিশেষজ্ঞ সেবা ক্রয়ের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। জাপানের মেসার্স মারুবেনি পাওয়ার অ্যান্ড ইনফ্রাস্ট্রাকচার সিস্টেম করপোরেশনের কাছ থেকে ৪১৯ কোটি ৯৯ লাখ ২৮ হাজার ৯৩১ টাকায় এ সেবা কেনা হবে।