Print Date & Time : 19 June 2025 Thursday 11:59 am

দুই বিদেশি সিগারেট কোম্পানি জনস্বাস্থ্যকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে মরিয়া

নিজস্ব প্রতিবেদক: তামাক নিয়ন্ত্রণে সরকারের ধারাবাহিক উদ্যোগ সত্ত্বেও দুটি বিদেশি সিগারেট কোম্পানি আইন ভঙ্গে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। তাদের মূল উদ্দেশ্য দেশের তরুণ প্রজš§কে ধূমপানে আকৃষ্ট করা বলে দাবি করেছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।

জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে ‘আইন ভাঙ্গার শীর্ষে দুটি বিদেশি সিগারেট কোম্পানি’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। ওই সংবাদ সম্মেলনে বক্তরা এসব কথা বলেন।

বক্তারা বলেন, বাংলাদেশের জনগণের গড় আয়ু বৃদ্ধি পেলেও ধূমপানজনিত বিভিন্ন অসংক্রামক রোগ যেমন-ক্যানসার, স্ট্রোক, হƒদরোগ, ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা ক্রমাগত বৃদ্ধি পেয়েছে। বিদেশে চিকিৎসার জন্য যাওয়া রোগীদের সর্বোচ্চসংখ্যক ক্যানসারের রোগী (২১%) এবং দ্বিতীয় সর্বোচ্চ হƒদরোগে আক্রান্ত রোগী (১৮%)। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের এক গবেষণায় দেখা গেছে, এসব বিদেশগামী রোগীর বার্ষিক ব্যয় হয় প্রায় ৩৫০ কোটি ডলার। এ বিশাল চিকিৎসা ব্যয়ের দায়ভার তামাক কোম্পানি কোনোভাবেই এড়াতে পারে না। তারা নিজেদের মুনাফা বৃদ্ধির জন্য ই-সিগারেট/ভেপিংয়ের বাজার সৃষ্টির অপচেষ্টা করছে। রাজধানী ছাড়িয়ে এখন মফস্বল এলাকার তরুণদের হাতেও পৌঁছে গেছে এই মরণ নেশা।

তারা আরও বলেন, তামাক কোম্পানি কোনোভাবেই রাষ্ট্রীয় আইনের ঊর্ধ্বে নয়। অথচ গত ২০ বছরে বারবার আইন লঙ্ঘন করা সত্ত্বেও তামাক কোম্পানিগুলোকে কোনো প্রকার শাস্তির আওতায় আনা সম্ভব হয়নি। বরং কোম্পানিগুলো সরকারের তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনের উদ্যোগটি বিফল ও বিলম্ব করতে নানা মিথ্যাচার এবং বিভ্রান্তি ছড়িয়ে চলেছে। জনস্বাস্থ্যকে প্রাধান্য দিয়ে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন শক্তিশালীকরণ ও তা বাস্তবায়নের মাধ্যমে তামাক কোম্পানিগুলোকে কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে ‘তামাকমুক্ত বাংলাদেশ’ অর্জন ত্বরান্বিত হবে। এতে আমাদের সন্তান ও প্রিয়জনদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত হবে।

উল্লেখ্য, দেশের ৪৫টি জেলায় পরিচালিত জরিপে ৯৪৪টি স্থানের সর্বমোট ৮ হাজার ১৯টি বিক্রয়কেন্দ্র থেকে তামাকজাত দ্রব্যের বিজ্ঞাপন ও প্রচারণা কার্যক্রমের তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। ওই জরিপে প্রায় সাড়ে ৩২ হাজার তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন লঙ্ঘনের চিত্র চিহ্নিত হয়েছে। তথ্য সংগ্রহ করার ক্ষেত্রে মোট ৪টি সিগারেট কোম্পানির বিজ্ঞাপন পাওয়া গেছে। কিন্তু সকল স্থান থেকে প্রাপ্ত তথ্যে আইন লঙ্ঘনে দুটি বিদেশি সিগারেট কোম্পানি ব্রিটিশ

আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশ (৯৬%) এবং জাপান টোব্যাকো ইন্টারন্যাশনালের (৮৭%) সর্বাধিক সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে। এছাড়া আবুল খায়ের টোব্যাকো এবং আকিজ টোব্যাকো কোম্পানির বিজ্ঞাপনের তথ্য পাওয়া গেছে যথাক্রমে ২২% ও ৪৬% স্থানে। তামাকজাত দ্রব্য বিক্রয়কেন্দ্রগুলোতে প্রদেয় বিজ্ঞাপনের মধ্যে প্রায় ৮০ শতাংশজুড়ে আছে মূল্য তালিকা সংবলিত স্টিকার এবং খালি সিগারেট প্যাকেট দিয়ে তৈরি করা ডামি। আইন বাস্তবায়নকারী সংস্থার সহযোগিতায় আইন লঙ্ঘনকারী দোকানদারদের বিরুদ্ধে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে জরিমানা আদায় করা হলেও কোম্পানিগুলো তাদের আর্থিক প্রণোদনা দিচ্ছে।

অত্যন্ত উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ করা যাচ্ছে, দেশের চট্টগ্রাম, সিলেট ও খুলনা বিভাগস্থ ৮টি জেলা শহরে বিদেশি দুটি তামাক কোম্পানির সরাসরি মদদ ও অর্থায়নে বিভিন্ন রেসস্টুরেন্টে ধূমপানের স্থান গড়ে উঠেছে। এছাড়া, আইনে নিষিদ্ধ থাকলেও দেশের প্রায় ৮০ শতাংশ স্থানেই ১৮ বছরের কম বয়সী শিশু-কিশোরদের অবাধে ফেরি করে তামাকজাত দ্রব্য বিক্রি করতে দেখা গেছে। এমনকি ক্রেতা-বিক্রেতাদের  প্ররোচিত করার জন্য কোম্পানির পক্ষ থেকে নানা ধরনের উপহার প্রদানেরও প্রমাণ মিলেছে। উল্লেখ্য, স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের তামাক নিয়ন্ত্রণ নির্দেশিকা অনুযায়ী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ১০০ মিটারের মধ্যে তামাকজাত দ্রব্য বিক্রি নিষিদ্ধ। কিন্তু জরিপে তৎসংলগ্ন স্থানে তামাকজাত দ্রব্যের অবাধ বিক্রয় ও বিজ্ঞাপন প্রচার লক্ষ করা গেছে।

সংবাদ সম্মেলন থেকে ৯টি সুপারিশ করা হয়: আইন লঙ্ঘনকারী তামাক কোম্পানির বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা দায়ের করার জন্য কর্তৃত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের উদ্যোগ গ্রহণ নিশ্চিত করা;  আইন অমান্যকারী দোকানগুলোর লাইসেন্স বাতিল করা। নিয়মিত মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে আইন লঙ্ঘনের দায়ে তামাক কোম্পানি/প্রতিনিধিকে আর্থিক জরিমানার পাশাপাশি দণ্ড প্রদান; দ্রুততম সময়ে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনী চূড়ান্ত করা; তামাক কোম্পানির প্রভাব থেকে নীতি সুরক্ষায় এফসিটিসির অনুচ্ছেদ ৫.৩ অনুসারে ‘কোড অব কন্ডাক্ট’ গ্রহণ’; জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি’ দ্রুত চূড়ান্ত এবং দেশব্যাপী যথাযথ কার্যক্রম গ্রহণ করা; টাস্কফোর্স কমিটিগুলো সক্রিয় করা; কমিটির ত্রৈমাসিক সভা নিয়মিতকরণ; সভার সিদ্ধান্তগুলো যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করা। তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন মনিটরিং কার্যক্রমের সঙ্গে বেসরকারি সংস্থাগুলোকে সম্পৃক্ত করা। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুসারে একটি শক্তিশালী তামাক কর নীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা।