Print Date & Time : 26 June 2025 Thursday 4:07 am

দুই বিমা জরিপ প্রতিষ্ঠানের অগ্নিবিমা লাইসেন্স স্থগিত

মাসুম বিল্লাহ ও পলাশ শরিফ: বিমাগ্রহীতার ক্ষতি কমিয়ে প্রতিবেদন দেওয়ার অভিযোগে বেসরকারি দুটি জরিপকারী প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স স্থগিত করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)। বেসরকারি জুট টেক্সটাইল মিলসের অগ্নিকাণ্ডের ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণে অনিয়ম ও ব্যর্থতার জেরে বাল্টিক কন্ট্রোল (বিডি) লিমিটেড ও দি ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সপেকশনের অগ্নিবিমা জরিপ লাইসেন্স তিন মাসের জন্য স্থগিত করা হয়েছে।
প্রাপ্ত তথ্যমতে, ২০১৬ সালের মে মাসে বেসরকারি কন্টিনেন্টাল ইন্স্যুরেন্সের বিমা গ্রাহক জুট টেক্সটাইল মিলসে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এতে বড় অঙ্কের ক্ষতির মুখে পড়ে কোম্পানিটি। এরপর বিমা কোম্পানির কাছে প্রায় ২৯ কোটি ১৩ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দাবি করে জুট টেক্সটাইল। দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ওই অগ্নিকাণ্ডের ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণের জন্য বেসরকারি দুই বিমা জরিপকারী প্রতিষ্ঠান বাল্টিক কন্ট্রোল (বিডি) লিমিটেড ও দি ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সপেকশনকে দায়িত্ব দেয় কন্টিনেন্টাল ইন্স্যুরেন্স। জরিপ শেষে ওই দুই প্রতিষ্ঠান তাদের প্রতিবেদনে জানায়, অগ্নিকাণ্ডে প্রায় ১৩ কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে। বিমা দাবির তুলনায় ক্ষয়ক্ষতি অর্ধেকেরও বেশি কমিয়ে দেওয়া প্রতিবেদনের নিরপেক্ষতা ও গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে।
দায়িত্বশীল একাধিক সূত্র জানিয়েছে, বাল্টিক কন্ট্রোল (বিডি) লিমিটেড ও দি ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সপেকশনের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের সত্যতা মিলেছে। এ বিষয়ে কয়েক দফায় শুনানি হয়েছে। লাইসেন্স কেন বাতিল করা হবে না এ বিষয়ে প্রতিষ্ঠান দুটির দেওয়া জবাব হাতে পাওয়ার পর শুনানি শেষে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
আলাপকালে বাল্টিক কন্ট্রোল (বিডি) লিমিটেডের জরিপের দায়িত্ব পালনকারী কর্মকর্তা খন্দকার শাহাদাত হোসেন শেয়ার বিজকে বলেন, ‘এগুলো পুরোনো ইস্যু। আমাদের একটি লাইসেন্স স্থগিত করা হয়েছে। তবে আমরা লিখিতভাবে আইডিআরএকে এ বিষয়ে জবাব দিয়েছি। এসব বিষয়ে মিডিয়াকে কিছু বলার নেই। এখন যা করার নিয়ন্ত্রক সংস্থাই করবে।’
প্রাপ্ত তথ্যমতে, অগ্নিকাণ্ডের ক্ষতি কমিয়ে দেখানোর পর বিমা কোম্পানি ও জরিপকারকের সঙ্গে ক্ষতিগ্রস্ত বিমা গ্রাহক জুট টেক্সটাইল মিলস কর্তৃপক্ষ কয়েক দফায় যোগাযোগ করে। কিন্তু কোনো সাড়া পায়নি। পরে এ বিষয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআরএ’র কাছে অভিযোগ করে ওই বিমা গ্রাহক কোম্পানি। নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআরএ’র নির্দেশনা মেনে ২০১৭ সালের নভেম্বরে ইঞ্জিনিয়ার্স সার্ভে অ্যাসোসিয়েটস ও মিডল্যান্ড সার্ভে অ্যান্ড ইন্সপেকশন নামের অন্য দুই প্রতিষ্ঠানকে ক্ষয়ক্ষতি পুনর্নির্ধারণের দায়িত্ব দেওয়া হয়। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে দ্বিতীয় দফায় দেওয়া প্রতিবেদনে অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ২৪ কোটি ৪৬ লাখ টাকা বলে উল্লেখ করা হয়। প্রথম জরিপে জুট টেক্সটাইল মিলসের ক্ষতিগ্রস্ত যন্ত্রপাতি মেরামত-সংক্রান্ত ৯৬টি বিল ভাউচার আমলে নেওয়া হয়নি। এতে প্রায় সাড়ে ১১ কোটি টাকার কম উত্থাপিত হয়েছে। দ্বিতীয় দফায় ওই ভাউচারগুলো আমলে নিয়ে যাচাই-বাছাই শেষে প্রতিবেদন দিয়েছে দ্বিতীয় দফায় জরিপকারী দুই প্রতিষ্ঠান, এতে ক্ষতির অঙ্ক বেড়েছে।
আইডিআরএ সূত্র জানিয়েছে, জরিপকারী প্রতিষ্ঠান বাল্টিক কন্ট্রোল (বিডি) লিমিটেড ও দি ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সপেকশন সরেজমিন পরিদর্শন না করে আইডিআরএ’র নিবন্ধনবিহীন প্রতিনিধির দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদন দিয়েছে। এতে প্রতিষ্ঠান দুটির পেশাদারিত্ব প্রশ্নের মুখে পড়েছে। সেই সঙ্গে প্রতিষ্ঠান দুটি অগ্নিকাণ্ডের প্রকৃত ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণেও ব্যর্থ হয়েছে। তাই ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণে অবমূল্যায়নের দায় জরিপকারীদের এড়ানোর সুযোগ নেই। তাই বিদ্যমান আইন লঙ্ঘনের দায়ে কোম্পানি দুটির লাইসেন্স বাতিল হতে পারে। এজন্য এরই মধ্যে বাল্টিক কন্ট্রোল (বিডি) লিমিটেড ও দি ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সপেকশনকে কারণ দর্শানোর নোটিস দেওয়া হয়েছে। আর প্রাথমিক শাস্তিমূলক পদক্ষেপের অংশ হিসেবে ওই দুই প্রতিষ্ঠানের অগ্নিবিমা জরিপ কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, বেসরকারি সাধারণ বিমা কোম্পানি কন্টিনেন্টাল ইন্স্যুরেন্সে প্রায় ৮০ কোটি ১৪ লাখ টাকা বিমা অঙ্কের বিমা করেছিল জুট টেক্সটাইল মিলস। ২০১৬ সালের এপ্রিলে অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতির মুখে পড়ে কোম্পানিটি। কিন্তু রহস্যজনক কারণে প্রথম জরিপে ওই অগ্নিকাণ্ডের ক্ষতির প্রকৃত চিত্র উঠে আসেনি। পরে দ্বিতীয় দফায় নিয়োগ জরিপ করিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা। দ্বিতীয় জরিপের প্রতিবেদন নিয়ে শুনানি শেষে চলতি বছরের ২০ মার্চ কন্টিনেন্টাল ইন্স্যুরেন্সকে প্রায় ২৪ কোটি ৪৬ লাখ টাকা বিমা দাবি পরিশোধের নির্দেশ দিয়েছে আইডিআরএ। ওই নির্দেশনা পুনর্বিবেচনার জন্য গত ১৯ এপ্রিল নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাছে আবেদন করে কোম্পানিটি। গত ১৬ মে ওই আবেদনের শুনানি শেষে নাকচ করা হয়েছে। এরপর গত ৬ জুন দাবি পরিশোধের জন্য কন্টিনেন্টাল ইন্স্যুরেন্সকে সাত দিন সময় দেয় আইডিআরএ। সর্বশেষ বিষয়টি উচ্চ আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে বলে জানা গেছে।