Print Date & Time : 25 June 2025 Wednesday 12:31 pm

দুই মন্ত্রীর বক্তব্যের প্রতিবাদে ফের রাস্তায় শিক্ষার্থীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক: সরকারের সঙ্গে সমঝোতা ভেঙে অন্য শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বিভক্তি ঘুচিয়ে আন্দোলনে ফেরার ঘোষণা দিয়েছেন সরকারি চাকরির কোটা সংস্কারের দাবিতে গড়ে ওঠা ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের নেতারা। প্রধানমন্ত্রীর সুনির্দিষ্ট ঘোষণা না আসা পর্যন্ত কোটা সংস্কারের আন্দোলন চালিয়ে যাবেন তারা। গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে এক সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেওয়া হয়।
সংবাদ সম্মেলনে তারা বলেন, ‘ছাত্রসমাজের দাবি এবং কোটার বিষয়ে কৃষি ও অর্থমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রেক্ষাপটে তারা আন্দোলন স্থগিতের সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছেন। সেইসঙ্গে দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত ক্লাসপরীক্ষা বর্জন, সড়ক অবরোধসহ সব ধরনের বিক্ষোভ চালিয়ে যাওয়ার কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ।
পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল হক নূর বলেন, গত সোমবার সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরসহ সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের অনুরোধে আমরা কর্মসূচি ৭ মে পর্যন্ত স্থগিত করার ঘোষণা করেছিলাম। কিন্তু কাল (সোমবার) জাতীয় সংসদে দাঁড়িয়ে কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী ৮০ শতাংশ আন্দোলনকারী ছাত্রছাত্রীদের রাজাকারের বাচ্চা বলে গালাগাল করেন। এরপর আজ (গতকাল) বিকালে আমাদের অর্থমন্ত্রী বলেছেন, বাজেটের আগে পর্যন্ত কোটা সংস্কার সম্ভব নয়। এ দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া আমরা মানি না।
সংসদ অধিবেশনে কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী বলেছিলেন, ‘পরিষ্কার বলতে চাই, মুক্তিযুদ্ধ চলছে, চলবে। রাজাকারের বাচ্চাদের আমরা দেখে নেব। তবে ছাত্রদের প্রতি আমাদের কোনো রাগ নেই। মতলববাজ, জামায়াত-শিবির, তাদের এজেন্টদের বিরুদ্ধে সামান্য শৈথিল্য দেখানো হবে না।’
পরিষদের আরেক যুগ্ম আহ্বায়ক রাশেদ খান বলেন, সচিবালয়ে নেওয়া সিদ্ধান্ত সারা দেশের ছাত্রসমাজ মেনে নেয়নি। আজ থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য বাংলাদেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ক্লাসপরীক্ষা বন্ধ থাকবে। অনির্দিষ্টকালের জন্য সারা বাংলাদেশের রাস্তা অবরোধ করা হবে। প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে সুস্পষ্ট কোনো নির্দেশনা না আসা পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন তারা।
গত কয়েকদিনের আন্দোলনের মধ্যে গ্রেফতার শিক্ষার্থীদের মুক্তি, রোববারের সংঘর্ষে আহতদের চিকিৎসার ব্যবস্থা এবং কোটার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর সুনির্দিষ্ট ঘোষণার দাবি জানিয়ে রাশেদ বলেন, প্রধানমন্ত্রীকে আমরা বলতে চাই, আপনার সন্তানদের এ বিপদের মুখে রাস্তায় ফেলে দেবেন না, দয়া করে সুস্পষ্ট ঘোষণা দিন।
শিক্ষার্থীরা এ সময় ‘চাইলাম অধিকার হয়ে গেলাম রাজাকার’, ‘বঙ্গবন্ধুর বাংলায় বৈষম্যের ঠাঁই নাই’, ‘কোটা সংস্কার চাই’সহ বিভিন্ন সেøাগান দিতে থাকেন।
এদিকে সকালে পরিষদের পক্ষ থেকে একই জায়গায় এক সংবাদ সম্মেলনে কৃষিমন্ত্রীর বক্তব্য প্রত্যাহারের জন্য বিকাল ৫টা পর্যন্ত সময় বেঁধে দেওয়া হয়। একই সঙ্গে সচিবালয়ের সমঝোতার সিদ্ধান্ত চলমান অন্দোলনকারীদের মেনে নেওয়ারও অনুরোধ করা হয়। বিকালের সংবাদ সম্মেলনের পর সহস্রাধিক শিক্ষার্থী মিছিল নিয়ে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক ঘুরে রাজু ভাস্কর্যে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মিলিত হন।
সরকারি চাকরির কোটা পদ্ধতি সংস্কারের দাবিতে ‘বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ’-এর ব্যানারে আন্দোলনরতদের সঙ্গে গত রোববার সারা রাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে পুলিশ ও ছাত্রলীগের সংঘর্ষ হয়। এরপর গত সোমবার বিকালে সচিবালয়ে সরকারের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের প্রতিনিধিদলের বৈঠকে ৭ মের মধ্যে বিদ্যমান কোটা পদ্ধতি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সিদ্ধান্ত আসে। বৈঠকে অংশ নেওয়া ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ ৭ মে পর্যন্ত আন্দোলন স্থগিতের ঘোষণা দিলেও বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অবস্থানে থাকা আন্দোলনকারীরা তা প্রত্যাখ্যান করে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন।
এদিকে সচিবালয়ের সিদ্ধান্ত না মেনে আন্দোলনকারীদের একপক্ষ সকাল থেকে ক্যাম্পাসে আন্দোলন চালিয়ে আসছেন। একই দাবিতে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ করে আন্দোলন চালিয়ে যান। বর্তমানে সরকারি চাকরিতে ৫৬ শতাংশ কোটা রয়েছে। আন্দোলনকারী চাকরিপ্রার্থী শিক্ষার্থীদের দাবিÑকোটা সংস্কার করে ১০ শতাংশে নামিয়ে আনতে হবে।