Print Date & Time : 23 June 2025 Monday 4:03 pm

দুই মন্ত্রীর মন্তব্য: চাল নিয়ে চলছে চালবাজি

নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশে এখনও পর্যাপ্ত চাল মজুত রয়েছে। এরপরও চালের কৃত্রিম সংকটের মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে আতঙ্কিত ও ভীত করে বিভ্রাট সৃষ্টির চেষ্টা করা হচ্ছে। কারণ এখন চালবাজি ও রাজনীতি হচ্ছে এ চাল নিয়েই।

গতকাল চালের দাম বেড়ে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে সচিবালয়ে তাৎক্ষণিক সংবাদ সম্মেলনে এমন মন্তব্য করেন খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম। অন্যদিকে একই দিনে সচিবালয়ে নিজ কার্যালয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, বেসরকারি পর্যায়ে প্রতিদিন ট্রাকে করে চাল আসছে। কিন্তু একটি কুচক্রি মহল ভারত সরকারের স্বাক্ষরবিহীন মিথ্যা চিঠির মাধ্যমে বাংলাদেশে চাল রফতানি বন্ধের অপপ্রচার চালাচ্ছে। অসাধু ব্যবসায়ীরাই এ অপপ্রচারে জড়িত হতে পারে।

গতকাল বাণিজ্যমন্ত্রী দাবি করেন, দেশে চালের কোনো সংকট নেই। প্রয়োজনীয় চাল মজুত রয়েছে। বাজারে পর্যাপ্ত চালের সরবরাহ রয়েছে। হাওরে পানি প্রবেশ এবং বন্যার কারণে যে ক্ষতি হয়েছে, আমদানির মাধ্যমে তা পূরণ করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, কিছু পত্রপত্রিকা কুচক্রি মহলের তথ্যের ওপর ভিত্তি করে এ সংবাদ প্রচার করছে, যা ঠিক নয়। ভারত সরকার চাল রফতানি বন্ধ করেনি বা এ ধরনের কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেনি। প্রতিদিন ভারত থেকে বাংলাদেশে বিপুল পরিমাণ চাল আমদানি হচ্ছে। কিছু অসাধু ব্যবসায়ী চালের বাজার অস্থিতিশীল করার উদ্দেশ্যে মিথ্যা অপপ্রচার চালাচ্ছে। এ ধরনের স্বাক্ষরবিহীন মিথ্যা চিঠিতে বিভ্রান্ত হওয়ার কারণ নেই দেশবাসীর।

এদিকে বন্যা ও রোগবালাইয়ের কারণে ফসলহানির পরও এক কোটি ৯২ লাখ টন ধান ঘরে উঠেছিল জানিয়ে খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, চাল নিয়ে রাজনীতি চলছে, চাল নিয়ে দেশকে একটা বিভ্রাটের মধ্যে ফেলার চেষ্টা করা হচ্ছে। উদ্দেশ্যমূলকভাবে চাল নিয়ে চালবাজি হচ্ছে, চাল নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ও ভীতি সৃষ্টির চেষ্টা করা হচ্ছে।

একশ্রেণির ব্যবসায়ী ও মিলমালিকরা চাল নিয়ে এ চালবাজি করছেন অভিযোগ করে তিনি বলেন, আমরা চালবাজি ও ষড়যন্ত্রের মধ্যে আছি। কারণ বাংলাদেশেই এক কোটি টন চাল আছে, তারপরেও এ অবস্থা। আমি মজুতদার, আড়তদার, মিলমালিকসহ সবার প্রতি আহ্বান জানাবÑএখনই ভালো হয়ে যান, সময় আছে।

তিনি অভিযোগ করে বলেন, আপনারা যেভাবে (চালের) দাম বাড়াচ্ছেন, যেভাবে সিন্ডিকেট করে দেশে চালবাজি শুরু করেছেন, চাল নিয়ে রাজনীতি শুরু করেছেন, একটা বিভ্রাট সৃষ্টির চেষ্টা করছেন তা কোনো অবস্থাতেই বরদাস্ত করা হবে না। এখনই শেষ সুযোগ আপনাদের ভালো হয়ে যান।

হাওরে আগাম বন্যায় ফসলহানির পর দুই দফা বন্যায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ফসল নষ্ট হয়েছে। বেশ কয়েক মাস আগে বেড়ে যাওয়া চালের দাম গত কয়েক দিনে আরও বেড়েছে। চাল আমদানি শুল্ক ২৮ শতাংশ কমিয়ে দুই শতাংশে নামানোর পরও চালের বাজারে অস্থিরতা কাটছে না। এরপর থাইল্যান্ড, কম্বোডিয়া ও মিয়ানমার থেকে চাল আমদানির চুক্তি করেছে সরকার। তবে এখনও সেসব চালের আমদানির সুফল মেলেনি। চালের বাজার অস্থির হয়ে উঠছে।

এবার এক কোটি ৯১ লাখ টন বোরো উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল জানিয়ে খাদ্যমন্ত্রী কামরুল বলেন, বন্যা ও রোগবালাইয়ে দেশে ২০ লাখ টন ফসল নষ্ট হয়েছে। ফলে এক কোটি ৭০ লাখ টন বোরো ধান পাওয়ার কথা। এসব ধান আমাদের ঘরেই আছে, আরও ২২ লাখ টন আউশ ধান পেয়েছি। কাজেই সব ধান তো চলে যায়নি, চাল তো আছে। হয় মিলমালিক, আড়তদার, না হয় ছোট-বড় ব্যবসায়ীÑকারও না কারও বাড়িতে এসব চাল আছে। এরপরও চালের দাম বেড়ে যাচ্ছে।

বেসরকারিভাবে ১৭ লাখ টন চাল আমদানির জন্য এলসি খোলা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, সরকার ৩৪ টাকা দরে সাড়ে ১২ লাখ টন বোরো চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করলেও মাত্র আড়াই লাখ টন সংগ্রহ হওয়ায় চাল আমদানি করতে হচ্ছে।

ভিয়েতনাম থেকে আড়াই লাখ টন চাল আমদানি হচ্ছে জানিয়ে মন্ত্রী কামরুল বলেন, ইতোমধ্যে ভিয়েতনামের এক লাখ ৫৪ হাজার টন চাল গোডাউনে ঢুকেছে। বাকি চাল খালাসের অপেক্ষায় সমুদ্রে আছে। এছাড়া কম্বোডিয়া থেকে আড়াই লাখ টন চাল আমদানিতে চুক্তি হয়েছে। এলসি হয়েছে, তিন মাসের মধ্যে এসব চাল দেশে আসবে। সঙ্গে মিয়ানমানের একটি প্রতিনিধিদল রোববার বাংলাদেশে আসছে। আশা করছি তাদের সঙ্গে দুই লাখ টন চাল আমদানির চুক্তি হবে।

ভারত বাংলাদেশে চাল রফতানি তিন মাস বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে ছড়িয়ে পড়া খবরের সত্যতা এখনও পাওয়া যায়নি বলে জানান খাদ্যমন্ত্রীও। সঙ্গে আগামী রোববার থেকে সব বিভাগীয় ও জেলা শহরে ওএমএস (খোলা বাজারে বিক্রি) চালু হবে জানিয়ে খাদ্যমন্ত্রী বলেন, কত দিন পর্যন্ত চলবে, তা বলতে পারছি না, যত দিন পর্যন্ত প্রয়োজন তত দিন বহাল থাকবে। আগের মতোই ওএমএসে ১৫ টাকা কেজিতে চাল এবং ১৭ টাকা কেজিতে আটা বিতরণ করা হবে বলে জানান তিনি।