নিজস্ব প্রতিবেদক: এনবিআরের ভ্যাট গোয়েন্দার একটি বিশেষ দল গত সোমবার কুমিল্লা শহরের দুটি মার্কেট জরিপ করে। সেখানে দেখা যায়, মার্কেট দুটিতে কোনো প্রতিষ্ঠান নিবন্ধন গ্রহণ করেনি; তারা ভ্যাটও দেয় না। মার্কেট দুটি হলো কুমিল্লা শহরের কেন্দ্রস্থল টাউন হলের প্লানেট এসআর মার্কেট ও কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট গেটের সামনে ময়নামতি সুপার মার্কেট। কুমিল্লায় ভ্যাট গোয়েন্দার উপপরিচালক মুনাওয়ার মুরসালীন ও সহকারী পরিচালক আলমগীর হুসেনের নেতৃত্বে গোয়েন্দা অনুসন্ধানে এ চিত্র উঠে আসে।
ভ্যাট গোয়েন্দার মহাপরিচালক ড. মইনুল খান এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, কুমিল্লার প্লানেট এসআর মার্কেটে অভিযান চালিয়ে দেখা যায়, মার্কেটটিতে মোট ৮০টি দোকান রয়েছে, যার মধ্যে ভ্যাট গোয়েন্দার পরিদর্শনকালে ৫৬টি দোকান খোলা পাওয়া যায়। এগুলোর কোনোরূপ ভ্যাট নিবন্ধনের তথ্য পাওয়া যায়নি।
জানা যায়, ২০২০ সালের ১৬ ডিসেম্বর মার্কেটটি চালু হলেও এখনও মার্কেটের কোনো প্রতিষ্ঠানই ভ্যাট নিবন্ধন নেয়নি। ময়নামতি সুপার মার্কেটে অভিযান চালিয়ে দেখা যায়, মার্কেটটিতে ১২০টি দোকান রয়েছে, যার মধ্যে ভ্যাট গোয়েন্দার পরিদর্শনকালীন ৬৪ দোকান খোলা পাওয়া যায়। জরিপকালে চালু থাকা কোনো প্রতিষ্ঠানেরই ভ্যাট নিবন্ধনের তথ্য পাওয়া যায়নি। জানা যায়, ঢাকা-চট্টগ্রাম হাইওয়ের ওপর অবস্থিত বহু বছর ধরে ওই মার্কেটের কোনো প্রতিষ্ঠানেরই ভ্যাট নিবন্ধন নেই।
অন্যদিকে, একই দিনে কুমিল্লার কান্দিরপাড়ে অবস্থিত মূল ‘মাতৃভাণ্ডার’-এ অভিযান চালায় ভ্যাট গোয়েন্দার দলটি। প্রতিষ্ঠানে মিষ্টি বিক্রির সময়ে ক্রেতাদের উপচেপড়া ভিড় লক্ষ্য করা যায়। অথচ মাতৃভাণ্ডারটিতে গড়ে ২০-২২টি চালান কাটে।
ভ্যাট গোয়েন্দা কর্তৃক দুজন কর্মকর্তা বিক্রয় পর্যবেক্ষণের জন্য বেলা ১১টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত অবস্থান করেন। ওইদিন ভ্যাট গোয়েন্দার উপস্থিতিতে প্রতিষ্ঠানটি মোট ৩১৮টি ভ্যাট কাটতে বাধ্য হয়, যেখানে বিক্রয়মূল্য পাওয়া যায় প্রায় ২ লাখ ৯৬ হাজার ৫০ টাকা। এতে প্রতীয়মান হয়, বিক্রয়ের সময়ে ভ্যাট চালান না দিয়ে মিষ্টির এ দোকানটি ব্যাপক ভ্যাট ফাঁকির সঙ্গে জড়িত হয়েছে।
উল্লেখ্য, জব্দকৃত কাগজে দেখা যায় ১ থেকে ১৬ জানুয়ারি পর্যন্ত মাতৃভাণ্ডার মিষ্টান্ন ভাণ্ডারটি মাত্র ৩৫৪টি ভ্যাট চালান কাটা হয়। এর বিপরীতে বিক্রয়মূল্য দেখানো হয়েছে প্রায় ৭ লাখ টাকা। অথচ ভ্যাট গোয়েন্দার একদিনের পর্যবেক্ষণে ৩১৮টি চালানে প্রায় একই পরিমাণ (৩ লাখ) টাকার বিক্রয়ের হিসাব পাওয়া গেছে।
এছাড়া ভ্যাট গোয়েন্দার দলটি কুমিল্লার বনফুল অ্যান্ড কোং এবং কিষোয়ান স্ন্যাকসের কুমিল্লা শাখায় অভিযান পরিচালনা করে। প্রতিষ্ঠান দুটিতে ভ্যাট ফাঁকির তথ্য পাওয়ায় মূসক-সংক্রান্ত তথ্যাদি জব্দ করে আনে। এসব দলিলাদি যাচাই-বাছাই শেষে শিগগিরই ভ্যাট আইনে মামলা দায়ের করা হবে।
ভ্যাট গোয়েন্দার তথ্য মতে, কুমিল্লা শহরের অনেক মার্কেট রয়েছে, যেগুলোর প্রতিষ্ঠান এখনও নিবন্ধন গ্রহণ করেনি।
এ জরিপের প্রধান উদ্দেশ্য, এনবিআরের নিকট মাঠ পর্যায়ের বাস্তব চিত্র তুলে ধরা এবং দেশের সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী ও ক্রেতাদের কর প্রদানে উদ্বুদ্ধ করা। একইসঙ্গে যথানিয়মে ও সঠিক পরিমাণ ভ্যাট আহরণ বৃদ্ধি করা।
ইতোমধ্যে মার্কেট দুটোতে অবস্থিত প্রতিষ্ঠানসমূহ মূসক নিবন্ধন গ্রহণ না করায় তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগভাবে কার্যক্রম গ্রহণের জন্য কুমিল্লা ভ্যাট কমিশনারেটকে অনুরোধ করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, এর আগে এনবিআরের নির্দেশে ২০২১ সালের ২৫-৩১ মে ভ্যাট গোয়েন্দা অধিদপ্তরের ৪টি জরিপ দল মাঠপর্যায়ে রাজধানী ও রাজধানীর বাইরের মার্কেটগুলোতে জরিপ করে। জরিপ পরবর্তীতে সারাদেশে ভ্যাট নিবন্ধন গ্রহণে সাড়া পাওয়া যায়। কিন্তু দীর্ঘ সময় অতিক্রান্ত হলেও কুমিল্লার এ দুটি মার্কেটের কোনো প্রতিষ্ঠানেরই ভ্যাট নিবন্ধন পাওয়া যায়নি, যা হতাশাজনক বলে মনে করে ভ্যাট গোয়েন্দা কর্তৃপক্ষ।