সাইদ সবুজ, চট্টগ্রাম: দেশের বৃহৎ শুল্কস্টেশন চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস। জাতীয় বাজেটের প্রায় ৩৩ শতাংশ অর্থের জোগানদাতা কাস্টম হাউসটি গত অর্থবছর ভালো প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছিল। তার ধারাবাহিকতা ধরে রেখে চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসও প্রবৃদ্ধির হার ঊর্ধ্বমুখী রয়েছে। আগস্ট শেষে প্রতিষ্ঠানটি রাজস্ব আয় করেছে সাত হাজার ৮০৪ কোটি ৪৭ লাখ টাকা, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১৯ শতাংশ বেশি।
চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের দেয়া তথ্যে দেখা যায়, চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসকে ১২ মাসে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে ৬৪ হাজার ৭৫ কোটি টাকা, যা গত অর্থবছর থেকে ২২৮ কোটি টাকা কম। যদিও সবসময় চলতি অর্থবছরের তুলনায় পরবর্তী অর্থবছরের জন্য বেশি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। তবে এবার কভিডসহ বিভিন্ন কারণে লক্ষ্যমাত্রা কম রেখেছে এনবিআর। ফলে ২০২১-২২ অর্থবছরের শুরু থেকে রাজস্ব আয়ের প্রবৃদ্ধির হার ধরে রেখেছে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস। অর্থবছরের প্রথম মাস অর্থাৎ জুলাইয়ে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল তিন হাজার ৮৭০ কোটি টাকা। বিপরীতে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস আয় করেছে তিন হাজার ৩৯৪ কোটি টাকা। যদিও এ মাসে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় আদায়ের পরিমাণ ১২ দশমিক ৩০ শতাংশ ঋণাত্মক। কিন্তু গত বছরের একই সময়ের তুলনায় তিন দশমিক শূন্য পাঁচ শতাংশ বেশি প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস। আর গত অর্থবছরের একই সময়ে তার আগের অর্থবছরের তুলনায় ১১ দশমিক ৫৭ শতাংশ ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি ছিল। ওই অর্থবছরের জুলাইয়ে প্রতিষ্ঠানটি রাজস্ব আয় করেছিল তিন হাজার ২৯৩ কোটি ৫৩ লাখ টাকা। যদিও ২০১৯-২০ অর্থবছরে একই সময় আদায় হয়েছিল তিন হাজার ৭২৪ কোটি টাকা।
তারপর আগস্টের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল চার হাজার ৮৮৮ কোটি টাকা। বিপরীতে চট্টগ্রাম কাস্টমস আয় করেছে চার হাজার ৪১০ কোটি ৪২ লাখ টাকা; যা লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ৯ দশমিক ৭৭ শতাংশ ঋণাত্মক। তবে ২০২০-২১ অর্থবছরের তুলনায় ৩৫ দশমিক ০৯ শতাংশ বেশি। এদিকে জুলাই ও আগস্ট শেষে ক্রমবৃদ্ধি প্রবৃদ্ধি হিসাব করলে দেখা যায়, অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে রাজস্ব আদায়ে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে ১৯ শতাংশ। আগের অর্থবছরে একই সময় প্রবৃদ্ধির হার ছিল এক দশমিক ৪০ শতাংশ ঋণাত্মক। তবে চলতি অর্থবছরের আদায়ের লক্ষ্যমাত্রার সঙ্গে তুলনা করলে ১০ দশমিক ৮৯ শতাংশ পিছিয়ে আছে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস।
গত অর্থবছর চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল ৬৪ হাজার ৩০৩ কোটি ৬০ লাখ টাকা। এর বিপরীতে আদায় হয়েছিল ৫১ হাজার ৫৭৬ কোটি ৯৬ লাখ টাকা; লক্ষ্যমাত্রা থেকে ১৯ দশমিক ৭৯ শতাংশ পিছিয়ে ছিল। কিন্তু আগের বছরের তুলনায় প্রবৃদ্ধির হার ছিল ২৩ দশমিক ২৩ শতাংশ বেশি, যা তার আগের এক দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ প্রবৃদ্ধি ছিল। একইসঙ্গে ১৯৯৫-৯৬ অর্থবছর থেকে ২০২০-২১ অর্থবছর পর্যন্ত অর্থাৎ ২৬ বছরের মধ্যে সেটিই দ্বিতীয় সর্বোচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জনের বছর ছিল। তার আগে শুধু ২০০৭-০৮ অর্থবছরেই গত অর্থবছরের তালনায় বেশি প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছিল চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস। ২০০৭-০৮ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৩০ দশমিক ৪৬ শতাংশ এবং আদায়ের পরিমাণ ছিল ১৩ হাজার ৯৪২ কোটি টাকা; যার লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৩ হাজার ৪০০ কোটি টাকা।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের মুখপাত্র উপ-কমিশনার একেএম সুলতান মাহমুদ শেয়ার বিজকে বলেন, কমিশনার স্যারের বেশকিছু সিদ্ধান্তের কারণে অতিমারির মধ্যেও চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস দারুণ সাফল্য অর্জন করেছে। গত অর্থবছরে ৫১ হাজার কোটি টাকার বেশি আয় করেছে, যা এর আগে কোনো অর্থবছরেই হয়নি। চলতি অর্থবছরেও প্রবৃদ্ধির হার ভালো আছে। আশা করছি কমিশনার স্যারের নির্দেশনা মতো কাজ করে অর্থবছরের শেষ অবধি আমরা প্রবৃদ্ধির হার ধরে রাখতে পারব।
