নিজস্ব প্রতিবেদক: টানা দুই মাস পর আবারও প্রবাসী আয় ১০০ কোটি ডলার ছাড়িয়েছে। গত জানুয়ারিতে প্রবাসীরা দেশে রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন ১০০ কোটি ৯৪ লাখ ডলার। এর আগে গত নভেম্বর ও ডিসেম্বরে এ আয় ১০০ কোটি ডলারের নিচে নেমে গিয়েছিল। ওই দুই মাসে যথাক্রমে ৯৫ কোটি ১০ লাখ ডলার ও ৯৫ কোটি ৮০ লাখ ডলার রেমিট্যান্স এসেছে।
এদিকে চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে (জুলাই-জানুয়ারি) দেশে মোট রেমিট্যান্স এসেছে ৭১৭ কোটি ৬২ লাখ ডলার, যা গেল অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ১৪ কোটি ৬১ লাখ ডলার বা ২০ দশমিক ৩৬ শতাংশ কম। ২০১৫-১৬ অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে দেশে রেমিট্যান্স এসেছিল ৮৬৩ কোটি ৭৮ লাখ ডলার।
গত কয়েক মাস ধরেই রেমিট্যান্স আয়ে মন্দাবস্থা অব্যাহত রয়েছে। চলতি অর্থবছরের সব মাসেই আগের অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে কম এসেছে রেমিট্যান্স। প্রবাসী আয় কমার কারণ হিসেবে জনশক্তি রফতানিতে ভাটা, অবৈধ পথে প্রবাসী আয় পাঠানোর প্রবণতা বৃদ্ধি, মার্কিন ডলারের বিপরীতে বিভিন্ন মুদ্রার দরপতন, আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের মূল্য হ্রাস ও মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে চলা রাজনৈতিক ও সামাজিক অস্থিরতাকে দায়ী করছেন সংশ্লিষ্টরা। এদিকে রেমিট্যান্স কমার কারণ অনুসন্ধানে সম্প্রতি একটি কমিটি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর আগে ব্যাংকিং চ্যানেলে প্রবাসী আয় বৃদ্ধি ও হুন্ডি তৎপরতা বন্ধে বিভিন্ন দেশে অবস্থিত বাংলাদেশি দূতাবাসে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের জানুয়ারি মাসে প্রবাসীরা ১০০ কোটি ৯৪ লাখ ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন, যা গেলো অর্থবছরের একই মাসের চেয়ে প্রায় ১৪ কোটি ডলার কম। গেলো অর্থবছরের জানুয়ারি মাসে রেমিট্যান্স আসে ১১৫ কোটি ডলার। এছাড়া চলতি অর্থবছরের অক্টোবর মাসে রেমিট্যান্স আসে ১০১ কোটি ডলার, যা আগের বছরের অক্টোবর মাসে ছিল ১০৯ কোটি ৯১ লাখ ডলার। সেপ্টেম্বর মাসে রেমিট্যান্স আসে ১০৫ কোটি ৫৬ লাখ ডলার, যা আগের বছরের সেপ্টেম্বর মাসে ছিল ১৩৪ কোটি ৯০ লাখ ডলার। আগস্ট মাসে রেমিট্যান্স আসে ১১৮ কোটি ৩৬ লাখ ডলার, যা গেল অর্থবছরের আগস্ট মাসে ছিল ১১৯ কোটি ৫০ লাখ ডলার। রেমিট্যান্স প্রবাহের গতি জুলাইয়ে ছিল আরও করুণ। চলতি অর্থবছরের জুলাইয়ে রেমিট্যান্স আসে মাত্র ১০০ কোটি ৫৫ লাখ ডলার। অথচ গেলো অর্থবছরের একই মাসে ১৩৮ কোটি ৯৫ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স আসে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, জানুয়ারি মাসে বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে রেমিট্যান্স এসেছে ৭০ কোটি ৩০ লাখ ডলার। এছাড়া রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ২৮ কোটি ৪৫ লাখ, বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এক কোটি এক লাখ এবং বিদেশি মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে এক কোটি ১৫ লাখ ডলার। তবে একক ব্যাংক হিসেবে জানুয়ারিতেও সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স এসেছে বেসরকারি খাতের ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের মাধ্যমে। এ ব্যাংকটির মাধ্যমে ২১ কোটি ১৮ লাখ ডলার রেমিট্যান্স এসেছে। রেমিট্যান্স আহরণে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেড। এ ব্যাংকটির মাধ্যমে রেমিট্যান্স এসেছে ১১ কোটি মার্কিন ডলার। এছাড়া সোনালী ব্যাংকের মাধ্যমে আট কোটি ৩২ লাখ ডলার, জনতা ব্যাংকের মাধ্যমে সাত কোটি ৮৬ লাখ ডলার, ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের মাধ্যমে চার কোটি ১৯ লাখ ডলার, ন্যাশনাল ব্যাংকের মাধ্যমে তিন কোটি ৮১ লাখ ডলার, পূবালী ব্যাংকের মাধ্যমে তিন কোটি ৫৫ লাখ ডলার ও উত্তরা ব্যাংকের মাধ্যমে তিন কোটি ৪৪ লাখ ডলার রেমিট্যান্স এসেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যানে আরও দেখা যায়, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে এর আগের অর্থবছরের তুলনায় প্রায় আড়াই শতাংশ কম প্রবাসী আয় আসে। গেলো অর্থবছরের পুরো সময়ে রেমিট্যান্স আসে এক হাজার ৪৯৩ কোটি ডলার। আগের অর্থবছরে যা ছিল এক হাজার ৫৩১ কোটি ডলার।
Add Comment