Print Date & Time : 19 June 2025 Thursday 10:06 pm

দুই রাজস্ব-চার সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা করোনা আক্রান্ত

রহমত রহমান: সাধারণ ছুটির মধ্যে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে দুইজন রাজস্ব কর্মকর্তা (আরও) ও চারজন সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তাসহ (এআরও) ছয়জন কর্মকর্তা করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে দুইজন রাজস্ব কর্মকর্তা ও দুইজন সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা, আইসিডি কমলাপুরে একজন সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা ও পশ্চিম ভ্যাট কমিশনারেটে একজন সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা।

## একজন রাজস্ব কর্মকর্তার অবস্থা ক্রিটিক্যাল

## কাস্টম হাউসে আক্রান্ত বেশি, শীর্ষে চট্টগ্রাম কাস্টম

## কাস্টম হাউস-কমিশনারেটে গণহারে নমুনা পরীক্ষা ব্যবস্থা করার অনুরোধ

ছয়জনের মধ্যে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের এক রাজস্ব কর্মকর্তা হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। তার অবস্থা কিছুটা ‘ক্রিটিক্যাল’। অপর এক রাজস্ব কর্মকর্তা, চার সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা বাড়ি ও বাসায় চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তাদের সংস্পর্শে আসা আরো কয়েকজনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে, যার এখনো ফলাফল আসেনি। আরো কয়েকজন উপসর্গ নিয়ে হোম কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন। সংশ্লিষ্ট কাস্টম হাউস ও কমিশনারেট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

সূত্রমতে, দেশে সাধারণ ছুটির প্রথম থেকেই খোলা রয়েছে দেশের সব কাস্টমস হাউস ও শুল্ক স্টেশন। আমদানি-রপ্তানি সচল রাখা, নিত্যপ্রয়োজনীয় ও চিকিৎসা সরঞ্জাম খালাস এবং রাজস্ব আহরণের স্বার্থেই প্রথমে সীমিত পরিসরে খোলা রাখা হয়। কিন্তু পরবর্তীতে স্বাভাবিক কার‌্যক্রম চালাতে নির্দেশ দেয় এনবিআর। কাস্টমস কর্মকর্তারা সুরক্ষা সামগ্রী ছাড়াই ঝুঁকি নিয়েই কাজ করে যাচ্ছেন। পরে হাউস থেকে কিছু সুরক্ষা সামগ্রী দেওয়া হয়েছে। এছাড়া খোলা রয়েছে ভ্যাট কমিশনারেট। কমিশনারেটে কর্মকর্তারা সুরক্ষা সামগ্রী ছাড়াই ভ্যাট সেবা দেওয়া ও রাজস্ব আহরণ করছেন।

ভ্যাট পশ্চিম কমিশনার ড. মইনুল খান শেয়ার বিজকে বলেন, আক্রান্ত ওই সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা এ কমিশনারেটের আওতাধীন সাভার সার্কেলে কর্মরত। করোনা পজেটিভ হওয়ার পর বর্তমানে সে বাসায় হোম আইসোলেশনে রয়েছেন। টেলিমেডিসিনের মাধ্যমে তাকে চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া ভ্যাট পশ্চিম কমিশনারেট থেকে তার সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখা ও সহযোগিতা করা হচ্ছে।

কমিশনার বলেন, রিটার্ন জমা নিতে এনবিআরের নির্দেশনা অনুযায়ী ১৫ মে শুক্রবার ছুটির দিনেও অফিস খোলা ছিল। ১৪ মে বৃহস্পতিবার ও ১৫ মে শুক্রবার এ কর্মকর্তা অফিসে কাজ করেছেন। শুক্রবার রাতে তার জ্বর আসলে তাকে করোনা পরীক্ষা করতে বলা হয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষার পর রোববার (১৭ মে) তার করোনা পজেটিভ আসে। এর পরপরই তাকে হোম আইসোলেশনে পাঠানো হয়।

তিনি বলেন, তার সংস্পর্শে আসায় একজন রাজস্ব কর্মকর্তা (আরও) ও একজন সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তাকে (এআরও) করোনা পরীক্ষার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তারা বুধবার (২০ মে) নমুনা দিয়েছেন, এখনো ফলাফল আসেনি। আক্রান্ত ওই কর্মকর্তার সংস্পর্শে আসায় তার পরিবারের সবাইকে নমুনা পরীক্ষা করতে বলা হয়েছে। তবে তাদের করোনা উপসর্গ দেখা দিলে পরীক্ষা করতে বলেছেন চিকিৎসক।

আরো পড়ুন-করোনা ‘যোদ্ধা’ কাস্টমস [1]

আরো পড়ুন-সুরক্ষা ছাড়াই শুল্কায়ন, ঝুঁকিতে কাস্টমস কর্মকর্তারা [2]

চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের কয়েকজন কর্মকর্তা জানান, দুইজন রাজস্ব কর্মকর্তা (আরও) ও দুইজন সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা (এআরও) নমুনা পজেটিভ এসেছে। চারজন এখনো অসুস্থ। একজন আরও, দুইজন এআরও বাড়িতে ও আরও হাসপাতালে থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন। তাদের সংস্পর্শে আসা অনেকের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এখনো ফলাফল আসেনি। আক্রান্ত একজন আরও চকাএভ এর সভাপতি।

চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস কমিশনার মো. ফখরুল আলম শেয়ার বিজকে বলেন, দুইজন সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা (এআরও) ও দুইজন রাজস্ব কর্মকর্তা (আরও) করোনা পজেটিভ এসেছে। এআরও দুইজনকে বাড়িতে আইসোলেশনে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাদের বর্তমানে জ্বর, গলা ব্যথা ও কাশি রয়েছে। বাড়িতে থেকে তারা চিকিৎসা নিচ্ছেন।

তিনি বলেন, অসুস্থ হওয়ার পর এ হাউসের একজন রাজস্ব কর্মকর্তা প্রথমে ঢাকার ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। তার আগে থেকেই ব্লাড পেশার, এজমাসহ বেশ কিছু সমস্যা ছিল। পরে ওই হাসপাতালে নমুনা পরীক্ষায় তার করোনা পজেটিভ আসে। ইউনাইটেডে করোনা চিকিৎসা করা হয় না। পরে তাকে মুগদা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তার অবস্থা একটু ক্রিটিক্যাল।

তবে তার এজমাসহ আরো কিছু সমস্যা থাকায় আনোয়ার খান মর্ডান হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আরেকজন আরও এর করোনা আজ সনাক্ত হয়। চারজন কর্মকর্তা কর্তব্যরত অবস্থায় আক্রান্ত হয়েছেন। আমরা সব সময় তাদের খোঁজ রাখছি। তাদের সংস্পর্শে যারা এসেছেন তাদের ১৪ দিন হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকতে বলা হয়েছে।

কমিশনার বলেন, হাউসে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে কাজ করতে ভবনের প্রতিটি রুমে সব সেকশন আলাদা করে বিনস্ত করে দেওয়া হয়েছে, যাতে আক্রান্ত কম হয়। এরপরও তিনতলা এ ভবনে প্রতিদিন দুই থেকে আড়াই হাজার মানুষের জনসমাগম হয়। এছাড়া জেটিসহ সব জায়গায় প্রচুর জনসমাগম হয়। এখানে আক্রান্ত হওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয়, আক্রান্ত হলে প্রকাশ পেতেও সময় লাগে।

তিনি আরো বলেন, হাউস ৩৬৫ দিন খোলা। সাধারণ ছুটির মধ্যে বন্ধ হয়নি। এরপরও প্রতিদিন দুইটি গেইটে প্রবেশের সময় সবার ‘তাপমাত্রা’ মাপা হয়। এছাড়া প্রতিদিন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আলাদা করে ‘তাপমাত্রা’ মাপা হয়। যাদের তাপমাত্রা বেশি বা জ্বর থাকে তাদের আসতে নিষেধ করা হয়। এ দুযোর্গের মধেও আমরা সর্বাত্মকভাবে সেবা দিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছি।

অপরদিকে, আইসিডি কমলাপুর কাস্টম হাউসের একজন সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা নমুনা পরীক্ষায় করোনা পজেটিভ এসেছে। আইসিডি কমলাপুর কাস্টম হাউসের তার কয়েকজন সহকর্মী শেয়ার বিজকে বলেন, আক্রান্ত ওই এআরও হাউসে নিয়মিত ডিউটি করেছেন। সে সময় কিছুটা অসুস্থ ছিল। ৮ মে নিজ বাড়িতে গেলে অসুস্থ হয়। পরে নমুনা পরীক্ষায় করোনা পজেটিভ হয়। সেই থেকে তিনি দিনাজপুরে নিজ বাড়িতে আইসোলেশনে থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন। তবে আইসিডি কাস্টম হাউস থেকে তার চিকিৎসা বিষয়ে খোঁজ খবর রাখা হচ্ছে। এর আগে এ কাস্টম হাউসের একজন এআরও করোনা উপসর্গ নিয়ে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হয়। তবে নমুনা পরীক্ষায় তার নেগেটিভ আসে। বর্তমানে তিনি বাসায় চিকিৎসা নিচ্ছেন।

কয়েকজন কাস্টমস কর্মকর্তা বলেন, কর্মকর্তারা অনেকটা সুরক্ষা সামগ্রী ছাড়াই পণ্যের শুল্কায়ন ও পণ্য খালাসের মতো ঝুঁকির কাজ করছেন। কাস্টমস হাউসে সব সময় জনসমাগম থাকে। বিশেষ করে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস, ঢাকা কাস্টম হাউস ও আইসিডি কমলাপুরে জনসমাগম সবচেয়ে বেশি। ফলে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি। এর মধ্যে ১০ শতাংশ কর্মকর্তাও সুরক্ষা সামগ্রী পায়নি।

তারা বলেন, যারা আক্রান্ত তাদের সংস্পর্শে সেবা প্রার্থী ছাড়াও অনেক কর্মকর্তা এসেছেন। তাদের আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছেন। কাস্টম হাউস বা ভ্যাট কমিশনারেট তো বন্ধ রাখা যাবে না। এখনি পদক্ষেপ না নিলে বিপুল পরিমাণ কর্মকর্তা আক্রান্ত হবেন। সেজন্য প্রতিটি কাস্টম হাউস ও ভ্যাট কমিশনারেটে কর্মকর্তাদের গণহারে করানো পরীক্ষার ব্যবস্থা করা করতে এনবিআরের প্রতি অনুরোধ জানান। একই সাথে রাজস্ব আহরণের স্বার্থে পর্যাপ্ত সুরক্ষা সামগ্রী ও প্রণোদনা দেওয়ার দাবি জানান তারা।

বিসিএস (কাস্টমস অ্যান্ড ভ্যাট) অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব সৈয়দ মুসফিকুর রহমান শেয়ার বিজকে বলেন, এখন পর‌্যন্ত ছয়জন আক্রান্ত হয়েছেন। আমরা সার্বক্ষনিক যোগাযোগ রাখছি। দেশের এ দুযোর্গে ফ্রন্টলাইনে থেকে কাস্টমস কর্মকর্তারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছেন। কর্মকর্তাদের জন্য পর্যাপ্ত সুরক্ষা সামগ্রী দেওয়ার সুপারিশ করেন তিনি।

###