Print Date & Time : 18 June 2025 Wednesday 2:45 am

দুই শতাংশের বেশি কমবে না শেয়ারদর

নিজস্ব প্রতিবেদক: গত মাসের ২৪ তারিখে ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার পর থেকে পড়ছে বাংলাদেশের পুঁজিবাজার। বিনিয়োগকারীদের পুঁজির নিরাপত্তা দিতে নানারকম সিদ্ধান্ত নেয় নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। এর ধারাবাহিকতায় টানা দরপতন রোধে স্থিতিশীলতা তহবিল থেকে বড় বিনিয়োগের পাশাপাশি শেয়ারদর কমার সর্বোচ্চ সীমা কমিয়ে এনেছে বিএসইসি।

নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এখন থেকে কোনো কোম্পানির শেয়ারদর সর্বোচ্চ দুই শতাংশ কমতে পারবে, এতদিন যা ছিল ১০ শতাংশ। তবে শেয়ারের দর বৃদ্ধির সর্বোচ্চ সীমা আগের মতোই ১০ শতাংশ রাখা হয়েছে। গতকাল বিএসইসির কমিশনার শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান। সংবাদ সম্মেলনে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম উপস্থিত ছিলেন।

সংবাদ সম্মেলনের আগে পুঁজিবাজারে ধসের পরিস্থিতিতে তারল্য প্রবাহ নিশ্চিত করতে পুঁজিবাজার স্থিতিশীলতা তহবিল থেকে আরও ১০০ কোটি টাকা দ্রুত বিনিয়োগের নির্দেশ দেয় বিএসইসি। বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করে বলেন, সেকেন্ডারি মার্কেটে তারল্য প্রবাহ নিশ্চিত করতেই এই অর্থ দ্রুত বিনিয়োগ করা হবে।

নতুন সার্কিট ব্রেকার বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নেয়ার কারণ ব্যাখ্যা করে সংবাদ সম্মেলনে কমিশনার শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘বর্তমান পরিস্থিতিতে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। আগের মতো এটি দীর্ঘমেয়াদি হবে না। পরিস্থিতির উন্নতি হলে দুই শতাংশের সীমা তুলে নেয়া হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষা দেয়া আমাদের মৌলিক ও প্রধান কাজ। এজন্য আমরা নানাবিধ চেষ্টা করে থাকি।’

গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণের দিন থেকে পুঁজিবাজারে ধস নামে। আট কর্মদিবসে সোমবার পর্যন্ত সূচক পড়ে ৩৮২ পয়েন্ট বা ৫ দশমিক ৫৯ শতাংশ। মঙ্গলবার লেনদেনের এক ঘণ্টা যেতে না যেতেই সূচক পড়ে যায় আরও ১৩৭ পয়েন্ট। তখন বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আতঙ্ক জেঁকে বসে।

এরপর বিএসইসি প্রথমে পুঁজিবাজার স্থিতিশীলতা তহবিল থেকে ১০০ কোটি টাকা বিনিয়োগের নির্দেশ দেয় প্রথমে। কিছুক্ষণ পর আসে দ্বিতীয় আদেশটি। ফলে দিন শেষে সূচকের উত্থানের মধ্য দিয়ে লেনদেন শেষ হয় ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে। এই আদেশের কারণে কোনো কোম্পানির শেয়ারদর যদি এক দিনে ১০ শতাংশ বা আশপাশে বেড়ে দর বৃদ্ধির সর্বোচ্চ সীমা ছুঁয়ে লেনদেন হয়, তাহলে সেই পরিমাণ দর কমতে কমপক্ষে পাঁচ কর্মদিবস লাগবে।

পুঁজিবাজারে কোনো কোম্পানির শেয়ারের দর কেনা বা বিক্রির আদেশের ক্ষেত্রে সর্বনিন্ম ১০ পয়সার হিসাব করা হয়। এর ফলে নতুন সিদ্ধান্তে পাঁচ টাকার নিচে থাকা কোম্পানির শেয়ারদর কমতে পারবে না। পাঁচ টাকা থেকে ৯ টাকা ৯০ পয়সা দরের শেয়ারের দর এক দিনে সর্বোচ্চ ১০ পয়সার বেশি কমতে পারবে না। ১০ টাকা থেকে ১৪ টাকা ৯০ পয়সা যেগুলোর দর, সেগুলো কমতে পারবে সর্বোচ্চ ২০ পয়সা। ১৫ টাকা থেকে ১৯ টাকা ৯০ পয়সার শেয়ারের দর কমতে পারবে সর্বোচ্চ ৩০ পয়সা। ২০ টাকা থেকে ২৪ টাকা ৯০ পয়সা পর্যন্ত শেয়ারের দর কমতে পারবে সর্বোচ্চ ৪০ পয়সা।

বিএসইসি কমিশনার শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ জানান, সেকেন্ডারি মার্কেটে তারল্য প্রবাহ নিশ্চিত করতে স্থিতিশীলতা তহবিল থেকে ১০০ কোটি টাকা বিনিয়োগের যে নির্দেশ দেয়া হয়, সেটির বাস্তবায়ন, অর্থাৎ শেয়ার কেনা শুরু হয়ে গেছে।

সংবাদ সম্মেলনে পুঁজিবাজারে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর বিশেষ তহবিল থেকে বিনিয়োগে অনীহা নিয়েও কথা বলেন বিএসইসি কমিশনার। রাষ্ট্রায়ত্ত বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) ভূমিকাও যথাযথ নয় বলে মনে করেন তিনি।

শামসুদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘ব্যাংকগুলোর ২০০ কোটি টাকার বিশেষ তহবিল ব্যবহারে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ইতিবাচক। কিন্তু এখনও অনেক ব্যাংক ওই ফান্ড গঠন করেনি। এ ছাড়া কেউ কেউ ফান্ড গঠন করলেও তা ব্যবহার করেনি।’

২০২০ সালে দেশে কভিড সংক্রমণের পর পুঁজিবাজারে ধস নামলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে বিশেষ তহবিল গঠনের অনুমতি দেয়। একেকটা ব্যাংককে ২০০ কোটি টাকা করে বিনিয়োগের সুযোগ দেয়া হয়। ব্যাংকগুলোর পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের যে সীমা, সেটি থেকে এ তহবিলের চাঁদা বাইরে থাকবে বলে জানানো হয়।

এ হিসাবে ৬২টি ব্যাংকের ১২ হাজার ৪০০ কোটি টাকা বিনিয়োগের ?সুযোগ তৈরি হয়। কিন্তু এর অর্ধেক তহবিলও গঠিত হয়নি। কারণ সব ব্যাংক তহবিলে টাকা দেয়নি। আবার দিলেও ২০০ কোটি টাকা দেয়নি। যে তহবিল গঠন হয়েছে, তারও একটি বড় অংশ অলস বসে আছে।

আইসিবি নিয়ে বিএসইসি কমিশনার বলেন, ‘শেয়ারবাজারে আইসিবির ভূমিকাটা যেমন হওয়া দরকার ছিল, তা কোম্পানিটির বর্তমান ম্যানেজমেন্ট উপলব্ধি করছে। আশা করি এ বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানটি আগামীতে শেয়ারবাজারে সঠিক ভূমিকা রাখতে পারবে।’

স্থিতিশীল পুঁজিবাজারের জন্য ‘মার্কেট মেকার’ গুরুত্বপূর্ণ বলেও উল্লেখ করে শামসুদ্দিন আহমেদ আক্ষেপ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে মার্কেট মেকারের আইন আছে, কিন্তু মার্কেট মেকার নেই। যদি দেশে বড় বড় মার্কেট মেকার থাকত, তাহলে বর্তমানের এ পরিস্থিতি কাটানো যেত। এটি পুঁজিবাজারের জন্য খুবই কার্যকর, যা বিশ্বের সব দেশেই আছে।’

বর্তমানে বি ও এ ক্যাটেগরির শেয়ার কিনলে তৃতীয় কর্মদিবসে বিক্রি করা যায়। জেড ক্যাটাগরির শেয়ার বেচতে হলে সময় লাগে আরও এক দিন বেশি। একে টি প্লাস থ্রি ও টি প্লাস ফোর বলা হয়। বিএসইসি প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে, টি প্লাস ওয়ান অর্থাৎ এক দিনেই শেয়ার বিক্রির উপযোগী হবে। তবে এটি কবে থেকে কার্যকর হবে, সেটি জানানো হয়নি।

শামসুদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘শেয়ারবাজারে লেনদেনের গতি বাড়াতে এবং বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে কমিশন টি প্লাস ওয়ান সেটেলমেন্ট চালুর উদ্যোগ নিয়েছে। তবে চালুর আগে শেয়ারবাজারে টি প্লাস ওয়ান সেটেলমেন্টের প্রকৃত অর্থে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে কি না, তা যাচাই করা হবে। কোনো ইতিবাচক ফলাফল ছাড়া চালু করতে চাই না।’