নিজস্ব প্রতিবেদক: নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসির নিরীক্ষা দাবির ১২ হাজার ৫৭৯ কোটি ৯৫ লাখ টাকার মধ্যে গ্রামীণফোন ন্যূনতম কত টাকা দিতে পারবে তা জানাতে দুই সপ্তাহ সময় দিয়েছেন সর্বোচ্চ আদালত। গ্রামীণফোনের আবেদনে গতকাল প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন চার বিচারকের আপিল বেঞ্চ ১৪ নভেম্বর পরবর্তী আদেশের জন্য তারিখ রেখেছেন।
গ্রামীণফোনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী এএম আমিন উদ্দিন ও শেখ ফজলে নূর তাপস; সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী মেহেদী হাসান চৌধুরী, শরীফ ভূঁইয়া ও আইনজীবী তানিম হোসেইন শাওন। বিটিআরসির পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী মাহবুবে আলম ও খন্দকার রেজা-ই-রাকিব।
পরে গ্রামীণফোনের আইনজীবী মেহেদী সাংবাদিকদের বলেন, ‘১৯৯৬ সাল থেকে মোট ১২ হাজার ৫৭৯ কোটি ৯৫ লাখ টাকা ধরা হয়েছে, যেটি আইনত বৈধ নয়। তাছাড়া ১২ হাজার ৫৭৯ কোটি ৯৫ লাখ টাকার মধ্যে দুই হাজার ১৯০ কোটি টাকা দেওয়া হয়ে গেছে। সুতরাং সেটেল্ড একটা বিষয় নিয়ে ১৯ বছর পরে অভিযোগ তোলা কতটা আইনসংগত সেটা নিয়ে প্রশ্ন আছে। কারণ এই টাকার মধ্যে ২৩ শতাংশ হচ্ছে মূল টাকা। বাকি ৭৭ শতাংশ হচ্ছে সুদ। যেহেতু এরই মধ্যে দুই হাজার ১৯০ কোটি টাকা দেওয়া আছে। তাই বাকি টাকার বিষয়ে গ্রামীণফোনের সঙ্গে আমরা আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেব। তাই দুই সপ্তাহ সময় নিয়েছি।’
বৈধ দাবির সব টাকা দিতে গ্রামীণফোন প্রস্তুত বলে জানিয়ে মেহেদী বলেন, দেশে গ্রামীণফোনের সাড়ে সাত কোটি গ্রাহক এবং ৩০ হাজার শেয়ারহোল্ডার রয়েছেন। মনে রাখতে হবে, গ্রামীণফোনের যদি কিছু হয়, তাহলে শেয়ার মার্কেটে আরেকটা ধস নামবে।
এদিকে গ্রামীণফোনের (জিপি) কাছে বিটিআরসি দাবি করা সাড়ে ১২ হাজার কোটি টাকা আদায়ের মামলায় প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন বলেছেন, ‘ব্যবসা করবেন, টাকা দেবেন না, তা হয় না।’
শুনানিকালে জিপির আইনজীবীদের উদ্দেশে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন বলেন, ‘এদেশে ব্যবসা করাটা সহজ। যখন টাকা-পয়সার ব্যাপার আসে, তখন আদালতে এসে একটা আবেদন করে স্থগিতাদেশ নিয়ে টাকা দেওয়া হয় না। গড়িমসি করা হয়। মামলাগুলো করাই হয়, যাতে টাকা দিতে না হয়। এসব মামলার কারণে অর্থঋণ আদালতগুলোতে প্রায় এক লাখ কোটি টাকা আটকে আছে। ব্যবসা করবেন, টাকা দেবেন না, তা হয় না।’
বিটিআরসির আরেক আইনজীবী রেজা সাংবাদিকদের বলেন, ‘প্রধান বিচারপতি একটা কথা বারবার বলেছেন যে, বাংলাদেশে একটা প্র্যাকটিস চালু হয়ে গেছে যে, যখনই কারও কোনো টাকা দেওয়ার ইস্যু আসে, তখনই তারা আদালতে একটি মামলা করে দেন। এর ফলে একটা দীর্ঘসূত্রতা হয়, সরকার বিভিন্ন রেভিনিউ থেকে বঞ্চিত হয়। দীর্ঘসূত্রিতা এড়ানোর জন্য গ্রামীণফোনকে বলা হয়েছিল, তারা কত টাকা দিতে পারবে, সেটা জানানোর জন্য। আজকে তারা সেটি জানাতে ব্যর্থ হয়েছে।’
হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে বিটিআরসির লিভ টু আপিলের শুনানি নিয়ে গত ২৪ অক্টোবর গ্রামীণফোন ন্যূনতম কত টাকা দিতে পারবে, তা জানতে চেয়ে বৃহস্পতিবার আদেশের জন্য তারিখ রেখেছিলেন আপিল বিভাগ। কিন্তু সে হিসাব গ্রামীণফোন দিতে না পারায় সময় দিয়েছেন।
বিটিআরসি বাধা দেবে না, বলে আশা গ্রামীণফোনের। সর্বোচ্চ আদালত দুই সপ্তাহ সময় দেওয়ায় এর মধ্যে ব্যবসায়িক কার্যক্রম স্বাভাবিক করতে উদ্যোগ নিতে বিটিআরসিকে আহ্বান জানিয়েছে গ্রামীণফোন।
আপিল বিভাগের আদেশের পর শীর্ষ মোবাইল অপারেটর কোম্পানি এক বিজ্ঞপ্তিতে বলেছে, আপিল বিভাগ নভেম্বর পর্যন্ত শুনানি মুলতবি ঘোষণা করায় বিটিআরসির পদক্ষেপের ওপর হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা এখনও কার্যকর আছে। কিন্তু আদালতের নিষেধাজ্ঞার পরও বিটিআরসির ‘অসহযোগিতায় উদ্বেগ প্রকাশ’ করে বলা হয়, ‘আমরা বিটিআরসিকে অনুরোধ করছি, তারা যেন মাননীয় আদালতের ওপর আস্থা রেখে নিষেধাজ্ঞা মেনে চলে আমাদের ব্যবসায়িক কার্যক্রম স্বাভাবিক করতে উদ্যোগ গ্রহণ করে।
গ্রামীণফোনের কাছে নিরীক্ষা আপত্তি দাবির ১২ হাজার ৫৭৯ কোটি ৯৫ লাখ টাকা এবং রবির কাছে ৮৬৭ কোটি ২৩ লাখ টাকা পাওনা রয়েছে বলে দাবি করে আসছে বিটিআরসি।
কয়েক দফা চেষ্টায় সেই টাকা আদায় করতে না পেরে লাইসেন্স বাতিলের হুমকি দিয়ে নোটিস পাঠানো হয় দুই অপারেটরকে। বিটিআরসির দাবি করা টাকার ওই অঙ্ক নিয়ে আপত্তি তোলে গ্রামীণফোন ও রবি।