রিয়াজুল হক: গত ২৮.০১.২০২২ তারিখে চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতি এবং অভিনয় শিল্পী সংঘের নির্বাচন হয়ে গেল। দুটি সংগঠন থেকেই ২১ জন করে নির্বাচিত হয়েছেন। এই দুইটি বিষয়ে সংগঠন দুটির মধ্যে মিল থাকলেও অমিল রয়েছে অনেক জায়গায়।
অভিনয় শিল্পী সংঘের এই নির্বাচনে ভোটার সংখ্যা ছিল ৭৪৮ জন এবং ভোট দিয়েছেন ৬০০ জন। শিল্পকলা একাডেমিতে ভোটগ্রহণ হয়েছে। প্রবেশে কোন কঠোরতা ছিলনা। সবার মধ্যে একটা স্বতঃস্ফূর্তভাব দেখা গেছে। ভোট গ্রহণ শেষ হয়ে যাবার ঘণ্টা দেড়েকের মধ্যে ফলাফল ঘোষণা করা হয়েছে। ভোট নিয়ে কোন অভিযোগ ছিলনা। সবাই ফলাফল মেনে নিয়েছে। ভোট নিয়ে কারো কোনো উচ্চবাচ্য দেখলাম না। কোন কাঁদা ছোঁড়াছুঁড়ি নেই।
অন্যদিকে চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচনে মোট ভোটার ছিল ৪২৮ জন, ভোট দিয়েছেন ৩৬৫ জন।
প্রচুর আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সেখানে উপস্থিত ছিল। ভোটগ্রহণ চলাকালীন সময়ে টাকা দিয়ে ভোট কেনার অভিযোগ শোনা গেছে। ভোটগ্রহণ সন্ধ্যায় শেষ হলেও ভোররাতে ফলাফল ঘোষণা করা হয়েছে। ফলাফল ঘোষণার পর একটি পদের ফলাফলের উপর আপিল করা হয়েছে। সংবাদ সম্মেলন করা হয়েছে। নানা ধরনের অভিযোগ দেয়া হয়েছে। নির্বাচন কমিশন সম্পর্কেও অনেকেই অনেক ধরনের অভিযোগ করেছেন। এই যে শিল্পী সমিতির নির্বাচন নিয়ে এত অভিযোগ, সেগুলোর মধ্যে কিছু যদি সত্যি হয়, তাহলেও তা চলচ্চিত্র শিল্পের জন্য ভালো খবর নয়।
অভিনয় শিল্পী সংঘ কিংবা চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতি, দুটি সংগঠনের সকল সদস্যই অভিনয় শিল্পী, যাদেরকে সবাই আইডল মানে। ক্যামেরার সামনে থাকার কারণে, তারা সবাই দেশের প্রতিনিধিত্ব করে থাকেন। কেউ নাটকের মাধ্যমে আবার কেউ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে।
কিন্তু চলচ্চিত্র সমিতির বর্তমান যে অবস্থা সবার সামনে প্রকাশ পাচ্ছে, সেটা দেশের চলচ্চিত্র শিল্পের উন্নয়নের জন্য বাধা হয়ে দাঁড়াবে। পরিচালক সমিতি, প্রযোজক সমিতি পর্যন্ত শিল্পী সমিতি থেকে অনেক দিন থেকেই দূরে সরে রয়েছে।
দেশের চলচ্চিত্রের উন্নয়নের জন্য শিল্পী সমিতির মধ্যে যেসব সমস্যা বিদ্যমান, সেগুলো দূর করা প্রয়োজন। সেটা সম্ভব না হলে, কয়েকদিন পর সাধারণ মানুষ আমাদের চলচ্চিত্র শিল্পীদের সিনেমা দেখার জন্য নয়, তাদের ব্লেইম গেম দেখার জন্য ইউটিউব কিংবা ফেসবুকে সার্চ শুরু করবে। দেখতে চাইবে, নতুন কোন ইস্যু নিয়ে সংকট শুরু হয়েছে।
অভিনয় শিল্পী সংঘের মত বড় সংগঠনে যদি সমস্যা না থাকে (যদি থেকেও থাকে, সেটা প্রকাশ্যে আসে না), তাহলে চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির মত তুলনামূলক ছোট সংগঠনে এত সমস্যা কেন? সকল সমস্যা দূর হোক, সকল সংগঠন একসাথে কাজ করুক, এই প্রত্যাশা সবসময়।
লেখক: যুগ্ম পরিচালক, বাংলাদেশ ব্যাংক।