Print Date & Time : 23 June 2025 Monday 6:29 pm

দুই সহযোগী প্রতিষ্ঠানের দায় বইছে লংকাবাংলা

পলাশ শরিফ: দুই সহযোগী প্রতিষ্ঠানের দায় বইছে লংকাবাংলা ফাইন্যান্স। প্রতিষ্ঠানটির তিন সহযোগীর মধ্যে ‘লংকাবাংলা ইনভেস্টমেন্ট’ এখনও লোকসানে রয়েছে। সর্বশেষ আর্থিক বছরেও প্রায় ৪২ কোটি ৭৯ লাখ টাকা কর-পরবর্তী লোকসান গুনেছে প্রতিষ্ঠানটি। আরেক সহযোগী প্রতিষ্ঠান ‘লংকাবাংলা অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি’র কর-পরবর্তী মুনাফা এক বছরেই প্রায় ৯৪ শতাংশ কমেছে।

লোকসানি ও পিছিয়ে পড়া ওই দুই সহযোগী প্রতিষ্ঠানের বোঝা বইতে গিয়ে মুনাফা বৃদ্ধির ধারা ধরে রাখতে হিমশিম খাচ্ছে লংকাবাংলা ফাইন্যান্স। গত পাঁচ আর্থিক বছরের মধ্যে ২০১২-১৩ আর্থিক বছরে সর্বোচ্চ ৯৫ কোটি ৪৫ লাখ টাকা কর-পরবর্তী মুনাফা করেছিলো। আর সর্বশেষ আর্থিক বছরে ৭৯ কোটি ৫৫ লাখ টাকা কর-পরবর্তী মুনাফা করেছে কোম্পানিটি। সে হিসাবে  তিন বছরের ব্যবধানে লংকাবাংলা ফাইন্যান্সের কর-পরবর্তী মুনাফা প্রায় ১৫ কোটি ৯০ লাখ টাকা কমেছে।

সহযোগী প্রতিষ্ঠানের লোকসান ও মুনাফা কমে যাওয়া প্রসঙ্গে লংকাবাংলা ফাইন্যান্সের কোম্পানি সচিব মোস্তফা কামাল শেয়ার বিজকে বলেন, ‘তিনটির মধ্যে শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে লংকাবাংলা সিকিউরিটিজ মুনাফা করছে। আর অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানির মুনাফা আছে, তবে মুনাফা কমেছে। তিন সহযোগীর মধ্যে লংকাবাংলা ইনভেস্টমেন্ট লোকসানে আছে। সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলোকে লাভজনক করে তুলতে সময়োপযোগী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। আগামী দিনের আর্থিক প্রতিবেদনে এর ছাপ দেখা যাবে।’

প্রাপ্ত তথ্যমতে, লংকাবাংলা ফাইন্যান্সের তিন সহযোগী প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সবচেয়ে নাজুক অবস্থানে রয়েছে লংকাবাংলা ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড। ২০১৩ সালে পাবলিক লিস্টেড কোম্পানিতে রূপান্তরের তিন বছরেও লাভের মুখ দেখেনি বেসরকারি বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানটি। নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদনের তথ্যমতে, ২০১৫-১৬ আর্থিক বছরে লংকাবাংলা ইনভেস্টমেন্টের সুদ আয় আগের আর্থিক বছরের তুলনায় প্রায় এক কোটি ১৫ লাখ টাকা কমে ৯ কোটি ৭৯ লাখ টাকায় দাঁড়িয়েছে। এর জের ধরে সর্বশেষ আর্থিক বছরে প্রায় ৪২ কোটি ৭৯ লাখ টাকা কর-পরবর্তী লোকসান গুনেছে। এর আগের আর্থিক বছরেও প্রায় ৫২ কোটি ছয় লাখ টাকা কর-পরবর্তী লোকসান গুনেছে প্রতিষ্ঠানটি। ব্যয় সংকোচনের কারণে এ সময় প্রতিষ্ঠানটির কর-পরবর্তী লোকসান প্রায় ৯ কোটি ২৭ লাখ কমেছে।

এদিকে তিন খাতের মধ্যে দুটিতে আয় কমার জের ধরে পিছিয়ে পড়েছে লংকাবাংলা ফাইন্যান্সের অপর সহযোগী প্রতিষ্ঠান লংকাবাংলা অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট। সর্বশেষ আর্থিক বছরে প্রতিষ্ঠানটির মোট আয় দাঁড়িয়েছে প্রায় তিন কোটি ৬৩ লাখ টাকা। যা এর আগের আর্থিক বছরের তুলনায় প্রায় দুই কোটি ২২ লাখ টাকা কম। এ সময় পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ থেকে লংকাবাংলা অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টের আয় প্রায় ৫৩ দশমিক ১৫ শতাংশ বা প্রায় দুই কোটি ৭৮ লাখ টাকা কমেছে। অন্যদিকে ব্যাংকের আমানতের সুদের হার কমায় স্থায়ী ও স্বল্পমেয়াদি আমানতের বিপরীতে প্রতিষ্ঠানটির সুদ বাবদ আয়ও কিছুটা কমেছে। এসব কারণে সর্বশেষ আর্থিক বছরে লংকাবাংলা অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টের কর-পরবর্তী মুনাফা এর আগের আর্থিক বছরের তুলনায় প্রায় ৯৩ দশমিক ৯১ শতাংশ বা প্রায় চার কোটি এক লাখ টাকা কমে প্রায় ২৬ লাখ ৬৩ হাজার টাকায় দাঁড়িয়েছে। এর আগের আর্থিক বছরে প্রায় চার কোটি ২৭ লাখ টাকা মুনাফা করেছিলো প্রতিষ্ঠানটি।

লংকাবাংলার সহযোগী তিন প্রতিষ্ঠানের মধ্যে তুলনামূলক ভালো অবস্থানে রয়েছে পুঁজিবাজারের শীর্ষস্থানীয় ব্রোকারেজ হাউজ লংকাবাংলা সিকিউরিটিজ। সর্বশেষ আর্থিক বছরে প্রতিষ্ঠানটির আয় এর আগের আর্থিক বছরের তুলনায় প্রায় এক কোটি সাত লাখ টাকা কমেছে। তবে ব্যাংক আমানতের সুদের হার কমায় এ খাতের ব্যয় এক বছরে প্রায় ২০ দশমিক ৩৭ শতাংশ বা প্রায় ১০ কোটি ৯০ লাখ টাকা কমেছে।

এর ওপর ভর করে সর্বশেষ আর্থিক বছরে লংকাবাংলা সিকিউরিটিজের কর-পরবর্তী মুনাফা এর আগের আর্থিক বছরের তুলনায় প্রায় ১২৪ দশমিক ৬১ শতাংশ বা ৯ কোটি ৬৭ লাখ টাকা বেড়েছে। এতে প্রতিষ্ঠানটির মুনাফা দাঁড়ায় প্রায় ১৭ কোটি ৪৩ লাখ টাকা।

তবে লংকাবাংলা সিকিউরিটিজের সহযোগী বিজবাংলা মিডিয়া লিমিটেড রয়েছে বড় ধরনের লোকসানে। প্রকাশনা খাতের এ প্রতিষ্ঠানটির ৮০ শতাংশ শেয়ার ২০১৫ সালের ৩১ মে কেনে লংকাবাংলা সিকিউরিটিজ। ছয় কোটি টাকার এ প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করা হয় ২৩ কোটি ৪১ লাখ টাকা। অর্থাৎ লোকসানি এ প্রতিষ্ঠানে লংকাবাংলা সিকিউরিটিজের ইকুইটি ঘাটতি দাঁড়ায় ১৭ কোটি ৪১ লাখ টাকা। তবে গত ১৯ মাসে আরও লোকসান দেয় বিজবাংলা মিডিয়া লিমিটেড। এতে ২০১৬ সালের ডিসেম্বর শেষে প্রায় ২৬ কোটি ৮৮ লাখ টাকা ঋণাত্মক (ঘাটতি) ইকুইটি রয়েছে লংকাবাংলা সিকিউরিটিজের।

উল্লেখ্য, ২০০৬ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত লংকাবাংলা ফাইন্যান্সের প্রায় ৩১ কোটি ৮২ লাখ শেয়ার রয়েছে। এর মধ্যে প্রতিষ্ঠানটির উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের হাতে বর্তমানে ৩৪ দশমিক ৬৩ শতাংশ শেয়ার রয়েছে। এছাড়া প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে ২৬ দশমিক ৬৯ শতাংশ, বিদেশি বিনিয়োগকারীদের হাতে পাঁচ দশমিক শূন্য আট শতাংশ ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে ৩৩ দশমিক ৬০ শতাংশ শেয়ার রয়েছে। আর্থিক খাতের শীর্ষস্থানীয় কোম্পানিটির শেয়ার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) গতকাল সর্বশেষ ৫২ টাকা ৮০ পয়সায় লেনদেন হয়েছে।