Print Date & Time : 20 June 2025 Friday 11:39 pm

দুই সিটিতে আজ ভোট

নিজস্ব প্রতিবেদক: নির্বাচনের প্রচারণা শেষ। এরই মধ্যে ভোট গ্রহণের প্রস্তুতিও শেষ হয়েছে। নির্বাচনী সরঞ্জামও এরই মধ্যে ভোটকেন্দ্রে পৌঁছে গেছে। রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশনের প্রত্যাশিত ভোট গ্রহণ করা হবে আজ। সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত টানা ভোটগ্রহণ চলবে। এদিকে নির্বাচনকে ঘিরে ঢাকায় সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। সংঘাত এড়াতে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে।

নির্বাচন বিশ্লেষকদের মতে, এবারের নির্বাচনে মেয়র পদে মূলত আওয়ামী লীগ ও বিএনপি প্রার্থীর মধ্যে মূল প্রতিদ্ব›িদ্বতা হবে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপসের সঙ্গে প্রধান প্রতিদ্ব›িদ্বতায় রয়েছেন বিএনপির ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন। ওই সিটিতে জাতীয় পার্টির প্রার্থী হাজী সাইফুদ্দিন আহমেদ মিলন, গণফ্রন্টের আবদুস সামাদ সুজন, বাংলাদেশ কংগ্রেসের মো. আকতার উজ্জামান ওরফে আয়াতুল্লাহ, ইসলামী আন্দোলনের মো. আবদুর রহমান ও ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) বাহারানে সুলতান বাহারও মাঠে আছেন।

অন্যদিকে ঢাকা উত্তর সিটিতে আওয়ামী লীগ প্রার্থী মো. আতিকুল ইসলামের সঙ্গে প্রধান প্রতিদ্ব›িদ্বতায় রয়েছেন বিএনপির প্রার্থী তাবিথ আউয়াল। এছাড়া ওই সিটিতে মেয়র পদে কমিউনিস্ট পার্টির ডা. আহাম্মদ সাজেদুল,

এনপিপির মো. আনিসুর রহমান দেওয়ান, প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক দলের (পিডিপি) শাহীন খান ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের শেখ মো. ফজলে বারী মাসউদও লড়ছেন।

তথ্যমতে, দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ১৩ মেয়র প্রার্থীসহ কাউন্সিলর পদে প্রায় ৭৫০ জন প্রতিদ্ব›িদ্বতা করছেন। গত ১০ জানুয়ারি প্রতীক বরাদ্দের পরই প্রচারণায় নামেন মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা। ঢাকা উত্তর সিটিতে মেয়র ও কাউন্সিলর পদে ৪৭০ জন মনোনয়নপত্র দাখিল করলেও চ‚ড়ান্ত প্রতিদ্ব›িদ্বতায় রয়েছেন ৩৩৪ জন। বাকি ১৩৬ জনের অনেকে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেছেন। আবার যাচাইয়ে অনেকের প্রার্থিতা বাতিল হয়েছে। বর্তমানে মেয়র পদে ছয়জন, ৫৪টি সাধারণ ওয়ার্ডের বিপরীতে ২৫১ কাউন্সিলর ও ১৮টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে ৭৭ নারী কাউন্সিলর ভোটের মাঠে রয়েছেন।

অন্যদিকে ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে চ‚ড়ান্ত প্রতিদ্ব›িদ্বতায় আছেন ৪১৬ জন। ওই সিটিতে সাতজন মেয়র পদে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। তারা সবাই চ‚ড়ান্ত প্রতিদ্ব›িদ্বতায় রয়েছেন। তবে কমেছে সাধারণ কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর প্রার্থীর সংখ্যা। এ সিটিতে ৭৫টি ওয়ার্ডে ৪৬০ জন মনোনয়নপত্র দাখিল করলেও চ‚ড়ান্ত লড়াইয়ে রয়েছেন ৩২৭ জন এবং সংরক্ষিত ২৫টি ওয়ার্ডে ১০২ জন মনোনয়নপত্র দাখিল করলেও ভোটের মাঠে রয়েছেন ৮২ জন।

নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, দুই সিটিতে মোট ভোটারসংখ্যা ৫৪ লাখ ৬৩ হাজার ৪৬৭ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ২৮ লাখ ৪৩ হাজার আটজন ও নারী ভোটার ২৬ লাখ ২০ হাজার ৪৫৯ জন। সিটি করপোরেশনের হিসাবে ঢাকা উত্তর সিটিতে মোট ভোটার ৩০ লাখ ১০ হাজার ২৭৩ জন, যার মধ্যে পুরুষ ১৫ লাখ ৪৯ হাজার ৫৬৭ জন এবং নারী ১৪ লাখ ৬০ হাজার ৭০৬ জন। অন্যদিকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে ভোটারসংখ্যা ২৪ লাখ ৫৩ হাজার ১৯৪ জন, যার মধ্যে পুরুষ ১২ লাখ ৯৩ হাজার ৪৪১ জন এবং নারী ১১ লাখ ৫৯ হাজার ৭৫৩ জন।

নির্বাচন কমিশন সূত্র জানিয়েছে, ঢাকার দুই সিটিতে এবার দুই হাজার ৪৬৮টি ভোটকেন্দ্র ও ১৪ হাজার ৪৪৫টি ভোটকক্ষ রয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা উত্তর সিটিতে এক হাজার ৩১৮টি ভোটকেন্দ্র ও সাত হাজার ৮৫৭টি ভোটকক্ষ এবং দক্ষিণ সিটিতে এক হাজার ১৫০টি ভোটকেন্দ্র ও ছয় হাজার ৫৮৮টি ভোটকক্ষ রয়েছে। ঢাকা উত্তর সিটিতে ৬৩৬টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ও দক্ষিণে ৬৪৬টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এসব কেন্দ্র অবস্থিত।

এদিকে ঢাকার দুই সিটিতে মোট ভোট গ্রহণ কর্মকর্তা রয়েছেন ৪৫ হাজার ৮০৩ জন। এর মধ্যে দুই হাজার ৪৬৮ প্রিসাইডিং কর্মকর্তা, ১৪ হাজার ৪৩৪ সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা ও ২৮ হাজার ৮৬৮ পোলিং কর্মকর্তা রয়েছেন। এরই মধ্যে নির্বাচন কমিশন তাদের প্রশিক্ষণ দিয়েছে। ঢাকা উত্তর সিটিতে এক হাজার ৩১৮ প্রিসাইডিং, সাত হাজার ৮৫৭ সহকারী প্রিসাইডিং এবং ১৫ হাজার ৬৯২ পোলিং কর্মকর্তা ভোট গ্রহণ করবেন। অন্যদিকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে এক হাজার ১৫০ প্রিসাইডিং, ছয় হাজার ৫৮৮ সহকারী প্রিসাইডিং ও ১৩ হাজার ১৭৬ পোলিং কর্মকর্তা ভোট নেবেন।

ঢাকার দুই সিটিতে প্রথমবারের মতো ইভিএমে ভোটগ্রহণ করতে যাচ্ছে ইসি। দুই সিটিতে ভোটগ্রহণের জন্য ২৮ হাজার ৮৬৮টি ইভিএম প্রস্তুত করা হয়েছে। ঢাকা উত্তরে ১৫ হাজার ৬৯২টি এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে ১৩ হাজার ১৭৬টি মেশিন ভোটে থাকবে।

জানা গেছে, ভোটকেন্দ্রে ইভিএমের কারিগরি সহায়তা দিতে সশস্ত্র বাহিনীর পাঁচ হাজার ১৫ সদস্য মোতায়েন থাকবেন। প্রতিটি কেন্দ্রে দুজন করে সার্জেন্ট বা করপোরাল বা ল্যান্স-করপোরাল অথবা সৈনিক দায়িত্ব পালন করবেন। এছাড়া ৫২ জেসিও ও ২৭ অফিসারও মাঠে থাকবেন। এরই মধ্যে দুই সিটির জন্য পাঁচ হাজার ৫৩৮ জন সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য নিয়োগের আদেশ হয়েছে। সেইসঙ্গে ঢাকার দুই সিটি নির্বাচন ঘিরে থাকছে তিন স্তরের নিরাপত্তাবলয়। এরই মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ ভোটকেন্দ্র ও তার আশপাশের এলাকা গোয়েন্দা নজরদারির আওতায় এসেছে। নিরাপত্তার প্রথম ধাপে গত বৃহস্পতিবার থেকেই রাজধানীতে পুলিশের পাশাপাশি ৬৫ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। প্রস্তুত রাখা হয়েছে অতিরিক্ত আরও ১০ প্লাটুন বিজিবি সদস্য। আর মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে পুলিশ, এপিবিএন ও ব্যাটালিয়ন আনসারের সমন্বয়ে প্রতিটি সাধারণ ওয়ার্ডে একটি মোবাইল ফোর্স থাকবে।

এদিকে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করবেন বিভিন্ন দেশের অন্তত ৬৭ পর্যবেক্ষক। সাতটি দেশ ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) প্রতিনিধিরা ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করবেন। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ২৭ জন, যুক্তরাজ্যের ১২ জন, সুইজারল্যান্ডের ছয়জন, জাপানের পাঁচজন, নেদারল্যান্ডসের ছয়জন, ডেনমার্কের দুজন, নরওয়ের চারজন ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের পাঁচজন পর্যবেক্ষক সিটি ভোট পর্যবেক্ষণ করবেন। এছাড়া আরও ২২টি দেশীয় পর্যবেক্ষক সংস্থার এক হাজার ১৩ জন পর্যবেক্ষক ও গণমাধ্যমের কয়েক হাজার সাংবাদিক ভোট পর্যবেক্ষণ করবেন।