নিজস্ব প্রতিবেদক : বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ‘চট্টগ্রাম ও ময়মনসিংহে মাত্র দুটি গণসমাবেশ দেখেই সরকারের মন্ত্রীরা প্রলাপ বকতে শুরু করেছেন। গত ১৪ বছর ধরে সীমাহীন নির্যাতন-নিপীড়নের শিকার হওয়া মানুষগুলো সর্বশক্তি নিয়ে জেগে উঠেছে। শেখ হাসিনার পদত্যাগ, নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার, ভোটাধিকার, মাদার অব ডেমোক্রেসি বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি, তারেক রহমানের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। দুর্নীতি ও দুঃশাসনের বিরুদ্ধে রাজপথে জনগণের বাঁধভাঙা উত্তাল স্রোত দেখে নিশিরাতের সরকারের নেতা-মন্ত্রীদের বুকে কাঁপন ধরেছে।’
আজ সোমবার (১৭ অক্টোবর) নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে রিজভী বলেন, ‘রাস্তায় যানবাহন বন্ধ করা, পথে পথে বাধা, হামলা-গ্রেপ্তার-মামলা করা হচ্ছে। তারপরও গণসমাবেশমুখী কাফেলা দিন দিন বেড়েই চলেছে। সমাবেশ সফল করতে চিড়ামুড়ি নিয়ে দিন-রাত হেঁটে কিংবা ভ্যানে-ট্রলারে করে এসে মাঠে-ময়দানে, রাস্তায়, ফুটপাতে, গলিতে, ছোট্ট ঘরে গাদাগাদি করে একত্রে, এমনকি বাথরুমের পাশে রাত কাটাচ্ছেন হাজারো দেশপ্র্রেমিক জনতা। এটা অভূতপূর্ব দৃশ্য এবং এদের অবদান-ত্যাগ বৃথা যাবে না।’
সরকারকে উদ্দেশ করে রিজভী বলেন, ‘এই পরিস্থিতি উপলব্ধি করে আপনারা নির্দলীয় সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করুন। তা না হলে গণঅভ্যুত্থান আসন্ন।’
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘রাষ্ট্র পরিচালনায় সম্পূর্ণ ব্যর্থ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রায় প্রতিদিনই কোনো না কোনো অনুষ্ঠানে দেয়া বক্তব্যে বলছেন, দুর্ভিক্ষ আসছে। আসলে যারা লুটপাটের ভাবধারায় অনুপ্রাণিত, তাদের দ্বারা অনাহার-অর্ধাহার আর দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি হওয়া স্বাভাবিক। রাষ্ট্রের ১২টা বাজিয়ে এখন জনগণকে উপদেশ দিচ্ছেন ভেন্নার তেল দিয়ে কুপি ও হারিকেন জ্বালানোর প্রস্তুতি নিতে। সামনের দিনে বিদ্যুৎ-গ্যাস দিতে পারবেন না। টাকা দিয়েও খাবার মিলবে না। লুটপাট করে তার রাজভা-ার শেষ। আমদানি করার মতো ডলার নেই। দেশের সম্পদ লুটেপুটে খেয়ে দেশটাকে ধ্বংস করে এখন বলছেন আদিম যুগে ফিরে যেতে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে দুর্ভিক্ষ হবেই। ৭৪ সালেও দেশে দুর্ভিক্ষ হয়েছিল। তখন কোথাও যুদ্ধ ছিল না। দেশের জনগণ জানে, মানে বিশ্বাস করে বাংলাদেশের ইতিহাসে দুর্নীতি-দুর্ভিক্ষ আর আওয়ামী লীগ সমার্থক।’
গত শনিবার ময়মনসিংহের সমাবেশে আসা-যাওয়ার পথে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা হামলা চালালেও পুলিশ উল্টো বিএনপি এবং তার অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের নামে মিথ্যা মামলা দায়ের করেছে বলে অভিযোগ করেন রিজভী।
তিনি বলেন, ‘সমাবেশ শেষে বাড়ি ফেরার উদ্দেশে ময়মনসিংহ রেলওয়ে স্টেশনে উপস্থিত হলে পুলিশের উপস্থিতিতে যুবলীগ-ছাত্রলীগ ব্যাপক হামলা চালায়। এতে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের বেশকিছু নেতাকর্মী আহত হয়ন। কিন্তু পুলিশ দুষ্কৃতদের প্রতিহত না করে রাতেই বিএনপি নেতাকর্মীদের নামে মিথ্যা মামলা দায়ের করে। মামলায় যাদের অভিযুক্ত করা হয়েছে, তাদের অনেকে তখন সভাস্থলে ছিলেন। এটাই আওয়ামী সরকারের চিরচেনা সংস্কৃতি।’
রিজভী বলেন, ‘ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক মফিজুর রহমান আশিককে তিন দিন গুম করে রাখার পর গতকাল সকালে পুলিশ আদালতে সোপর্দ করেছে। প্রকাশ্যে দিনের বেলায় তাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে তুলে নেয়া হলেও তা তারা স্বীকার করেনি। আবার গতকাল তাকে পুলিশই হাজির করে। রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস বিষাক্ত ফণা তুলে এখন নানাভাবে দংশন করছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আশিক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে অনার্স ও মাস্টার্স করা। তার মতো একজন সুশিক্ষিত মেধাবী ছেলেকে যেভাবে শারীরিক নির্যাতন করা হয়েছে, সেটি নজিরবিহীন। এর ওপর তাকে দুদিনের রিমান্ডে নেয়া হয়েছে শুধুমাত্র নির্যাতন করার জন্য। এই বর্বরতা অমানবিক ও হৃদয়বিদারক। আমি অবিলম্বে তার রিমান্ড বাতিল করে নিঃশর্ত মুক্তির জোর দাবি জানাচ্ছি।’