নজরুল ইসলাম: ঘুষের টাকাসহ দুদকের কাছে গ্রেপ্তার। পরে দুদকের মামলা ও চার্জশিটেও আসামি। ব্যবস্থা নিতে দুদক ও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে বারবার সুপারিশও করা হয়েছে। তার পরও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি আইন বিভাগ। সাময়িক বরখাস্তও করা হয়নি! উল্টো সাক্ষীদের হুমকি-ধমকি দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। দুদক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
২০১৮ সালের ১০ জুলাই হাতেনাতে ঘুষের ১৪ হাজার টাকাসহ পাবনার আটঘরিয়া সাবরেজিস্ট্রি অফিসের সাবরেজিস্ট্রার ইশরাত জাহানকে গ্রেপ্তার করে দুদক। তার অফিসে তল্লাশি চালিয়ে মোহরার আশরাফুল আলমের ব্যবহƒত ড্রয়ার থেকে নগদ ৮০ হাজার ৮০ টাকা জব্দ করা হয়। এছাড়া ৮, ৯ ও ১০ জুলাই ঘুষ আদায়-সংক্রান্ত একটি তালিকা জব্দ করা হয়। তালিকা মোতাবেক জব্দ ৮০ হাজার ৮০ টাকার মধ্যে এন ফিস ৩১ হাজার ৮৫৬ টাকা। বাকি ৪৮ হাজার ১৯৬ টাকা ঘুষের। তালিকা পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ৮ তারিখে ৬৮ হাজার ৫৯০ টাকা, ৯ তারিখে ৬১ হাজার ৯৫০ টাকা ও ১০ তারিখে ৪৭ হাজার ৩০০ টাকা ঘুষ নেয়া হয়েছে। অর্থাৎ তিন দিনে ঘুষ হিসাবে এক লাখ ৭৭ হাজার ৮৪০ টাকা আদায় করা হয়েছে।
এই ঘটনায় ২০১৮ সালের ১০ জুলাই মামলা করে দুদক। একই বছর ১৬ আগস্ট আদালতে আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করা হয়। চার্জশিট দাখিলের পর পাবনার সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতে বিচার শুরু হয়। ২৮ সাক্ষীর মধ্যে পাঁচজনের সাক্ষ্য নেয়া হয়েছে। সাক্ষ্য দেয়ার পরবর্তী তারিখ আগামী ২১ মার্চ নির্ধারণ করা হয়েছে। এরই মধ্যে সাক্ষীদের হুমকি-ধমকি দেয়ার অভিযোগ উঠেছে।
দুদকের পক্ষে মামলাটি পরিচালনা করছেন পিপি এমএ রহিম খান।
বাংলাদেশ সার্ভিস রুল (বিএসআর) পার্ট-১-এর ৭৩ নম্বর বিধির নোট-২ অনুসারে ফৌজদারি অভিযোগে বা দেনার দায়ে আটক সরকারি কর্মচারী গ্রেপ্তার হওয়ার তারিখ থেকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত বলে বিবেচিত হবেন। বিচার কার্যক্রম শেষ না হওয়া পর্যন্ত খোরপোষ ভাতা পাবেন। মন্ত্রিপরিষদ সচিবালয়ের সংস্থাপন বিভাগের ২১.১১.১৯৭৮ তারিখের ঊউ(জবম.-ঠও)ঝ/১২৩/৭৮-১১৫(৫০০) নম্বর স্মারক মোতাবেক কোনো কর্মচারী গ্রেপ্তারের পর বা আত্মসমর্পণের পর জামিনে মুক্তিলাভ করলেও সাময়িকভাবে বরখাস্ত হিসেবে বিবেচিত হবেন। তবে এক্ষেত্রে জটিলতা এড়ানোর জন্য কর্তৃপক্ষ সাময়িকভাবে বরখাস্তের ফরমাল আদেশ জারি করবেন।
দুই আসামিকে বাংলাদেশ সার্ভিস রুল (বিএসআর) পার্ট-১-এর ৭৩ নম্বর বিধির নোট-২
অনুযায়ী সাময়িকভাবে বরখাস্ত করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে ২০১৮ সালের ২৯ জুলাই দুদক সচিবের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোকে অবহিত করা হয়। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের উপসচিব জাহাঙ্গীর হোসেন সাক্ষরিত এক পত্রে আসামিরা জামিনে রয়েছেন কি না, দুদকের কাছে তা জানতে চাওয়া হয়। ২০১৮ সালের ১৪ অক্টোবর দুদক থেকে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগকে জানানো হয়, আসামিরা জামিনে রয়েছেন। একই বছরের ১৫ নভেম্বর দুদক সচিব মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে অবহিত করেন ১৬ আগস্ট আদালতে আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে ২০১৮ সালের ২৬ নভেম্বর আইন সচিবকে দুদকের মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি ইশরাত জাহান ও আশরাফুল আলমের বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে বলা হয়।
পরবর্তীকালে মোহরার আশরাফুল আলমকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হলেও ইশরাত জাহানের সাময়িক বরখাস্তকরণের বিষয়ে আইন ও বিচার বিভাগ থেকে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। একই মামলার দুই আসামির মধ্যে একজনকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হলেও অপরজন বহাল তবিয়তে রয়েছেন।
আসামিরা স্থানীয় হওয়ায় এবং সাবরেজিস্ট্রারের নিজ পোস্টিং পাবনা থাকায়, এই মামলার সাক্ষীদের বিভিন্ন ধরনের ভয়ভীতি ও প্রলোভন দেখিয়ে মামলার ফল প্রভাবান্বিত করার অপচেষ্টা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।