নিজস্ব প্রতিবেদক: দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) বারবার তলব করলেও সাড়া দিচ্ছেন না নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টিরা। বোর্ড অব ট্রাস্টির চেয়ারম্যান আজিমউদ্দিন আহমেদসহ ছয়জন গুরুত্বপূর্ণ সদস্যকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য কয়েক দফায় তলব করা হলেও কেউই হাজির হননি। গত ২, ৪ ও ৬ জানুয়ারি তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করা হলেও ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে নির্ধারিত সময়ে উপস্থিত হয়ে বক্তব্য দেননি তারা। চেয়ারম্যানসহ বোর্ড অব ট্রাস্টির সব সদস্য তাদের আইনজীবীর মাধ্যমে সময় চেয়ে আবেদন করেছেন। অভিযোগের বিষয়ে যাবতীয় নথিপত্র সংগ্রহ করতে আরও সময় প্রয়োজন বলে তারা আবেদনে জানিয়েছেন।
তাদের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ আদায়, এফডিআর করার নামে প্রতিষ্ঠানের অর্থ লোপাট, স্ত্রী-স্বজনদের চাকরি দেয়ার নামে লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়া, সরকারি শুল্ক ফাঁকি দিয়ে গাড়ি ক্রয় ও অবৈধভাবে বিলাসবহুল বাড়ি ব্যবহার এবং বিভিন্ন অনৈতিক সুযোগ-সুবিধা নেয়ার অভিযোগ খতিয়ে দেখছে দুদক।
দুদক থেকে পাঠানো চিঠিতে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অব ট্রাস্টির দুই সদস্য মোহাম্মদ শাহজাহান ও এমএ কাশেমকে ২ জানুয়ারি, সদস্য বেনজির আহমেদ ও রেহানা রহমানকে ৪ জানুয়ারি এবং বোর্ড অব ট্রাস্টির চেয়ারম্যান আজিমউদ্দিন আহমেদ ও সদস্য আজিজ আল কায়সার টিটুকে ৬ জানুয়ারি হাজির হতে বলা হয়েছিল।
যদিও এ বিষয়ে দুদক সূত্রে জানা গেছে, জিজ্ঞাসাবাদে তলব করার পর কেউ হাজির না হলে সাধারণত দ্বিতীয় দফায় সময় দেয়ার বিধান নেই। তবে বড় কোনো কারণ বা মানবিক বিষয় হলে অনেককে পরে বক্তব্য দেয়ার সুযোগ দেয়া হয়।
এর আগে ২৮ নভেম্বর নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর বরাবর পাঠানো এক চিঠিতে অভিযোগ-সংশ্লিষ্ট যাবতীয় নথিপত্র তলব করে দুদক। যার বেশ কিছু নথিপত্র দুদকে পৌঁছেছে বলে জানা গেছে। রেকর্ডপত্রের মধ্যে রয়েছেÑনর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে ২০১০ থেকে এখন পর্যন্ত জমি ক্রয়সংক্রান্ত যাবতীয় নথিপত্র, বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে ২০১২ থেকে এখন পর্যন্ত গাড়ি বা মোটরযান ক্রয়সংক্রান্ত নথিপত্র, ব্যাংক হিসাবের নথিপত্র, বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালনা-সংক্রান্ত আইন ও নীতিমালা এবং ২০১৪ থেকে এখন পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট এবং বিভিন্ন কমিটির সিটিং অ্যালাউন্স বরাদ্দসংক্রান্ত রেকর্ডপত্র।
গত ২৮ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই ট্রাস্টি ও প্রতিষ্ঠাতা সদস্য আজিমউদ্দিন আহমেদ, এমএ কাশেম সিন্ডিকেটের দুর্নীতি, অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়ে অনুসন্ধান কর্মকর্তা ও তদারকি কর্মকর্তা নিয়োগ দেয়া হয়।
বারবার তলবের পরও হাজির না হওয়ার প্রসঙ্গে জানতে চাইলেÑগতকাল দুদকের প্রধান কার্যালয়ের সামনে সংস্থাটির সচিব মো. মাহবুব হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি যতটুকু জানি যাদের দুদকে ডাকা হয়েছে, তারা উপস্থিত হওয়ার জন্য সময় চেয়েছেন। আমি নতুন জয়েন করেছি। সব তথ্য-উপাত্ত এখনও আমার জানা হয়নি।’
কমিশনের সিদ্ধান্ত অনুসারে দুদক পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেনের তদারকিতে কর্মকর্তা ও উপপরিচালক মোহাম্মদ ফয়সালকে অনুসন্ধান কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। এর কয়েকদিন পর দুদক উপপরিচালক জাহাঙ্গীর আলমের নেতৃত্বে টিম গঠন করা হয়। টিমে মোহাম্মদ ফয়সাল ছাড়াও অন্য সদস্য হলেন সহকারী পরিচালক সাইফুল ইসলাম।
এর আগে বিশ্ববিদ্যালয়টির বোর্ড অব ট্রাস্টিজের বিরুদ্ধে দুদকে অভিযোগ জানিয়েছিল আইন ও মানবাধিকার ফাউন্ডেশন। ওই অভিযোগে বলা হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয় ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য আজিম উদ্দিন ও এম এ কাশেম সিন্ডিকেট দীর্ঘদিন ধরে প্রতিষ্ঠানটি লুটেপুটে খাচ্ছেন। মূলত এ সিন্ডিকেটের কারণে নর্থ সাউথে অনিয়ম পরিণত হয়েছে নিয়মে। কম মূল্যের জমি বেশি দামে ক্রয়, ডেভেলপার কোম্পানির কাছ থেকে কমিশন নেয়া, শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি থেকে অবৈধভাবে ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্যের জন্য বিলাসবহুল গাড়ি ক্রয়, লাখ টাকা করে সিটিং অ্যালাউন্স গ্রহণ, অনলাইনে মিটিং করেও সমপরিমাণ অ্যালাউন্স গ্রহণ, নিয়ম ভেঙে বিশ্ববিদ্যালয় ফান্ডের ৪০৮ কোটি টাকা নিজেদের মালিকানাধীন ব্যাংকে এফডিআর, মঞ্জুরি কমিশনের নির্দেশনা অমান্য করে কয়েকগুণ শিক্ষার্থী ভর্তি প্রভৃতি।