Print Date & Time : 18 June 2025 Wednesday 2:44 pm

দুদকের প্রতিবেদন নাকচ, সাবেক মন্ত্রীপুত্রের অপরাধ আমলে নিলেন আদালত

নিজস্ব প্রতিবেদক: চট্টগ্রামে জালিয়াতির মাধ্যমে নতুন গ্যাস সংযোগ দেয়া এবং সংযোগ স্থানান্তরের অভিযোগে দায়ের হওয়া একটি মামলায় দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দাখিল করা চূড়ান্ত প্রতিবেদন গ্রহণ করেননি আদালত। গতকাল সোমবার সকালে দুদকের প্রসিকিউশন শাখার সহকারী পরিদর্শক আবদুল লতিফ বলেন, আদালত দুদকের দেয়া চূড়ান্ত প্রতিবেদন গ্রহণ করেননি। মামলার এজাহারে থাকা পাঁচ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ আমলে নিয়েছেন। গত রোববার মামলাটির ধার্য তারিখ ছিল। ওইদিন বিকালে আদেশ দেয়া হয়েছিল। গত রোববার চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ ড. বেগম জেবুননেছার আদালত মামলার এজাহারে থাকা পাঁচ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ আমলে নেয়।

দুদকের আলোচিত কর্মকর্তা উপসহকারী পরিচালক (পরবর্তী সময় চাকরিচ্যুত) শরীফ উদ্দিন বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেছিলেন। এতে সাবেক প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান-বিষয়ক মন্ত্রী নুরুল ইসলামের ছেলে মুজিবুর রহমানসহ পাঁচজনকে আসামি করা হয়েছিল। মামলাটির তদন্ত শেষে দুদক চট্টগ্রামের উপপরিচালক মো. আতিকুল আলম চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছিলেন।

আদালত সূত্র জানায়, ২০১৬ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে সরকারি নির্দেশনায় আবাসিক খাতে নতুন করে গ্যাস সংযোগ দেয়া বন্ধ রয়েছে। এই আদেশ অমান্য করে ভুয়া কাগজপত্রের মাধ্যমে কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (কেজিডিসিএল) মন্ত্রীপুত্র মুজিবুর রহমানকে ২২টি অবৈধ সংযোগ দেয়। ২০১৭ সালের ২ মার্চ থেকে ২০১৮ সালের ২ আগস্ট পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে এসব সংযোগ দেয়া হয়েছিল। এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রাথমিক অনুসন্ধান শেষে ২০২১ সালের ১০ জুন দুদকের চট্টগ্রামের উপসহকারী পরিচালক (পরবর্তী সময় চাকরিচ্যুত) শরীফ উদ্দিন মামলাটি দায়ের করেছিলেন। মামলা দায়েরের তিন দিন পর কেজিডিসিএল কর্মকর্তারা অবৈধ ২২টি সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়।

মন্ত্রীপুত্র মুজিবুর রহমান ছাড়াও এ মামলার আসামিরা হলেন কেজিডিসিএলের সাবেক মহাব্যবস্থাপক (ইঞ্জিনিয়ারিং ও সার্ভিসেস) মো. সারওয়ার হোসেন, সাবেক দক্ষিণ জোনের টেকনিশিয়ান (সার্ভেয়ার) মো. দিদারুল আলম, সাবেক মহাব্যবস্থাপক (বিপণন) মোহাম্মদ আলী চৌধুরী ও সাবেক ব্যবস্থাপক মজিবুর রহমান। তাদের মধ্যে সাবেক মহাব্যবস্থাপক মো. সারওয়ার হোসেন, টেকনিশিয়ান দিদারুল আলম এবং সাবেক ব্যবস্থাপক মজিবুর রহমানকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরবর্তী সময়ে তারা জামিনে মুক্ত হন।

মামলা দায়েরের পর শুরুতে বাদী শরীফ উদ্দিন তদন্ত করলেও পরে তাকে চট্টগ্রাম থেকে বদলি ও চাকরিচ্যুত করা হয়। ২০২১ সালের ১ সেপ্টেম্বর মামলাটি নতুন করে তদন্তের দায়িত্ব পান দুদকের উপসহকারী পরিচালক মাহবুবুল আলম। তিনিও আংশিক তদন্ত শেষে বদলি হয়ে যান। ২০২২ সালের ১০ মার্চ নতুন করে তদন্ত কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পান চট্টগ্রাম সমন্বিত জেলা কার্যালয়-২-এর উপপরিচালক মো. আতিকুল আলম।

ওই কর্মকর্তার তদন্ত প্রতিবেদনের আলোকে গত ১৩ ফেব্রুয়ারি মামলার সব আসামিকে অব্যাহতি দিয়ে চূড়ান্ত প্রতিবেদন সত্য (এফআরটি) বলে অনুমোদন দেয় দুদক কমিশন। দুদক কমিশনার (তদন্ত) মো. জহুরুল হকের সই করা অনুমোদন-সংক্রান্ত চিঠিতে বলা হয়, তদন্ত কর্মকর্তার দাখিল করা সাক্ষ্য-স্মারক ও অন্য কাগজপত্র পর্যালোচনায় উপযুক্ত সাক্ষ্যপ্রমাণ না পাওয়ায় দুদক আইন, ২০০৪-এর ৩২ ধারা এবং দুদক কমিশন বিধিমালা ২০০৭-এর বিধি ১৫ উপবিধি-১ এ প্রদত্ত ক্ষমতাবলে মামলাটির চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিলের অনুমোদন দেয়া হলো।