নিজস্ব প্রতিবেদক: দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলায় সিটিসেলের প্রধান নির্বাহী (সিইও) মেহবুব চৌধুরীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গতকাল শনিবার শ্রীলঙ্কা থেকে ফেরার পথে শাহজালাল বিমানবন্দর ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ তাকে আটক করে। পরে দুদকের উপপরিচালক শেখ আবদুস ছালামের নেতৃত্বে একটি টিম তাকে গ্রেফতার করে। শাহজালাল বিমানবন্দরের ওসি (ইমিগ্রেশন) সাইদুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, ‘আমাদের কাছে দুদকের মামলার বিষয়ে আগেই কিছু তথ্য ছিল। তার ভিত্তিতে তাকে আটক করে দুদকের দায়িত্বরত কর্মকর্তাদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।’
পরে মেহবুব চৌধুরীকে বনানী থানার হেফাজতে রাখে দুদক। গতকাল রাত সাড়ে আটটায় মেহবুব চৌধুরীর বনানী থানায় আটক থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করেন থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) বিএম ফরমান আলী। তিনি শেয়ার বিজকে বলেন, ‘দুদক মেহবুব চৌধুরীকে বনানী থানার হেফাজতে রেখে গেছেন। যেহেতু দুদক এ বিষয়টি তদারকি করছে, তারাই পরে সিদ্ধান্ত নেবে। তারা কি করছে, সে বিষয়টি এখনও আমাকে সঠিকভাবে জানানো হয়নি। তবে তাকে এখন থেকে আদালতে নেওয়া হতে পারে।’
এর আগে গত বুধবার সিটিসেলের কর্মকর্তাদের নামে ব্যাংক থেকে অনিয়মের মাধ্যমে ঋণ নিয়ে তা আত্মসাতের অভিযোগে একটি মামলা করে দুদক। ওই মামলায় মেহবুব চৌধুরী ছাড়াও সিটিসেলের অন্যতম মালিক সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী এম মোরশেদ খান, তার স্ত্রী নাছরিন খান, পিবিটিএলের ভাইস চেয়ারম্যান আসগর করিম এবং এবি ব্যাংকের কয়েকজন কর্মকর্তাকে আসামি করা হয়। এরপর থেকে দুদক মেহবুব চৌধুরীকে খুঁজছিল।
দুদকের উপপরিচালক (জনসংযোগ) প্রণব কুমার ভট্টাচার্য্য বলেন, ‘মামলার বাদী ও দুদকের উপপরিচালক শেখ আবদুস ছালামের নেতৃত্বে একটি দল মেহবুব চৌধুরীকে গ্রেফতার করেছে।’
আবদুস ছালাম গণমাধ্যমকে বলেন, ‘বিমানবন্দর ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ তাকে আটক করে আমাদের খবর দেয়। এরপর তাকে আমরা গ্রেফতার করে বনানী থানায় এনে রেখেছি।’ মেহবুব চৌধুরীকে রোববার আদালতে পাঠানো হবে বলে জানান তিনি।
বন্ধ হয়ে যাওয়া মোবাইল ফোন অপারেটর সিটিসেলে সাত বছর ধরে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার পদে রয়েছেন মেহবুব চৌধুরী। তার আগে তিনি গ্রামীণফোনের প্রধান বাণিজ্যিক কর্মকর্তার দায়িত্বে ছিলেন।
দুদকের দায়ের করা এ মামলার অন্য আসামিরা হলেন- এবি ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাইজার আহমেদ, সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম ফজলুর রহমান, সাবেক উপব্যবস্থাপনা পরিচালক (ক্রেডিট) ও বর্তমানে ব্যবস্থাপনা পরিচালক মসিউর রহমান চৌধুরী, ব্যাংকের এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট সালমা আক্তার, সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক শামীম আহম্মেদ চৌধুরী, এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট মহাদেব সরকার সুমন।
এ ছাড়া ব্যাংকটির এসভিপি ও রিলেশনশিপ ম্যানেজার সৈয়দ ফরহাদ আলম, সাবেক এসভিপি ও রিলেশনশিপ ম্যানেজার আরশাদ মাহমুদ খান ও মো. জাহাঙ্গীর আলম, অপারেশনস বিভাগের সিনিয়র অ্যাসিসট্যান্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট শাহানুর পারভীন চৌধুরী, সাবেক এভিপি ও মহাখালী শাখা ব্যবস্থাপক জার ই এলাহী খান এবং রিলেশনশিপ অফিসার মো. কামারুজ্জামানকেও মামলায় আসামি করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, দুদকের মামলায় সিটিসেলের নামে এবি ব্যাংকের গ্যারান্টি নিয়ে আটটি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে অনিয়মের মাধ্যমে ৩৪৮ কোটি ৫০ লাখ টাকা ঋণ নিয়ে আত্মসাতের অভিযোগ করা হয়েছে।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, অসৎ উদ্দেশ্যে ও অন্যায়ভাবে আর্থিক লাভের জন্য প্যাসিফিক টেলিকম বাংলাদেশ লিমিটেডের ব্যাংক গ্যারান্টির আবেদন যাচাই-বাছাই না করেই প্রতারণা, দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে ওই ঋণ অনুমোদন করা হয়।
“ঋণ প্রদান সংক্রান্ত নিয়ম-কানুন ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলার উপেক্ষা করে জামানতবিহীন ব্যাংক গ্যারান্টি ইস্যু করার জন্য এবি ব্যাংকের কর্মকর্তাদের সহায়তায় চারটি বোর্ড সভার মাধ্যমে ৩৪৮ কোটি ৫০ লাখ টাকার ‘অপরিবর্তনীয় শর্তবিহীন’ ব্যাংক গ্যারান্টি অনুমোদন করা হয়।”
পরে ওই ‘অপরিবর্তনীয় শর্তবিহীন’ ব্যাংক গ্যারান্টি ‘সহায়ক জামানত’ হিসেবে ব্যবহার করে পিবিটিএল ঢাকা ব্যাংক থেকে ১০০ কোটি টাকা, আইএফআইসি ব্যাংক থেকে ৫০ কোটি টাকা, সিটি ব্যাংক থেকে সাড়ে ৩৮ কোটি টাকা, এনসিসি ব্যাংক থেকে ৫০ কোটি টাকা, বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক থেকে ১০ কোটি টাকা, পূবালী ব্যাংক থেকে ৩০ কোটি টাকা, সাবিনকো লিমিটেড থেকে ২৩ কোটি টাকা এবং ফিনিক্স লিমিটেড থেকে ৪৭ কোটি টাকাসহ এক বছর মেয়াদে মোট ৩৪৮ কোটি ৫০ লাখ টাকা ঋণ নেয়।
কিন্তু পিবিটিএল নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ওই ঋণ শোধ না করায় শর্ত অনুসারে এবি ব্যাংক গ্যারান্টির বিপরীতে পে-অর্ডারের মাধ্যমে সুদসহ ৩৮৩ কোটি ২২ লাখ ১০ হাজার ৩৬৩ টাকা ওই ব্যাংকগুলোকে পরিশোধ করে।
ওই অর্থকে পিবিটিএলের আত্মসাৎ করা অর্থ হিসেবে বর্ণনা করে এজাহারে বলা হয়, একটি ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ওই বিপুল পরিমাণ অর্থ ঋণ নেওয়ার সুযোগ না থাকায় পিবিটিএল এবি ব্যাংকের ব্যাংক গ্যারান্টি ব্যবহার করে পরিকল্পিতভাবে ওই টাকা ঋণ নেয়। আর এবি ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা তাতে সহযোগিতা করেন।
পিবিটিএল এবি ব্যাংকের মহাখালী শাখায় জামানতবিহীন ঋণের জন্য আবেদন করার পর ২০১১ সালের ২১ মার্চ থেকে ২০১৫ সালের ৭ অক্টোবর পর্যন্ত ওই অর্থ আত্মসাতের ঘটনা ঘটে বলে দুদকের অভিযোগ।