দুদকে তোলপাড়!

নিজস্ব প্রতিবেদক: অনুমতি না নিয়ে দেশের বাইরে যাওয়ায় উপপরিচালক ইমরুল কায়েসকে প্রত্যাহার করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তিনি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব হিসেবে দুদকে প্রেষণে কর্মরত ছিলেন। বুধবার শাস্তিমূলক ব্যবস্থা হিসেবে তাকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে ফেরত পাঠানো হয়। এ নিয়ে বুধবার দিনভর দুদকে তোলপাড় শুরু হয়।

বিষয়টি নিশ্চিত করে দুদক সচিব মো. মাহবুব হোসেন বলেন, সরকারি আদেশ অমান্য করে অনুমতি ছাড়া বিদেশ ভ্রমণ করায় তার বিরুদ্ধে সরকারি চাকরিবিধি অনুসারে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। আমাদের সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে তাকে জনপ্রশাসনে ফেরত পাঠানো হয়েছে।

জনসপ্রশাসন বিভাগের উপ-সচিব আবু ফতেহ মোহাম্মদ সফিকুল ইসলামের সই করা এক আদেশ সূত্রেও তার প্রত্যাহারের বিষয়টি জানা গেছে। আদেশে ইমরুল কায়েসকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এপিডি অনুবিভাগে ন্যস্ত করার কথা বলা হয়েছে।

ইমরুল কায়েস তিন সদস্যের দুদকের অভিযোগ যাচাই–বাছাই কমিটির সদস্য ছিলেন।

দুদকের একটি সূত্র জানায়, অভিযোগ যাচাই-বাছাই কমিটির তিনজনই বাইরের লোক (প্রেষণে আসা)। তাদের দুদকের কাজের বিষয়ে কোনো অভিজ্ঞতা নেই। অভিযোগ রয়েছে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে আসা অভিযোগ তাদেরকে জানিয়ে দেয়াই তাদের মূল কাজ।

দুদকের একটি সূত্র জানায়, ইমরুল কায়েস জালিয়াতির মাধ্যমে সরকারি আদেশ তৈরি করে ভারত ভ্রমণ করেন। তবে গত ২৯ মার্চ তিনি দুদক থেকে ১০ থেকে ১৮ মে পর্যন্ত ৯ দিনের ব্যক্তিগত সফরে ভারত যাওয়ার অনুমতি নেন। সে সময়ে তিনি ভারত যাননি। ২০ জুলাই কর্তৃপক্ষের অনুমতি না নিয়ে গোপনে ভারত যান। সেখান থেকে ফেরার পর তাকে প্রত্যাহার করে দুদক।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ২০২০ সালের নভেম্বরে ইমরুল কায়েসকে প্রেষণে দুদকে পদায়ন করে। সংস্থাটির অভিযোগ যাচাই-বাছাই সেলের একজন সদস্য তিনি। সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন ব্যক্তির বিরুদ্ধে দুদকে আসা অভিযোগ তিনি তাদের জানিয়ে দিতেন বলে অভিযোগ আছে। তবে বিনিময়ে তাদের কাছ থেকে কোনো সুবিধা নিতেন কি না তা জানা যায়নি।

সম্প্রতি অফিস আদেশ (জিও) না নিয়ে ভারত ভ্রমণে যান ইমরুল কায়েস। সেখান থেকে ভুয়া জিও বানিয়ে অস্ট্রেলিয়া ভ্রমণে উদ্যোগী হন। তবে অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার চেষ্টাকালে ভারতের ইমিগ্রেশন পুলিশের হাতে আটক হন তিনি। তার বিরুদ্ধে দুদকের অভিযোগের ভিত্তিতে বুধবার (২৭ জুলাই) জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এপিডি অনু বিভাগে তাকে ন্যস্ত করা হয়।

ইমরুল কায়েসের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের অনুসন্ধান চলছে বলে জানা গেছে।

তবে তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করেন ইমরুল কায়েস। তিনি বলেন, ‘আমার দুই মাস আগের জিও ছিল, তখন আমি যেতে পারিনি। ঈদুল আজহার পর দুদিনের জন্য ভারতে গিয়েছিলাম। আমাকে ইমিগ্রেশন পুলিশ আটক করেছে কিংবা আমি অর্থ পাচার করেছি এই ধরনের তথ্য ঠিক নয়।’

দুদক সূত্র জানায়, দুদকের ওই কর্মকর্তা (ইমরুল কায়েস) ২০২০ সালের নভেম্বর থেকে প্রেষণে দুদকের অভিযোগ যাচাই-বাছাই সেলে নিযুক্ত হন। ২০২২ সালের ২৯ মার্চ তিনি ভারত ভ্রমণের জন্য ৯ দিনের ছুটি (জিও) নেন। ১০ থেকে ১৮ মে পর্যন্ত তার ছুটি কার্যকর হয়।

১০ মে তারিখে ভারতে যান ইমরুল কায়েস। তবে ভারত ভ্রমণের বিষয়ে ছুটির আবেদনে কোনো কারণ উল্লেখ করেননি। তিনি কেন ভারত যাবেন সে বিষয়টিও জানে না দুদক। এ ছাড়া কোন উৎস হতে টাকা পেয়েছেন, কোথায় থাকবেন সেই সংক্রান্ত কোনো কিছু অফিসকে জানাননি।

একটি সূত্র জানায়, ইমরুল কায়েস ভারতে ভ্রমণের অফিস আদেশ নেন। পরে ভুয়া সরকারি আদেশ (জিও) ব্যবহার করে তিনি অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার চেষ্টা করেন। ভারতের ইমিগ্রেশর পুলিশ তাকে আটক করে দেশ ফেরত পাঠায়।

জানা যায়, অস্ট্রেলিয়া উদ্দেশে যাওয়া ও খরচ সংক্রান্ত বিতর্ক ঠেকাতেই ইমরুল কায়েস ভারতের জিও নেন। তবে তার ভারতের জিওর কোনো ভ্যালিডিটি ছিল না। তিনি মে মাসে জিও নেন। সেই জিওর মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও তিনি দ্বিতীয়বার জিও ছাড়া ভারতে যান। সেখানে থেকে কোনো ধরনের জিও ছাড়া অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার চেষ্টা করেন, যা সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী চাকরি বিধির লঙ্ঘন।

জিও ছাড়া দেশ ত্যাগ করার কারণে দুদকের চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে তাকে বুধবার (২৭ জুলাই) জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এডিপি অনুবিভাগে ন্যস্ত করা হয়েছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে এ-সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। এতে বলা হয়, পুনরাদেশে না দেওয়া পর্যন্ত তাকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এডিপি অনুবিভাগে বদলিপূর্বক নিয়োগ করা হলো।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০