দুদিনের বৃষ্টিতে মুন্সীগঞ্জে ১১ হাজার হেক্টর জমির আলু ক্ষতিগ্রস্থ

শেখ মোহাম্মদ রতন, মুন্সীগঞ্জ: দেশের অন্যতম বৃহতম আলু উৎপাদনকারী অঞ্চল মুন্সীগঞ্জ। ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদের প্রভাবে টানা গত দুই দিনের টানা বৃষ্টিতে জেলার ৬ টি উপজেলায় ১১ হাজার ৬ শত হেক্টর জমির আলু ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। জেলায় এ বছর জেলায় আলু রোপণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ হয় ৩৭ হাজার ৯০০ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে এ জেলায় ১৭ হাজার হেক্টর আলুর বীজ রোপন করা হয়।

মুন্সীগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সূত্রে জানা যায়, অগ্রহায়ণ মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে এ জেলায় বিভিন্ন উপজেলায় আলু রোপণ শুরু হয়েছে। গত শনিবার দুপুর পর্যন্ত জেলায় ১৭ হাজারের বেশি জমিতে আলু বীজ রোপণ করা হয়। যে সকল ক্ষেতে আলুর চারা গজিয়েছে সেটির খুব ক্ষতি হবে না বলে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অভিমত। অর্থাৎ ১০ থেকে ১৫ দিন আগে লাগালে আলু পচবেনা। কিন্তু দুই একদিনের মধ্যে যে সব ক্ষেতে আলু লাগানো বা রোপোন করা হয়েছে, সেগুলো পচে যাওয়ার আশংকা রয়েছে।

এদিকে, ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকরা দাবী করছেন এবার আলু বীজের দাম একটু কম হলেও সারের দাম অনেক বেশি ছিল। বেশি দাম দিয়ে সার কিনতে হয়েছে। বৃষ্টি কমলে নতুন করে আলু চাষ করতে তাদের আবার অর্থের দরকার। তারা সরকারি সহায়তা দাবী করছেন। এতে প্রস্তুতকৃত জমি পুনরায় মাটি শুকানোর পরে চাষাবাদ করতে কৃষকের একদিকে উৎপাদন ব্যয়বৃদ্ধি পাবে।

অন্যদিকে, আলুচাষে বিলম্ব ঘটায় ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ উৎপাদন কম হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

সদর উপজেলার চরকেওয়ার ইউনিয়নের কৃষক মনসুর মাদবর বলেন, আমি গত ১ সপ্তাহে ১২৬ শতাংশ জমিতে ডায়মন্ড আলু আবাদ করেছি। অতিবৃষ্টিতে আমার আলু খেতে পানি জমে গেছে। আমার এ জমিতে আলু আবাদে প্রায় দের লাখ টাকা খরচ হয়েছে। গেলো বছর আলুতে লাভও হয়নি। লাভের আশায় এবারও আলু আবাদ করেছি।

সদর উপজেলার আরেক আলু চাষী মোঃ রাসেল মিয়া জানান, ৭ দিন আগে ১টি জমিতে ৫০ হাজার টাকা খরচ করে আলু রোপন করেছি। এর ৩ দিন পরেই টানা বৃষ্টিতে তলিয়ে যায় পুরো জমি। পানির নিচে থাকলে আলুগুলো নষ্ট হয়ে যাবে। এমনিতেই গত মৌসুমে আলু দাম পাওয়া যায়নি। এ বছরও শুরুতেই এতো বড় ধাক্কা। এভাবে আলুর ব্যবসা আর ধরে রাখা সম্ভব না।

জেলার গজারিয়া উপজেলার কৃষক জসিম প্রধান বলেন, গত ১ সপ্তাহে দুইটি জমিতে আলু বীজ রোপণ করেছি। এখন কুড়ি গজানোর সময় টানা বৃষ্টিতে জমিতে পানি জমে গেছে। জমির মাঝখানে থাকায় পানি সরাতে পারছি না। এখন আল্লাহর উপর ভরসা ছাড়া কিছুই করার নেই।

গজারিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তৌফিক আহমেদ নুর জানান, উপজেলায় এ মৌসুমে ২ হাজার ৪৬৫ হেক্টর আলু আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। এখন পর্যন্ত ১৪১০ হেক্টর জমিতে আলু বীজ রোপণ করা হয়েছে। পানি জমলে আলু বীজ নষ্ট হয়ে যাবে। এ উপজেলাটি নদী বেষ্টিত হওয়ায় কিছু আলু আবাদি জমিতে জোয়ারের পানি উঠার খবর পাওয়া গেছে। উর্ধ্বতন কতৃপক্ষের নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

টঙ্গীবাড়ি উপজেলা কৃষিঅফিস সূত্রে জানা গেছে এ বছর উপজেলার প্রায় ৯ হাজার ৯০০ হেক্টর জমিতে আলু আবাদ করা হবে। ইতিমধ্যে প্রায় অর্ধেক জমিতে আলু রোপণ করা হয়েছে। বাকি জমিতে আলু রোপণের প্রস্তুতি নিচ্ছেন উপজেলার বিভিন্ন এলাকার কৃষকরা। এরমধ্যে হঠাৎ অনাকাঙ্খিত বৃষ্টিতে কৃষকের জমিতে পানি জমে গেছে। এতে একদিকে রোপণ করা আলুতে পচন ধরেছে অন্যদিকে আলু রোপণ করার জন্য প্রস্তুত করা জমিতে পানি জমে যাওয়ায় রোপণ কাজ বন্ধ রাখতে হচ্ছে।

মুন্সীগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ পরিচালক কল্যান কুমার সরকার বলেন, চলতি বছর মুন্সীগঞ্জে ৩৭ হাজার ৯০০ হেক্টর জমিতে আলু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে, যার মধ্যে ১৭ হাজার ৭৮০ হেক্টর জমিতে আলু আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে ১১ হাজার ৬ শত হেক্টর জমির আলু বৃষ্টির পানিতে আক্রান্ত হয়েছে। যাদের জমিতে আলু গাছ হয়ে গেছে তারা কিছুটা পরিত্রান পাবে। যারা দু’একদিনের মধ্যে বীজ লাগিয়েছে তাদের বীজগুলি নষ্ট হয়ে যাবার সম্ভাবনা রয়েছে। যা নতুন করে জমি তৈরি করে পুনরায় বীজ রোপন করতে হবে। কৃষকের শ্রম আর বীজ দুটোই ক্ষতি সাধন হয়েছে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০