Print Date & Time : 18 June 2025 Wednesday 3:03 pm

দুদুলতা ধানের সাফল্য

ঝিনাইদহ সদর উপজেলার কালুহাটি গ্রামের ইমদাদুল হক দুদু। ২০১১ সালে ধান নিয়ে গবেষণা শুরু করেন তিনি। এতে সাফল্যও পান। প্রথমে তিনি সুবললতা ধান থেকে একটি ধান উদ্ভাবন করেন। ওই ধান থেকে তিনি দুদুলতা পোলাও ধান উদ্ভাবন করেন। এরই ধারাবাহিকতায় গত বছর তিনি প্রায় দুই একর জমি থেকে দুই লাখ টাকারও বেশি ধান ও বীজ বিক্রি করেন। ভবিষ্যতে দুদুলতা ধান থেকে আরও তিনটি উন্নত জাতের ধান উদ্ভাবনের ইচ্ছে রয়েছে তার। পোলাও চালের ধান সুলভ মূল্যে বাজারে বিক্রি হবে বলে আশাবাদী ইমদাদুল হক দুদু।

কয়েকজন কৃষকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এ ধানের বীজ চাষাবাদে আগ্রহ রয়েছে তাদের।

জানা গেছে, ২০১২ সালে দুদু মিয়া সুবললতা ধানের মধ্যে নতুন জাতের ধানের তিনটি গোছা আবিষ্কার করেন। প্রাথমিকভাবে দুবছর পরিচর্যার পর ওই ধানের বীজ তৈরি করে নিজের জমিতে আবাদ করেন। রোগবালাই-সহিষ্ণু ওই ধানের জাতটি উচ্চতায় খাটো হওয়ার কারণে ঝড় বা বাতাসে হেলে পড়ে না। পোকামাকড়ের আক্রমণও হয় কম। ২০১৭ সালে দুদু মিয়া তিন বিঘা জমিতে ১০০ মণ ধান উৎপন্ন করেন। এ বছরও ধানের উৎপাদন ভালো হয়েছে। নতুন জাতের এ ধানের প্রতিটি শীষে সাড়ে ৩০০ থেকে ৪০০টি পর্যন্ত পুষ্ট ধান হচ্ছে, যা অন্য ধানের শীষের তুলনায় কয়েকগুণ বেশি।

এ ধানের গোছায় চিটা হয় না, তাই ফলন ভালো হচ্ছে। ধান থেকে যে চাল পাওয়া যাচ্ছে, তা দেখতে অনেকটা বেগুনের বিচির মতো। স্বাদও ভালো। দামও কৃষকের অনুকূলে। গত বছরের সাফল্যের পর এ বছর ধানের আবাদ বাড়ানোর জন্য কৃষক দুদু মিয়া বিভিন্ন এলাকার কৃষকের মাঝে ধানের বীজ সরবরাহ করেন। এ মৌসুমে ওইসব জমিতে ধানের বাম্পার ফলনের আশা করছেন চাষিরা।

ঝিনাইদহ সদর উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা মোফাখখারুল ইসলাম বলেন, নতুন ধানের জাতের উদ্ভাবক কৃষক দুদু মিয়াকে কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে প্রশিক্ষণসহ সব ধরনের প্রযুক্তিগত সহযোগিতা দেওয়া হচ্ছে। ধান উৎপাদনে সার, সেচ, আগাছা দমনসহ সার্বিক ব্যবস্থাপনা বিষয়াবলি আমাদের তত্ত্বাবধানে হচ্ছে। ধানটি দেখে আপাত দৃষ্টিতে মনে হচ্ছে, এবারও ধানটির ফলন গতবারের মতো আশানুরূপ হবে। জাতটির চাল চিকন, ভাত খেতে সুস্বাদু, ধানের বাজারদর অপেক্ষাকৃত বেশি, ফলনও ভালো। এরই পরিপ্রেক্ষিতে এ জাতের ধান নিকট-ভবিষ্যতে দেশব্যাপী ছড়িয়ে যাবে বলে আশা করছি।

সদর উপজেলার লক্ষ্মীপুর গ্রামের বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পুরস্কার অর্জনকারী গ্রিন চাষি মো. ইদ্রিস আলী ও শৈলকুপা উপজেলার ভাটই গ্রামের সাহেব আলীসহ একাধিক কৃষক জানিয়েছেন, দুদু মিয়া কয়েক বছর ধরে নতুন ধানের আবাদ করছেন। অন্যদের জমিতে কোনো কারণে ধানের ফলন কম হলেও কয়েক বছর ধরে দেখে আসছি তার নতুন জাতের ধানে ফলন ভালো হচ্ছে। তাই এ বছর তার কাছ থেকে বীজধান নিয়ে আবাদ করেছি। ফলন ভালো হবে বলে আশা করছি। ধান বর্তমানে থোড় অবস্থায় রয়েছে। পাশের ক্ষেতের অন্য জাতের ধানের তুলনায় অপেক্ষাকৃত ভালো বলে মনে হচ্ছে।

দুদু মিয়া বলেন, গত বছর ধানের ফলন ভালো পেয়েছিলাম। এ ধান ঝিনাইদহের কৃষকের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে আমি এ বছর এক হাজার কেজি ধানের বীজ বিতরণ করেছি। জেলার বিভিন্ন এলাকার কৃষক দুদুলতা ধানের আবাদ করছেন। সরেজমিন কৃষকের ক্ষেত পরিদর্শন করে দেখেছি, আমার কাছ থেকে নেওয়া ধান ভালো আছে। আশা করছি, তারাও আমার মতো ফলন পাবে। অনেক কৃষক এরই মধ্যে আমার কাছে অগ্রিম বীজের চাহিদা দিয়েছে। কাজেই এ বছরের তুলনায় আগামী বছর এ ধানের আবাদ আরও বাড়বে বলে আশা করছি। চলতি মৌসুমে তিনি আবাদ বৃদ্ধি করে পাঁচ একরে তিন প্রজাতির ধানের চাষ করবেন বলে জানিয়েছেন।

এ ব্যাপারে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক জিএম আবদুর রউফ বলেন, দুদুলতা ধান প্রতি শতকে গড়ে এক মণ ফলন হচ্ছে। তাছাড়া সার্বক্ষণিক কৃষি অফিস খোঁজ-খবর রাখছে।

তানভীর হাসান, ঝিনাইদহ