হামিদুর রহমান : ময়মনসিংহকে দেশের আটতম যানজটমুক্ত সবুজ নগরী হিসেবে গড়ে তোলার অনুমোদন হলেও গত দুই বছরেও দৃশ্যমান হয়নি বিভাগীয় অফিস। পাশাপাশি প্রয়োজনীয় টাকা বরাদ্দ না পাওয়ায় আটকে আছে জমি অধিগ্রহণের কাজ। ফলে ময়মনসিংহ বিভাগ প্রতিষ্ঠার দুই বছর পেরিয়ে গেলেও দৃশ্যমান হয়নি বিভাগীয় অফিস।
জানা যায়, ২০১৫ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর ময়মনসিংহ, জামালপুর, শেরপুর ও নেত্রকোনা জেলা নিয়ে ময়মনসিংহ বিভাগ গঠিত হয়। দেশের অষ্টম বিভাগ হিসেবে প্রশাসনিক পুনর্বিন্যাস-সংক্রান্ত জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটি (নিকার) এ বিভাগ গঠনের প্রস্তাব অনুমোদন দিলে তার এক মাস পরেই ময়মনসিংহ বিভাগের গেজেট প্রকাশিত হয়।
এরপর দুই বছর পেরিয়ে গেলেও ময়মনসিংহ বিভাগীয় কমিশনারের অফিস, রেঞ্জ ডিআইজির কার্যালয়সহ অন্যান্য বিভাগীয় অফিসের কার্যক্রম চলছে অস্থায়ী কার্যালয়ে। এর মধ্যে ময়মনসিংহ শিক্ষা বোর্ড গঠন করা হলেও এর আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হয়নি।
এ প্রসঙ্গে ময়মনসিংহ বিভাগীয় কমিশনার জিএম সালেহ উদ্দিন শেয়ার বিজকে বলেন, ব্রহ্মপুত্র নদের ওপারে নতুন বিভাগীয় শহর প্রতিষ্ঠার জন্য ভূমি অধিগ্রহণ, দ্বিগুণ ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসন ব্যয়ের জন্য গত বছরের জুলাইতে ছয় হাজার ৩০০ কোটি টাকা বরাদ্দ চেয়ে মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, যাদের জমি অধিগ্রহণ করা হবে তাদের ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসন বাবদ আরও তিন হাজার কোটি টাকার প্রয়োজন। ফলে মোট ছয় হাজার ৩০০ কোটি টাকা বরাদ্দ চেয়ে অর্থমন্ত্রীকে জনপ্রশাসনমন্ত্রী ছয় মাস আগে চিঠি দিলেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।
সূত্র মতে, প্রাথমিকভাবে জমি অধিগ্রহণের জন্য তিন হাজার ৩০০ কোটি টাকা নির্ধারণ করে জেলা প্রশাসন। এ বিষয়ে স্থানীয় জনসাধারণের সঙ্গে একাধিকবার আলোচনায় বসে জেলা ও বিভাগীয় প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তারা।
বিভাগীয় কাজের ধীরগতি সম্পর্কে ময়মনসিংহ পৌরসভার মেয়র মো. ইকরামুল হক টিটু শেয়ার বিজকে বলেন, যানজটমুক্ত পরিচ্ছন্ন সবুজ নগরী গড়ে তোলার জন্য দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। ব্রহ্মপুত্র নদের অপর পাড়ে ময়মনসিংহ সদর উপজেলার আটটি মৌজায় চার হাজার ৩৬৬ দশমিক ৮৮ একর ভূমিতে একটি আধুনিক, পরিকল্পিত নতুন বিভাগীয় শহর ও বিভাগীয় সদর দফতর প্রতিষ্ঠার জন্য নগর উন্নয়ন অধিদফতর মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়েছে। মূলত জায়গা অধিগ্রহণ না হওয়াই কাজ দ্রুত হচ্ছে না। জায়গা অধিগ্রহণ নিয়ে স্থানীয়দের সঙ্গে আলোচনা চলছে। আশা করছি, খুব তাড়াতাড়ি সব কিছু সমাধান হয়ে যাবে।
প্রাপ্ত তথ্যমতে, ২০১৫ সালের ১২ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মন্ত্রিসভার এক বৈঠকে ঢাকা ভেঙে ময়মনসিংহকে নতুন বিভাগ গঠনের ঘোষণা দেন। শুরুতে ঢাকা বিভাগের আটটি জেলা নিয়ে ময়মনসিংহ বিভাগ গঠনের ঘোষণা করা হলেও এ সময় টাঙ্গাইল ও কিশোরগঞ্জ ময়মনসিংহ বিভাগের অন্তর্ভুক্ত হতে অনীহা পোষণ করে এবং ঢাকা বিভাগের অন্তুর্ভুক্ত থাকতেই আগ্রহী হয়। পরে আবারও দুই দফায় কিশোরগঞ্জ ও টাঙ্গাইলসহ ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, জামালপুর, শেরপুর নিয়ে গঠন করা হয় ময়মনসিংহ বিভাগ।
গত ১৮ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ময়মনসিংহ বিভাগীয় শহরকে দৃষ্টিনন্দন ও আধুনিক হিসেবে গড়ে তোলার জন্য ১৭টি নির্দেশনা দ্রুত বাস্তবায়নের নির্দেশ দেন। এর মধ্যে ব্রহ্মপুত্র নদের ওপর কেওয়াটখালী রেল ব্রিজ-সংলগ্ন একটি সেতু, কাচারিঘাট জিরো পয়েন্ট সংলগ্ন একটি সেতু এবং খাগডহর দিয়ে একটি সেতুসহ মোট তিনটি সেতুর নির্মাণকাজ দ্রুত করার জন্য সড়ক পরিবহন সচিবকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এছাড়া ব্রহ্মপুত্র নদের ওপারে নতুন শহর করার জন্য সড়কসহ বেড়িবাঁধ নির্মাণ করার জন্য বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয় থেকে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, বর্তমানে ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন ও ময়মনসিংহ মেট্রোপলিটন পুলিশ (এমএমপি) গঠনের কাজ চলছে। এমএমপির জন্য আটটি থানা, মহানগর পুলিশ লাইনস, আরআরএফ পুলিশ লাইনটস, এমএমপি সদর দফতর, জোনাল ডিসি অফিস, জোনাল ওসি অফিসের জন্য প্রয়োজনীয় জমি বরাদ্দ দেওয়ার আইজি থেকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।