নিজস্ব প্রতিবেদক: কোনো ধরনের মূল্য সংবেদনশীল তথ্য ছাড়াই বাড়ছে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত মুন্নু জুট স্টাফলার্সের শেয়ারদর। একশ্রেণির বিনিয়োগকারী বাছবিচার ছাড়া বিনিয়োগ করছেন এই কোম্পানিতে। যে কারণে এ শেয়ারের অস্বাভাবিক দরবৃদ্ধি থামছে না। বর্তমানে এ প্রতিষ্ঠানের শেয়ারদর গত দুই বছরের সর্বোচ্চ স্থানে অবস্থান করছে। আর এই সময়ের মধ্যে প্রতিটি শেয়ারদর বেড়েছে প্রায় ৪০০ শতাংশ। অথচ এর বিশেষ কোনো কারণ বলতে পারছে না খোদ কর্তৃপক্ষ।
নিয়ম অনুযায়ী, যে কোনো ধরনের মূল্য সংবেদনশীল তথ্যের ওপর নির্ভর করে দর বৃদ্ধি বা হ্রাস পায় তালিকাভুক্ত কোম্পানির শেয়ারের। সেই জন্য এ ধরনের খবরের প্রত্যাশায় থাকেন বিনিয়োগকারীরা। কিন্তু বর্তমানে বাজারে এর উল্টো চিত্র পরিলক্ষিত হচ্ছে। মন্দা বাজারেও কিছু প্রতিষ্ঠানের শেয়ারদর লাগামহীনভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর মধ্যে মুন্নু জুট স্টাফলার্স একটি।
প্রতিষ্ঠানটির সাম্প্রতিক লেনদেন চিত্রে দেখা যায়, গত এক মাসে এই প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দর বেড়েছে প্রায় ২২ শতাংশ। ছয় মাসের হিসাবে তা ১৮৮ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। ছয় মাস আগে এ শেয়ারদর ছিল ৬৭০ টাকা। বর্তমানে এ শেয়ার লেনদেন হচ্ছে এক হাজার ৯৩৪ টাকা ৪০ পয়সায়।
অন্যদিকে গত দুই বছরের হিসাব করলে দেখা যায়, তালিকাভুক্ত এ প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দর বেড়েছে ৩৬৪ দশমিক ৯০ শতাংশ। দুই বছর আগে প্রতিষ্ঠানের প্রতিটি শেয়ার লেনদেন হয় ৪১৬ টাকায়। এরপর থেকে টাকা বাড়তে থাকে এর দর, যা অস্বাভাবিক মনে হয়েছে সাধারণ বিনিয়োগকারী থেকে শুরু করে বাজারসংশ্লিষ্ট সবার। এটি নজর এড়ায়নি ডিএসই ও সিএসই কর্তৃপক্ষ। ফলে কোম্পানিটির কাছে কয়েক দফা দরবৃদ্ধির কারণ জানতে চেয়েছে স্টক এক্সচেঞ্জ কর্তৃপক্ষ। জবাবে প্রতিবারই কোম্পানি জানিয়েছে, তাদের কাছে শেয়ারদর বৃদ্ধি পাওয়ার মতো কোনো সংবেদনশীল তথ্য নেই।
এদিকে প্রতিষ্ঠানের শেয়ারদর বৃদ্ধির পেছনে কারসাজি চক্রের হাত রয়েছে বলে মনে করছেন বাজারসংশ্লিষ্টদের। তাদের অভিমত, কোনো চক্রের হাত না থাকলে কারণ ছাড়া শেয়ারদর এভাবে বাড়তে পারে না।
জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ডিএসইর একজন কর্মকর্তা বলেন, কারসাজি চক্রই কৃত্রিমভাবে এ প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দর বাড়চ্ছে। যে কারণে কোনো ব্যাকরণ ছাড়াই এর শেয়ারদর বাড়ছে। সাধারণ বিনিয়োগকারীরা এই শেয়ার নিয়ে একসময় বিপাকে পড়বেন বলেও অভিমত প্রকাশ করেন তিনি।
এদিকে প্রতিষ্ঠানটি দর বৃদ্ধি পাওয়ার মতো সন্তোষজনক লভ্যাংশ দিচ্ছে না শেয়ারহোল্ডারদের। ২০১৬ সালে প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারহোল্ডারদের ১৫ শতাংশ করে বোনাস শেয়ার প্রদান করে। এর আগের বছর ১০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ প্রদান করে প্রতিষ্ঠানটি।
প্রতিষ্ঠানটি ১৯৮২ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। মোট শেয়ারের মধ্যে ৫৪ দশমিক ৭৩ শতাংশ শেয়ার রয়েছে পরিচালকদের কাছে। বাকি শেয়ারের ৩৮ দশমিক ৪৮ শতাংশ শেয়ার রয়েছে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে। এছাড়া প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে ছয় দশমিক ৭৬ এবং বিদেশিদের কাছে শূন্য দশমিক শূন্য তিন শতাংশ শেয়ার রয়েছে।
জানতে চাইলে প্রতিষ্ঠানটির সচিব বিনয় পাল শেয়ারবিজকে বলেন, আমাদের হাতে কোনো নতুন প্রজেক্ট কিংবা সংবেদনশীল তথ্য নেই। এরপরও কেন ঝুঁকি নিয়ে বিনিয়োগকারীরা এই শেয়ারের দর বাড়াচ্ছে, তা আমার জানা নেই।
দুবছরে ৪০০ শতাংশ বেড়েছে মুন্নু জুট স্টাফলার্সের শেয়ারদর
