রহমত রহমান: করোনায় টালমাটাল বিশ্ব অর্থনীতি। পিছিয়ে নেই বাংলাদেশ। দেশে করোনা সনাক্ত হয় মার্চের প্রথম সপ্তাহে। এর পরপরই বন্ধ হয়ে বেশিরভাগ কলকারখানা, দোকানপাট, শপিংমলসহ সকল প্রতিষ্ঠান। বিকিকিনি আর শিল্পের চাকা স্থবিরের সাথে ধাক্কা লাগে ভ্যাট আহরণে। করোনার ঝুঁকি উপেক্ষা করে ধীরে ধীরে খুলছে সব প্রতিষ্ঠান।
চলতি অর্থবছর শেষ হতে আর মাত্র দু’মাস বাকি। ভ্যাট লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হলে এ দুই মাসে প্রায় ৪১ হাজার কোটি টাকা আহরণ করতে হবে। সাধারণ ছুটি আর লকডাউনের মধ্যেও কিছু বড় খাত চালু ছিল। বিশেষ করে সিগারেট, মোবাইল, ব্যাংক, মোবাইল ব্যাংকিং, ইন্টারনেট, ওষধ, খাদ্য প্রভূতি।
## সিগারেট, মোবাইল, ব্যাংক, মোবাইল ব্যাংকিং, ইন্টারনেট, ওষধে নজর দিতে নির্দেশনা
## বড় প্রতিষ্ঠানের সাথে নিবিড় যোগাযোগ স্থাপন, বকেয়া আদায়ের নির্দেশ
## করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে কৌশল নির্ধারণের নির্দেশনা
লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে এনবিআরের চোখ এসব খাতের দিকে। বাকি দুই মাসে করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে পারে। অথবা পরিস্থিতি আরো অবনতি হতে পারে। এসব মাথায় রেখেই বড় এসব খাত থেকে বাকি দুই মাসে বিশাল অঙ্কের এ ভ্যাট আহরণের কৌশল নির্ধারণে ভ্যাট কমিশনারদের নির্দেশনা দিয়েছে এনবিআর।
রোববার (১০ মে) ‘মে-জুন এ দুই মাসে যথাযথ রাজস্ব আহরণ ও লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বিশেষ প্রচেষ্টা চালাতে’ নির্দেশনা দেওয়া হয়। এনবিআরের সদস্য (মূসক বাস্তবায়ন ও আইটি) মো. জামাল হোসেন সই করা নির্দেশনা জারি করা হয়েছে।
নির্দেশনায় বলা হয়, ২০১৯-২০ অর্থবছরে আর মাত্র এক মাস ১৯ দিন অবশিষ্ট আছে। চলতি অর্থবছরে ভ্যাট এর সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা এক লাখ ৮ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। এপ্রিল পর্যন্ত আমাদের আহরিত রাজস্বের পরিমাণ ৬৭ হাজার ৭৫৯ কোটি ৭৬ লাখ টাকা।
আরো পড়ুন-রাজস্বে আশা দেখাবে সিগারেট, ঔষধ, সুপারশপ, মোবাইল [1]
আরো পড়ুন-করোনার প্রথম মাসেই রাজস্ব নেই ১২ হাজার কোটি টাকা [2]
গত অর্থবছর একই সময় ৮৭ হাজার ১৭৫ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। গত অর্থবছরের একই সময়ের সমান রাজস্ব আহরণ করতে হলে চলতি বছরের বাকি দুই মাসে ১৯ হাজার ৪১৬ কোটি টাকা রাজস্ব আহরণ করতে হবে।
অপরদিকে, সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হলে মে ও জুন মাসে আহরণ করতে হবে ৪০ হাজার ৮৪০ কোটি ২৪ লাখ টাকা। সাম্প্রতিক পরিস্থিতি আমরা সবাই অবগত আছি। এই পরিস্থিতি এই রকমও থাকতে পারে, আবার উন্নতিও হতে পারে। পরিস্থিতি যাই হোক আমাদের এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে প্রয়োজনীয় কৌশল নির্ধারণ করে এগিয়ে যেতে হবে।
আরো বলা হয়, এ প্রেক্ষাপটে বেশি রাজস্ব প্রদান করে এমন আইটেম যেমন সিগারেট, মোবাইল, ব্যাংক, মোবাইল ব্যাংকিং (বিকাশ, নগদসহ) ইন্টারনেট, ওষধ ইত্যাদির উপর নির্ভর করতে হবে। অর্থাৎ বড় বড় প্রতিষ্ঠানের সাথে নিবিড় যোগাযোগ স্থাপন করতে হবে। এছাড়া উৎসে কর্তিত ভ্যাট আহরণ ও বকেয়া রাজস্ব আদায়ে বিশেষ মনোযোগী হতে হবে।
এনবিআর সূত্র জানায়, এনবিআরের ভ্যাটসহ রাজস্ব আহরণের সবচেয়ে বড় খাত মোবাইল ফোন অপারেটর। লকডাউনে বন্ধ হয়নি মোবাইল অপারেটরদের সেবা। বরং সংক্রমণ রোধে মানুষ ঘরে রয়েছে। এসময় মানুষ অনেকটাই মোবাইল নির্ভর হয়ে পড়েছে।
বিশেষ করে মোবাইলে ইন্টারনেট ব্যবহার কয়েকগুণ বেড়ে গেছে। বেড়েছে মোবাইল কলসহ সব ধরনের সেবা। ফলে অন্য যেকোন সময়ের চেয়ে এসবয় এ খাত থেকে সরকার রাজস্ব বেশি পাবে। সেজন্য এ খাতের দিকেও বিশেষ নজর দিচ্ছে এনবিআর।
অন্যদিকে, অবরুদ্ধের সময় যেকোন খাদ্যের চাহিদার সাথে পাল্লা দিয়ে সরবরাহ বেড়েছে। ফলে খাদ্য পণ্য থেকে রাজস্ব আসবে। সীমিত আকারে খোলা রয়েছে ব্যাংকিং সেবা। তবে অল্প সময় ব্যাংক হলে প্রচুর লেনদেন হচ্ছে।
ব্যাংকিং সেবার পাশাপাশি কয়েকগুণ বেড়েছে মোবাইল ব্যাংকিং। এছাড়া ইন্টারনেট সার্ভিস, বিভিন্ন পণ্যের পরিবেশক, খাদ্য সরবরাহ, মিডিয়া, এনজিওসহ আরো বেশ কিছু খাত থেকে রাজস্ব এসময় রাজস্ব আসবে বলে মনে করছেন এনবিআর কর্মকর্তারা।
এনবিআর কর্মকর্তারা বলেন, করোনার কারণে যেসব প্রতিষ্ঠান ও ব্যবসা খাত বন্ধ আছে, সেসব খাত থেকে রাজস্ব কমতে পারে। তাই যেসব প্রতিষ্ঠান খোলা আছে, সেখান থেকে বেশি রাজস্ব আসতে পারে। এমন বিবেচনায় সুপারশপের দিকে নজর দিয়েছে এনবিআর। লকডাউনের মধ্যে বন্ধ হয়নি সুপারশপ। বরং বিক্রি স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে বেড়েছে ২০-৩০ গুণ। ফলে সুপারশপ থেকে ভ্যাট আহরণ বাড়তে পারে।
শুধু সুপারশপ নয়; করোনা পরিস্থিতিতে সিগারেট ও ওষুধ উৎপাদন বিপণন থেমে নেই। করোনার ফলে ওষধ উৎপাদন, বিপণন কয়েকগুণ বেড়েছে। ফলে এ দু’খাত থেকে স্বাভাবিক যেকোন সময়ের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি রাজস্ব আহরণ হতে পারে। এসব খাতের দিকে নজর দিতে কমিশনারদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
অপরদিকে, প্রতিটি কমিশনারেটের আওতাধীন বিপুল পরিমাণ বকেয়া রাজস্ব রয়েছে। বিশেষ করে মামলা আটকা। অনেক মামলায় রায় হলেও বকেয়া আদায় হচ্ছে। আগামী দু’মাসে প্রতিটি কমিশনারেট বকেয়া আদায়ে মনোযোগী ভ্যাট লক্ষ্যমাত্রা অর্জন অসম্ভব হবে না বলে মনে করেন এনবিআর কর্মকর্তারা।###