দুর্গাপূজার ছুটিতে কক্সবাজার ও কুয়াকাটায় বেড়েছে পর্যটক

প্রতিনিধি, কক্সবাজার ও কুয়াকাটা: দুর্গাপূজা উপলক্ষে টানা চারদিনের ছুটিতে লাখো পর্যটকে মুখর কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত। তিল ধারণের ঠাঁই নেই সৈকতে। সাগরতীরজুড়ে শুধু পর্যটক আর পর্যটক। নোনাজলে সব বয়সের মানুষ মেতেছে আনন্দ-উল্লাসে। সেইসঙ্গে প্রিয় মুহূর্তগুলো উপভোগ করছেন প্রিয়জনের সঙ্গে। পর্যটন ব্যবসায়ীরা বলছেন, টানা ছুটিতে কয়েকশ’ কোটি টাকার ব্যবসা হবে। গতকাল শুক্রবার সরেজমিনে দেখা যায়, সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত সৈকতের লাবণী পয়েন্ট থেকে কলাতলী পয়েন্ট পর্যন্ত লোকে লোকারণ্য ছিল। টানা ছুটিতে সৈকতে এসেছেন প্রায় ২ লাখ পর্যটক। উত্তাল সমুদ্রে গোসল, বালুচরে দৌড়ঝাঁপের পাশাপাশি তারা ছুটে বেড়াচ্ছেন জেলার পর্যটন পল্লীগুলোতে। তবে এবার বিপুল পর্যটকের কারণে হোটেল-মোটেল ও রিসোর্টে অগ্রিম বুকিং বন্ধ করে দিয়েছেন পর্যটন ব্যবসায়ীরা।
কক্সবাজারে বেড়াতে আসা পর্যটক রুবেল হোসেন বলেন, অনেকদিন ধরে ঘরবন্দি ছিলাম। তার মধ্যে পার্বত্য এলাকাগুলোতে ভ্রমণ নিষিদ্ধ আছে। তাই পরিবার নিয়ে কক্সবাজারে বেড়াতে আসলাম। তবে মানুষের ভিড় বেশি হওয়ায় একটু অস্বস্তিবোধ করছি।


আরেক পর্যটক ফয়সাল আরেফিন বলেন, এই বছর সবচেয়ে বেশি লম্বা ছুটি পেলাম। তাই পরিবারের সদস্যদের নিয়ে কক্সবাজার আসলাম। খুব ভালো লাগছে। রোহান নামে আরেক পর্যটক বলেন, সকালে বাস থেকে নেমেছি। নামার পর থেকে হোটেল খুঁজছি। কিন্তু সব বুকিং বলছে। কী করব, বুঝতে পারছি না।
কক্সবাজার হোটেল মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার বলেন, আমাদের হোটেলের প্রায় রুম বুকিং আছে। আমরা পর্যটকদের সর্বোচ্চ সেবা দিচ্ছি। পর্যটকের এই চাপ আগামী কয়েকদিন থাকবে।
কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে পর্যটকদের নিরাপত্তায় নিয়োজিত সি সেইফ লাইফ গার্ডের ইনচার্জ ওসমান গণি বলেন, কক্সবাজার এই মুহূর্তে অর্ধলাখ পর্যটক আছেন। বিকালে চাপ আরও বাড়বে। আমাদের জনবল কম হাওয়ায় সামাল দিতে একটু হিমশিম খেতে হচ্ছে।

কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের পর্যটন সেলের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তানভীর হোসেন বলেন, পর্যটকদের নিরাপত্তায় আমরা কাজ করে যাচ্ছি। পাশাপাশি যৌথবাহিনী কাজ করছে। কোনো পর্যটক হয়রানির শিকার হলে, অভিযোগ পেলে আমরা সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নিচ্ছি। আমাদের প্রতিনিধি, কুয়াকাটা (পটুয়াখালী) জানান, দীর্ঘদিন পর কুয়াকাটা সৈকতে পর্যটকদের ঢল নেমেছে। বৃহস্পতিবার বিকাল থেকেই পর্যটকদের আনাগোনা বেড়েছে সৈকতের বিভিন্ন পয়েন্টে। শারদীয় দুর্গাপূজা আর সাপ্তাহিক বন্ধকে সামনে রেখে চার দিনের সরকারি ছুটিতে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরেছে সাগরকন্যা কুয়াকাটায়।

এ বিষয়ে কুয়াকাটা হোটেল-মোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মোতালেব শরীফ বলেন, ‘দীর্ঘদিন পরে কুয়াকাটায় পর্যটকদের আনাগোনা বাড়ছে। রাজনৈতিক অস্থিরতা ও যোগাযোগ ব্যবস্থা স্বাভাবিক থাকলে সারা বছর পর্যটকদের আনাগোনা থাকবে কুয়াকাটায়। অনেক দিন পরে আমাদের ব্যস্ততা বেড়েছে। আশা করি, সামনের দিনেও এমন দৃশ্য চোখে পড়বে।’ সরেজমিন দেখা যায়, কুয়াকাটার জিরো পয়েন্ট থেকে শুরু করে আশপাশের এক কিলোমিটার জায়গাজুড়ে পর্যটকদের হই-হুল্লোড়। কেউ সমুদ্রের বুকে ঝাঁপিয়ে পড়ছেন, কেউবা আবার দল বেঁধে সাঁতার কাটছেন। আনন্দ উপভোগের দৃশ্য স্মৃতিপটে ধারণের জন্য কেউ আবার ছবি তুলছেন।

তবে সৈকতের বেহালদশা দেখে হতাশ আগত পর্যটকরা। তারা বলছেন, এত সুন্দর সৈকতের এমন বিশ্রি অবস্থা! যত্রতত্র পড়ে আছে জিওটিউব আর জিওব্যাগ। এসবের মাঝে উপভোগ করা যায় না আসল সৌন্দর্য।
এ বিষয়ে পর্যটক হাসান মাহমুদ মিয়াত বলেন, ‘আমি এ-ই প্রথম কুয়াকাটায় বেড়াতে আসলাম। সৈকত আর সাগরের ঢেউ আমাকে বেশ মুগ্ধ করেছে। তবে জিওটিউব ও জিওব্যাগ ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকায় সৈকতটি শ্রীহীন হয়ে পড়েছে।’ অন্যদিকে পর্যটকদের আনাগোনা বাড়ায় ব্যস্ততা দেখা গেছে কুয়াকাটার সব রেস্তোরাঁসহ পর্যটননির্ভর ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে। হোটেল-মোটেলের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাদের আবাসিক হোটেলে বুকিং ভালো আছে। পর্যটকদের উপস্থিতিতে স্বস্তি ফিরছে। তাদের আশা, এখন থেকে এমন পর্যটকদের আনাগোনা থাকলে তারা সংকট কাটিয়ে উঠবেন শিগগিরই।

এ বিষয়ে বেস্ট সাউদার্ন আবাসিক হোটেলের জেনারেল ম্যানেজার আবুল কালাম বলেন, ‘টানা ছুটিতে আমাদের আবাসিক হোটেল শতভাগ রিজার্ভেশন হয়েছে। অনেকদিন পরেই এমন পর্যটক আসলেন কুয়াকাটায়। আমরা তাদের চাহিদাকে সব সময়ই অগ্রাধিকার দিই।’ পর্যটক আগমনে বেচাবিক্রি বেড়েছে সৈকত লাগোয়া ব্যবসায়ীদের। আগের চেয়ে ব্যস্ততা বেড়েছে। চা বিক্রেতা সোহেল বলেন, ‘গতকাল থেকে চোখে পড়ার মতো পর্যটক কুয়াকাটায় আসছেন। বিক্রি বাড়ছে। আশা করি, ঘাটতি পুষিয়ে উঠতে পারব।’
সৈকতের ক্যামেরাম্যান জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘গতকাল থেকেই মোটামুটি পর্যটক আসা শুরু হয়েছে। আজ ভালোই পর্যটক বাড়ছে। আমরা আমাদের সংকট কাটাতে পারব।’

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০