সাইফুল আলম, চট্টগ্রাম: গত বুধবার চট্টগ্রামের জিরি সুবেদার শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ডে কাজ করার সময় আহত হন শ্রমিক মো. মফিজ মিয়া (৪০)। গতকাল বৃহস্পতিবার তিনি মৃত্যুবরণ করেছেন। এর আগে ২০১৯ সালের ৩১ আগস্ট বিকালে দুর্ঘটনায় দুজন শ্রমিক নিহত ও ১৩ জন শ্রমিক আহত হওয়ার ঘটনায় জিরি সুবেদার জাহাজ ভাঙা কারখানাটির কার্যক্রম একবার বন্ধও করে স্থানীয় প্রশাসন। তবু টনক নড়েনি কর্তৃপক্ষের, বারবার দুর্ঘটনা ঘটলেও কর্মপরিবেশের উন্নতি হয়নি।
প্রসঙ্গত চট্টগ্রামের জিরি সুবেদার গ্রুপের চেয়ারম্যান ও মেঘনা ব্যাংকের পরিচালক লোকমান হাকিমের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান জিরি সুবেদার শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ড ও জিরি সুবেদার স্টিল রি-রোলিং মিলস।
হাসপাতালে দায়িত্বরত জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, জাহাজ ভাঙা ব্যবসায়ী লোকমান হাকিমের মালিকানাধীন সীতাকুণ্ড উপজেলায় জিরি সুবেদার শিপইয়ার্ডে গত বুধবার কাজ করার সময় আহত হন শ্রমিক মো. মফিজ মিয়া। দুপুরে তাকে উদ্ধার করে বেসরকারি সাউদার্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হওয়ায় গতকাল দুপুরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে আনা হলে জরুরি বিভাগের চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। নিহত মফিজ মিয়া ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলার বালাকোট এলাকার মৃত মোতাহের মিয়ার ছেলে।
হাসপাতালে দায়িত্বরত জেলা পুলিশের এএসআই আলাউদ্দিন তালুকদার জানান, শিপইয়ার্ডে কাজ করার সময় লোহার রডে আঘাত পান মফিজ। পরে সাউদার্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে বৃহস্পতিবার দুপুরে চমেক হাসপাতালে আনা হয়। চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
সীতাকুণ্ড প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান সূত্রে জানা গেছে, জিরি সুবেদার স্টিল রি-রোলিং মিলে ২০১৯ সালের ৩১ আগস্ট বিকালে দুর্ঘটনায় দুই শ্রমিক নিহত ও ১৩ শ্রমিক আহত হন। এ দুর্ঘটনায় পরিবেশ সুরক্ষা, দুর্ঘটনার কারণ ও অন্যান্য বিষয়ে তদন্ত করার জন্য শিল্প মন্ত্রণালয়ের বিশেষ পরিদর্শক দল ইয়ার্ডে আসেন। তারা এ ইয়ার্ডের কার্যক্রম পরিদর্শন করে তাৎক্ষণিক বন্ধের সিদ্ধান্ত দেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পরদিন কারখানাটি শিল্প মন্ত্রণালয়ের এক নির্দেশে বন্ধ ঘোষণা করেন।
পরিবেশ অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম অঞ্চলের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, দেশের শিপব্রেকিং ইয়ার্ডগুলোয় সাধারণত পুরোনো জাহাজ ভাঙার জন্য অনুমোদন থাকে। কিন্তু চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের ভাটিয়ারিতে মেসার্স জিরি সুবেদার স্টিল রি-রোলিং মিলস লিমিটেড নামের শিপইয়ার্ডে পরিবেশগত ছাড়পত্রের শর্তভঙ্গ করে বার্জ নির্মাণের অভিযোগ পাওয়া যায়, যা সরেজমিনে পরিদর্শন করে অভিযোগের সত্যতা পান অভিযানকারী দল। এ বার্জ নির্মাণ করার ফলে পরিবেশ দূষণ করেছে প্রতিষ্ঠানটি। এ দায়ে ২০১৯ সালের ২ মার্চ জিরি সুবেদার স্টিল রি-রোলিং মিলসকে ২০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। শুনানি শেষে এ জরিমানার আদেশ দেন পরিবেশ অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম অঞ্চলের পরিচালক মোহাম্মদ মোয়াজ্জেম হোসাইন। তার স্বাক্ষরিত এক নোটিসে জরিমানার বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়।
পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো বলছে, শিপব্রেকিং ও রিসাইক্লিং আইন এবং পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে নিরাপদ ও প্রশিক্ষিত শ্রমিকদের মাধ্যমে জাহাজকাটার নির্দেশনা না মানায় এ ধরনের দুর্ঘটনা ঘটছে। এতে দেশে ও বিদেশে জাহাজ পুনঃপ্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা হচ্ছে। শিল্প মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুসরণ না করায় এ ধরনের দুর্ঘটনা ঘটছে।
জিরি সুবেদার স্টিল রি-রোলিং মিলসের উদ্যোক্তা পরিচালক লোকমান হাকিম অসুস্থতাজনিত কারণে হাসপাতালে থাকায় মন্তব্য নেয়া যায়নি।
উল্লেখ্য, লোকমান হাকিম ১৯৯৪ সালে জিরি সুবেদার রি-রোলিং মিলস লিমিটেড প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ব্যবসা শুরু করেন। এরপর জাহাজ ভাঙা প্রতিষ্ঠান জিরি সুবেদার শিপব্রেকিং ইয়ার্ড, ফেরদৌস স্টিল করপোরেশন, নাহার স্টিল, নাহার ট্রেডিং করপোরেশন, সুবেদার অক্সিজেন প্রভৃতি প্রতিষ্ঠা করেন। এসব প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ে গড়ে তোলন জিরি সুবেদার গ্রুপ। �