দুর্ঘটনা মোকাবিলায় সক্ষমতা নেই ৮০% ব্যাংকের

নিজস্ব প্রতিবেদক: সাইবার হামলা, অগ্নিকাণ্ডসহ বিভিন্ন সময়ে নানা ধরনের দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে ব্যাংক খাত। এর বিপরীতে এসব দুর্ঘটনা মোকাবিলায় রয়েছে দক্ষ জনবলের অভাব। দেশের ৮০ শতাংশ ব্যাংকই এসব দুর্ঘটনা মোকাবিলায় অক্ষম। এছাড়া ৪০ শতাংশ ব্যাংকের ডেটা সুরক্ষায় ব্যাক-আপ নেই। এতে ৭৫ শতাংশ ব্যাংকের আইটি ম্যানেজমেন্ট সঠিক সেবা দিতে পারবেন কি না, প্রতিদিন সে ভয়ে থাকেন।

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের (বিআইবিএম) এক গবেষণা প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর মিরপুরে বিআইবিএম অডিটরিয়ামে ‘ডিজাস্টার রিকভারি ম্যানেজমেন্ট ইন অনলাইন ব্যাংকস: চ্যালেঞ্জ অ্যান্ড রিমেডিয়াল মেজারস’ শীর্ষক কর্মশালায় এ গবেষণা প্রতিবেদন তুলে ধরা হয়। কর্মশালায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর আবু হেনা মোহা. রাজী হাসান।  কর্মশালায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন পূবালী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও বিআইবিএমের সুপারনিউমারারি অধ্যাপক হেলাল আহমেদ চৌধুরী, বিআইবিএমের সুপারনিউমারারি অধ্যাপক এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক ইয়াছিন আলি, সাউথইস্ট ব্যাংকের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক এসএম মাঈনুদ্দিন চৌধুরী, বাংলাদেশ ব্যাংকের ইনফরমেশন সিস্টেম ডেভেলপমেন্ট ডিপার্টমেন্টের মহাব্যবস্থাপক দেবদুলাল রায় প্রমুখ।

কর্মশালায় গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন বিআইবিএমের সহযোগী অধ্যাপক সিহাব উদ্দীন খানসহ চার সদস্যের একটি গবেষণাদল। দেশের ২৭টি ব্যাংকের ওপর এ জরিপ পরিচালনা করা হয়। এর মধ্যে বেসরকারি খাতের ২০টি, রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংক দুটি, বিশেষায়িত বাণিজ্যিক ব্যাংক দুটি এবং বিদেশি বাণিজ্যিক ব্যাংক তিনটি।

গবেষণা প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির যুগে দ্রæত জনপ্রিয় হচ্ছে অনলাইন ব্যাংকিং। তবে দুর্ঘটনা বা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় অনলাইন ব্যাংকিংয়ে ১১টি চ্যালেঞ্জ রয়েছে।  যার মধ্যে তথ্যের সঠিক উন্নয়নের চ্যালেঞ্জ রয়েছে ৬০ শতাংশ ব্যাংকে; দক্ষ জনবলের অভাব ৮০ শতাংশ ব্যাংকে;  আইটি এবং সাধারণ ব্যাংকিং বিভাগের মধ্যে সমন্বয় সাধনের অভাব রয়েছে ৮০ শতাংশ ব্যাংকে; দুর্ঘটনা ব্যবস্থাপনায় তহবিলের অভাব রয়েছে ৪৫ শতাংশ ব্যাংকে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর আবু হেনা মোহা. রাজী হাসান বলেন, ‘দুর্ঘটনা বা বিপর্যয় ঘটলে অনলাইন ব্যাংকিংয়ের সুরক্ষায় বিকল্প ব্যবস্থা রাখতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক এ বিষয়ে গাইডলাইন তৈরি করেছে। গ্রাহকদের স্বার্থে গাইডলাইনের পুরোপুরি বাস্তবায়ন করতে হবে।’

কর্মশালায় বিআইবিএমের সুপারনিউমারারি অধ্যাপক এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক ইয়াছিন আলি বলেন, ‘ব্যাংকিং খাতে দুর্ঘটনা ব্যবস্থাপনার বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের অডিট সিস্টেম বাড়াতে হবে। এছাড়া জেনারেল ব্যাংক কর্মকর্তাদের আইটি নলেজ থাকতে হবে।’

পূবালী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক হেলাল আহমেদ চৌধুরী বলেন, ‘ব্যাংক খাতের আইটি কর্মকর্তাদের ব্যাংক ব্যবসায়ের নিয়মকানুন সম্পর্কে ধারণা থাকতে হবে। একই সঙ্গে শাখা ব্যবস্থাপকদের আরও ভালো ধারণা থাকতে হবে।’

বিআইবিএমের সহযোগী অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান আলম বলেন, ‘ব্যাংকগুলোর আইটি ব্যবস্থাপনা এখনও অনেক দুর্বল। একটি ব্যাংকের প্রধান ঝুঁকি অফিসার সব দিকে সতর্ক হলেও আইটি বিষয়ে সতর্ক নন। এছাড়া আমাদের দেশে ব্যাংকের ম্যানেজমেন্টের সঙ্গে আইটি বিভাগের দূরত্ব পদ্মা নদীর মতো। এখানে কোনো সেতুবন্ধ নেই।’

বাংলাদেশ ব্যাংকের ইনফরমেশন সিস্টেম ডেভেলপমেন্ট ডিপার্টমেন্টের জিএম দেবদুলাল রায় বলেন, ‘আইটি কর্মকর্তাদের ঘটনা এবং দুর্ঘটনা সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান থাকতে হবে।’

কর্মশালায় মুক্ত আলোচনায় বক্তারা বলেন, ব্যাংকের জনশক্তি সম্পর্কিত কোনো গাইডলাইন বাংলাদেশ ব্যাংকের নেই। এ বিষয়ে একটি গাইডলাইন করা প্রয়োজন। একটি ব্যাংক চালাতে আসলে কতজন জনশক্তি প্রয়োজন, সেটা গাইডলাইনের মাধ্যমে জানা যাবে।

 

 

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০