দুর্নীতিতে জড়িত থাকার অভিযোগ: দক্ষিণ কোরিয়ার পার্লামেন্টারি শুনানিতে নয় কোম্পানি প্রধান

 

শেয়ার বিজ ডেস্ক: স্যামসাং, হুন্দাই মোটর, লোটেসহ দক্ষিণ কোরিয়ার সবচেয়ে বড় ৯টি কোম্পানির (কনগ্লোমারেট) প্রধানদের জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন দেশটির সংসদ সদস্যরা। প্রেসিডেন্ট পার্ক জিউন হাইয়ের সহযোগিতা পেতে তার বান্ধবী চাই সুন-সিলকে চাঁদা দেওয়ার বিষয়ে এসব ব্যবসায়ীকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। দক্ষিণ কোরিয়ার ইতিহাসে এটি সবচেয়ে বড় পার্লামেন্টারি শুনানি। খবর বিবিসি।

১৮ জন সংসদ সদস্য এ শুনানিতে কনগ্লোমারেট নেতাদের জিজ্ঞাসাবাদ করেন। এদের মধ্যে প্রেসিডেন্ট পার্কের দল সেনুরি পার্টির ৯ জন, বাদবাকি ৯ জন বিরোধী দলের সদস্য। প্রেসিডেন্টের সচিবালয় ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের হলফনামা উপস্থাপনের মাধ্যমে শুনানি শুরু হয়। আজ বুধবার শুনানিতে ডাকা হবে প্রেসিডেন্টের কয়েকজন পদত্যাগী সহযোগীকে। তার বান্ধবীর পরিবারের সদস্যদেরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। শুনানি শেষে শুক্রবার প্রেসিডেন্টের অভিশংসনের প্রশ্নে পার্লামেন্টে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।

প্রেসিডেন্টের বান্ধবী চাই সুন-সিল দক্ষিণ কোরিয়ার ৫৩টি কোম্পানি থেকে ৬৫ কোটি ৭০ লাখ ডলার চাঁদা আদায় করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। দেশটির ১৯টি কনগ্লোমারেট এসব কোম্পানির মালিক। প্রেসিডেন্ট পার্ক জিউন হাইর অনুরোধে তারা চাই সুন-সিলকে চাঁদা দিয়েছেন কি না, সংসদ সদস্যরা সে বিষয়ে জানতে চান। চাঁদার বিনিময়ে কনগ্লোমারেটগুলো সরকারের কাছে কোনো রকম সুবিধা চেয়েছে কি না, সে ব্যাপারেও প্রশ্ন করা হয়।

ব্যক্তিগত লাভের লক্ষ্যে পুরোনো বন্ধুকে সুবিধা পাইয়ে দিতে রাজনৈতিক ক্ষমতা ও প্রভাব-প্রতিপত্তি অপব্যবহারের অভিযোগে বিপর্যস্ত হয়ে আছেন পার্ক। তাকে ক্ষমতা থেকে সরে দাঁড়ানোর জন্য বিরোধী দলগুলো রাজপথে দীর্ঘদিন ধরে বিক্ষোভ করছেন। পার্ক পদত্যাগে বাধ্য হলে তা হবে দক্ষিণ কোরিয়ার ইতিহাসে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত কোনো প্রেসিডেন্টের জন্য মেয়াদ পূর্ণ করতে না পারার ঘটনা।

ইতোমধ্যে দুর্নীতির ঘটনায় দেশটির প্রেসিডেন্টের ওই বন্ধুকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। গত সপ্তাহে তাকে অভিযুক্ত করে প্রসিকিউটররা বলেছেন, তিনি সরকারের বিভিন্ন কৌশল নির্ধারণে মধ্যস্থতা করেছেন এবং প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সম্পর্কের সূত্র ধরে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হয়েছেন। প্রেসিডেন্টের আরেকজন সহযোগীকে গোপন নথি প্রকাশের দায়ে অভিযুক্ত করা হয়েছে।

আলোচিত এই দুর্নীতির ঘটনা ‘চোই-গেট কেলেঙ্কারি’ নামেও পরিচিত। ওয়াটারগেট কেলেঙ্কারির আদলে এ নামকরণ করা হয়েছে।

গতকাল যাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে, তাদের মধ্যে সবচেয়ে বড় ধনকুবের হলেন স্যামসাং ইলেকট্রনিকস  কোম্পানির ভাইস চেয়ারম্যান জে ই লি। সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোয়  বেশ কয়েকবার স্যামসাং সদর দফতর ও কোরিয়ার ন্যাশনাল পেনশন সার্ভিস (এনপিএস) কার্যালয়ে তল্লাশি চালানো হয়েছে। লি পরিবারের বাইরে স্যামসাংয়ে সবচেয়ে বড় শেয়ারহোল্ডার হচ্ছে এনপিএস। অন্যগুলোর মধ্যে লোটে গ্রুপের চেয়ারম্যান শিন দং বিন এবং এসকে গ্রুপের কর্ণধার চে তাই ওনকেও আজকের শুনানিতে ডাকা হয়েছে।

বিশ্বের দশম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ দক্ষিণ কোরিয়া। দেশটির অর্থনীতির জন্য সামগ্রিকভাবে এ বছর ভালো যায়নি। একের পর এক কোরীয় কনগ্লোমারেট নানা কারণে বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে। বহুল আলোচিত নোট৭ স্মার্টফোন বিস্ফোরণের কারণে স্যামসাং ইলেকট্রনিকসকে বিপুল পরিমাণ পণ্য বাজার থেকে প্রত্যাহার করতে হয়েছে। আর্থিক ক্ষতি ছাড়াও স্যামসাংকে ইমেজ সংকটের মোকাবিলা করতে হচ্ছে।

দক্ষিণ কোরিয়ার বৃহত্তম ও বিশ্বের সপ্তম বৃহত্তম নৌপরিবহন কোম্পানি হানজিন শিপিং লাইনস ভেঙে পড়েছে। দক্ষিণ কোরিয়ার বৃহত্তম রিটেইলার লোটে গ্রুপের কর্ণধারকে বিনিয়োগকারীদের বিশ্বাসভঙ্গের জন্য প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে হয়েছে।

জাহাজ নির্মাণ সংস্থা স্যামসাং, হুন্দাই, এসটিএক্স; গাড়ি নির্মাতা হুন্দাই ও ইস্পাত কোম্পানি পসকো পুনর্গঠন প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে। করপোরেট কোরিয়ার এই দুর্দশার মধ্যে বাড়তি শঙ্কার কারণ হয়ে এসেছে কোরীয় পরিবারগুলোর রেকর্ড পরিমাণ ঋণ।

ব্যাংক অব কোরিয়ার গভর্নর লি জু-ইয়োল বলেছেন, রেকর্ড পরিমাণ গৃহস্থালি ঋণ আর্থিক স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।

পারিবারিক মালিকানাধীন কনগ্লোমারেটগুলো দক্ষিণ  কোরিয়ায় চাইবল নামে পরিচিত। চাইবল ওই দেশের অর্থনীতির প্রসারে কাণ্ডারির ভূমিকা রেখেছে। বিভিন্ন সময়ে চাইবল কর্ণধাররা বিতর্কিত হলেও কোরিয়া সরকার তাদের পৃষ্ঠপোষকতা ও সুরক্ষা দিয়েছে। এবারই প্রথম দেশটির সবকয়টি বড় চাইবল মালিককে একসঙ্গে প্রকাশ্যে আসতে বাধ্য করা হয়েছে।

 

 

 

Add Comment

Click here to post a comment

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০