দুর্নীতির তথ্য দিন, ব্যবস্থা নেব: প্রধানমন্ত্রী

শেয়ার বিজ ডেস্ক: কোথায় কোথায় দুর্নীতি হচ্ছে, সেই তথ্য দেয়ার আহ্বান জানিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দুর্নীতি নিয়ে যে কথা বলে, আমি তো পার্লামেন্টে বলেছি, কোথায় দুর্নীতি হচ্ছে আমাকে তথ্য দিন, আমি ব্যবস্থা নেব। দুর্নীতিগ্রস্তদের কাছ থেকে দুর্নীতি নিয়ে কথা শুনতে হয় বলেও তিনি মন্তব্য করেন। গতকাল শনিবার আওয়ামী লীগের জাতীয় পরিষদ, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ এবং উপদেষ্টা পরিষদের যৌথসভার মুলতবি বৈঠকে তিনি এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারি বাসভবন গণভবনে এ বৈঠক হয়। এর আগে গত ৭ জানুয়ারি গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে এ যৌথসভা হয়। পরে তা মুলতবি করা হয়। খবর: বাংলা ট্রিবিউন।

দুর্নীতির কথা শুধু মুখে মুখে বললে হবে না বলে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, এখন এমন এমন লোকজনের কাছ থেকে আমাকে দুর্নীতির কথা শুনতে হচ্ছে, যারা নিজেরাই দুর্নীতিগ্রস্ত, যাদের আমলে দুর্নীতিতে বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। অথবা কেউ বলতে গেলে ওই ক্ষুদ্রঋণের ব্যবসা করতে গিয়ে গরিব মানুষের ওপর এমন চাপ দিয়েছে যে, সুদ দিতে দিতে তাদের অনেক সময় বাড়িঘর ছেড়ে এলাকা থেকে চলে যেতে হয়েছে। অথবা আত্মহত্যা করতে হয়েছে।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের প্রতি ইঙ্গিত করে সরকারপ্রধান বলেন, এই গরিব মানুষের টাকা দিয়েই কিন্তু দেশে নামটাম করে, কিন্তু বেশ ভালোই আছে এবং প্রচুর অর্থ-সম্পদের মালিক। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বিনিয়োগও করে ফেলেছেন। এই টাকাগুলো গরিবের রক্তচোষা টাকা। এটা তো বাস্তব কথা।

বিগত সময়ে সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন কাজের ফিরিস্তি তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা যা যা চেয়েছিলেন, আমরা সেগুলো কিন্তু একে একে করে দিচ্ছি মানুষকে। তার যে স্বপ্নটা, সেটাই বাস্তবায়ন করা আমাদের লক্ষ্য। এত কাজ করার পরও কিছু লোক আছে তাদের কোনোকিছু ভালো লাগে না।

আওয়ামী লীগ ওয়াদা রক্ষা করে বলে মন্তব্য করে দলটির সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, আমরা কথা দিয়েছি, যখনই নির্বাচনে ইশতেহার হয়, প্রতি বাজেটে নির্বাচনের ইশতেহার সামনে রেখে আমরা পরিকল্পনা নিই। পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা যখন করি, সেখানেও আমাদের ঘোষণাপত্র, আমাদের নির্বাচনী ইশতেহার মাথায় রেখে, সামনে রেখেই আমরা কিন্তু করি। অর্থাৎ যে ওয়াদা জাতিকে দিই, সেটা আমরা রক্ষা করি।

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ যেটা বলে, মানুষের জন্য যে ওয়াদা করে, সে ওয়াদা আওয়ামী লীগ রক্ষা করে। এটা হলো বাস্তবতা। সার কথা হলো, আওয়ামী লীগ যে কথা দেয়, আওয়ামী লীগ সে কথা রাখে। জাতির কল্যাণে আমরা কাজ করি এবং মানুষ তার শুভ ফল পাচ্ছে।

দেশকে এগিয়ে নিতে সরকারের বিভিন্ন কার্যক্রমের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের নিজের পায়ে দাঁড়ানোর চিন্তা করতে হবে। আমাদের দেশের মানুষ যেন মাথা তুলে চলতে পারে।

তিনি বলেন, গত ১৪ বছরে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বাংলাদেশের যে পরিবর্তন ঘটেছে, আমি জানি এটা অনেকেই নিতে পারে না, নানা ধরনের কথা রটায়। কিন্তু মানুষের জীবনযাত্রায় পরিবর্তন এসেছে। এছাড়া রাস্তাঘাটসহ যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি আমরা করেছি। এটাকেও অনেকেই স্বীকার করতে চায় না, করতে চাইবেও না।

টানা ১৪ বছর সরকারে থাকায় ধারাবাহিক উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে মানুষের জীবনমান উন্নতি হয়েছে বলে দাবি করে সরকারপ্রধান বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্বব্যাপী দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে মানুষের অসুবিধা হচ্ছে। আমাদের দেশেও যাদের একেবারে নির্দিষ্ট বেতনে চলতে হয়, তাদের জন্য কষ্ট হচ্ছে, সেটা আমরা বুঝি। সেজন্য বিদেশ থেকে অনেক টাকা খরচ করে খাবার কিনে নিয়ে আসছি। ভর্তুকি মূল্যে সেটা দিচ্ছি। তিনি বলেন, আমি জানি না বাংলাদেশে আর কোনো সরকার এভাবে জনগণের কল্যাণে কাজ করেছে কি না।

দেশে বেকার থাকার সুযোগ নেই মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘কেউ ইচ্ছে করলে বেকার থাকতে পারে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে বেকার থাকার কোনো সুযোগ নেই, কারণ আমরা এত সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছি। ফ্রিল্যান্সিংয়ের মাধ্যমে অনেক ছেলেমেয়ে এখন গ্রামে বসে টাকা উপার্জন করছে। কাজেই এভাবে যত সুযোগ আছে আমরা করে দিয়েছি।

বাংলাদেশ নিয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের কথা মাথায় রেখেই আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার তৈরি করা হয় বলে উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা। ভূমিহীনদের নিয়ে সরকার জরিপ করছে বলেও জানান তিনি। তাদের ঘর নির্মাণ করে দেয়ার কথাও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। দলীয় নেতাকর্মীদের ’৭০ সালের নির্বাচনে দেয়া বঙ্গবন্ধুর বক্তব্য পড়ার নির্দেশনা দেন আওয়ামী লীগ সভাপতি।

অনাবাদি জমিতে আবাদ করার পরামর্শ দিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, আমি আমার এলাকায় (টুঙ্গিপাড়া-কোটালিপাড়া) খুঁজে দেখলাম প্রায় ১০ হাজার বিঘা জমি আছে অনাবাদি। আমাদের কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে অনাবাদি জমিতে আবাদ করার একটা প্রকল্প নেয়া হয়েছে। কিন্তু প্রকল্পের বাইরেও অনেক জমি রয়ে গেছে। আমি উদ্যোগ নিয়েছি, আমার ওখানে যত অনাবাদি জমি রয়েছে, সেখানে আধুনিক প্রযুক্তি দিয়ে আবাদ করা। সেখানে শ্রমিকের পাশাপাশি যন্ত্রের ব্যবহারও হচ্ছে। এভাবে সবাই শুরু করলে বাংলাদেশের মানুষের খাদ্যের অভাব হবে না। উৎপাদন করে বাইরেও রপ্তানি করতে পারব।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০