নিজস্ব প্রতিবেদক: দুর্নীতির ধারণা সূচকে এবার ঊর্ধ্বক্রম অনুসারে বাংলাদেশের অবস্থান ১৪৫তম। আগের বছর ১৬৮টি দেশের মধ্যে এ অবস্থান ছিল ১৩৯তম। এ বছর বাংলাদেশের স্কোর ১ পয়েন্ট বেড়ে ২৬ হয়েছে। আবার নিন্মক্রম হিসেবে সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের তালিকায় গতবার বাংলাদেশের অবস্থান ১৩তম ছিল। এবার তা ১৫তম। সূচক অনুযায়ী ১০০-এর মধ্যে ৪৩ স্কোরকে গড় স্কোর বিবেচনা করা হলেও বাংলাদেশের ২০১৬ সালের স্কোর ২৬ পয়েন্ট। অর্থাৎ সার্বিক অবস্থানে বাংলাদেশ খুবই সামান্য এগোলেও দুর্নীতির ব্যাপকতা এখনও উদ্বেগজনক।
জার্মানির বার্লিনভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল (টিআই) বিশ্বের ১৭৬টি দেশ ও অঞ্চলের ২০১৬ সালের দুর্নীতির পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে এ সূচক প্রকাশ করেছে। গতকাল বুধবার রাজধানীর মাইডাস সেন্টারে
টিআই’র বাংলাদেশি চ্যাপ্টার ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য প্রকাশ করা হয়।
ধারণা সূচক বিশ্লেষণ করে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘শীর্ষ দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের যে তালিকা তাতে নিচের দিকে থাকা দেশের তালিকার বিচারে বাংলাদেশের উন্নতি হলেও সার্বিক বিচারে বাংলাদেশ বরং পিছিয়েছে। দুর্নীতি সূচকে ভালো থেকে খারাপ, এ তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ১৪৫। অথচ এর আগের বছর বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১৩৯। অর্থাৎ সে ক্ষেত্রে কিন্তু ছয় ধাপ অবনতি হয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান শুধু আফগানিস্তানের ওপরে।’
তিনি বলেন, ‘অবস্থান পরিবর্তন বাংলাদেশকে এগিয়ে ধরা গেলেও তা কোনো বিশেষ গুরুত্ব বহন করে না, এ বছর নতুন নতুন দেশ যোগ হয়েছে। এতে বাংলাদেশের অবস্থানের অনেকটা পরিবর্তন এসেছে। ফলে র্যাংকিং বাড়লো কি কমলো, এর ওপর ধারণা করে দুর্নীতি বাড়াকমা সঠিক করে বলা যাবে না।’
তিনি স্কোরটাই গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে বলেন, ‘বাংলাদেশের স্কোর এবার এক পয়েন্ট বেড়ে ২৬ হয়েছে। যদিও কোনো দেশের স্কোর যদি ৪৩ হয়, তাহলেই বলা যায় যে সে দেশ মধ্যম পর্যায়ে। সেই দেশ দুর্নীতি প্রতিরোধ করতে সক্ষম হচ্ছে। সেখানে বাংলাদেশের স্কোর সেখান থেকে অনেক কম। তাছাড়া ২০১৩ সাল থেকে বাংলাদেশের স্কোর এক জায়গায় ঘুরপাক খাচ্ছে।’
প্রসঙ্গত, বিশ্বব্যাংক, আফ্রিকান উন্নয়ন ব্যাংক, আইএমডিসহ ১৩টি আন্তর্জাতিক জরিপ থেকে নেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে টিআই দুর্নীতির এ ধারণা সূচক তৈরি করে। সূচকে ১০০ স্কোরের ভিত্তিতে মূল্যায়নকৃত শূন্য স্কোরকে দুর্নীতির ব্যাপকতার ধারণায় সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত এবং সর্বোচ্চ স্কোরকে কম দুর্নীতিগ্রস্ত বা সর্বোচ্চ সুশাসনের দেশ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
টিআই’র প্রতিবেদন অনুযায়ী, সর্বোচ্চ ৯০ স্কোর নিয়ে তালিকায় সবচেয়ে ভালো অবস্থানে আছে ডেনমার্ক ও নিউজিল্যান্ড। এর পরে রয়েছে ফিনল্যান্ড, সুইডেন, সুইজারল্যান্ড, নরওয়ে, সিঙ্গাপুর, নেদারল্যান্ডস, কানাডা, জার্মানি, লুক্সেমবার্গ ও ব্রিটেন। অন্যদিকে তালিকায় সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় থাকা সোমালিয়ার স্কোর এবার ১০। এরপরে রয়েছে যথাক্রমে দক্ষিণ সুদান, উত্তর কোরিয়া, সিরিয়া, লিবিয়া, ইয়েমেন, সুদান, আফগানিস্তান, ভেনিজুয়েলা ও ইরাক। আগের বছরের প্রতিবেদনে সোমালিয়ার সঙ্গে সবচেয়ে বাজে অবস্থানে ছিল উত্তর কোরিয়া। অন্যদিকে সবচেয়ে কম দুর্নীতির দেশ হিসেবে এককভাবে শীর্ষে ছিল ডেনমার্ক।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে টিআইবি’র চেয়ারপারসন সুলতানা কামাল, ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য এম হাফিজউদ্দিন খান ও আলী ইমাম মজুমদার, উপনির্বাহী পরিচালক সুমাইয়া খায়ের, পরিচালক (আউটরিচ অ্যান্ড কমিউনিকেশনস) রিজওয়ান উল আলম উপস্থিত ছিলেন।
Add Comment