নিজস্ব প্রতিবেদক: দুর্নীতির বিরুদ্ধে সব স্তরের মানুষ যেন সোচ্চার হতে ও ভূমিকা পালন করতে পারে, তার উপযুক্ত পরিবেশ নিশ্চিতে সরকারকে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। একইসঙ্গে অন্তর্ভুক্তিমূলক টেকসই অভীষ্টের কার্যকর বাস্তবায়নে অভীষ্ট ১৬-এর ওপর সর্বাধিক প্রাধান্য নিশ্চিতসহ চলমান দুর্নীতিবিরোধী অভিযানের বাস্তব সুফল নিশ্চিতে প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত ‘কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না’ অঙ্গীকার বাস্তবায়ন করতে হবে।
জাতিসংঘ ঘোষিত ৯ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবস উপলক্ষে গতকাল রোববার বিকাল ৩টায় রাজধানীর মানিক মিয়া এভিনিউয়ে জাতীয় সংসদ ভবনের সামনে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) এবং দেশের ৪৫টি অঞ্চলে স্থানীয় পর্যায়ে টিআইবির অনুপ্রেরণায় গঠিত সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) আয়োজিত দুর্নীতিবিরোধী মানববন্ধনে এসব দাবি তুলে ধরা হয়। ‘অন্তর্ভুক্তিমূলক টেকসই উন্নয়ন: দুর্নীতির বিরুদ্ধে একসাথে’ প্রতিপাদ্যে এ বছর দিবসটি উদ্যাপন করছে টিআইবি।
মানববন্ধনে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান এবারের দুর্নীতিবিরোধী দিবস উদ্যাপনের প্রেক্ষাপটকে ব্যতিক্রমী বলে উল্লেখ করে বলেন, ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগে চলমান অভিযান দেশবাসীর মনে আশার সঞ্চার করেছে। তবে দুর্নীতির বিরুদ্ধে এ লড়াইয়ের গুরুদায়িত্ব প্রধানমন্ত্রীর একার নয়, এজন্য দুর্নীতি প্রতিরোধের দায়িত্বপ্রাপ্ত দুর্নীতি দমন কমিশনসহ (দুদক) সংশ্লিষ্ট সব প্রতিষ্ঠানকে ভয় বা করুণার ঊর্ধ্বে থেকে সব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে অভিযুক্তদের ন্যায়বিচার নিশ্চিতপূর্বক দুর্নীতি প্রতিরোধের দায়িত্ব পালনে সচেষ্ট হতে হবে। এক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার তিনটি মূল বিষয় দুর্নীতির বিরুদ্ধে শূন্য সহনশীলতা, দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত কাউকে ছাড় না দেওয়া ও সংশ্লিষ্ট অভিযান ক্ষমতাসীন দল থেকেই শুরু করা। এ ঘোষণা সরকারের রাজনৈতিক সদিচ্ছার বহিঃপ্রকাশ, যা দুদকসহ সব আইন প্রয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের জন্য কারও প্রতি ভয় বা করুণার ঊর্ধ্বে থেকে দায়িত্ব পালনে সহায়ক হবে।’
মানববন্ধনে টিআইবি উত্থাপিত অন্যান্য দাবির মধ্যে রয়েছেÑ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন’ ও ‘ফরেন ডোনেশনস (ভলান্টারি অ্যাক্টিভিটিস) রেগুলেশন অ্যাক্ট’-এর নিবর্তনমূলক ধারাসমূহ এবং ‘সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮’-এর বিতর্কিত ধারাসমূহ বাতিল করা; ব্যাংক খাতে দুর্নীতি ও জালিয়াতি এবং আর্থিক কেলেঙ্কারির সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্যক্তিদের বিচারের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করে এ খাতে প্রয়োজনীয় সংস্কার প্রস্তাবনা প্রণয়নের জন্য একটি স্বাধীন ব্যাংকিং কমিশন গঠন করা; বিচার ব্যবস্থা, প্রশাসন ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থায় সমন্বিত ও পরিপূরক কৌশল গ্রহণ এবং সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রধান ও সদস্যদের নিয়োগে যোগ্যতার মাপকাঠি নির্ধারণ এবং স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় নিয়োগ নিশ্চিত করা; তথ্য অধিকার আইন, ২০০৯-এর কার্যকর প্রয়োগের উপযুক্ত পরিবেশ, বিশেষ করে তথ্যের আবেদনকারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা; জনস্বার্থসংশ্লিষ্ট তথ্য প্রকাশ (সুরক্ষা প্রদান) আইন, ২০১১’ বাস্তবায়নের জন্য একটি সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টি ও এ আইন সম্পর্কে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানোর বিভিন্ন কর্মসূচি নিতে হবে; দুর্নীতি প্রতিরোধে দুদককে শক্তিশালী করতে হবে।