Print Date & Time : 21 June 2025 Saturday 2:48 pm

দুর্নীতি মামলায় নওয়াজ শরিফের ১০ বছর জেল

শেয়ার বিজ ডেস্ক: দুর্নীতি মামলায় পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফকে ১০ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন দেশটির একটি আদালত। গতকাল শুক্রবার দেশটির দায়বদ্ধতা আদালত-১-এর বিচারক মোহাম্মদ বশির এই রায় দেন। এর আগে গত বছর সুপ্রিমকোর্টের রায়ে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে অযোগ্য ঘোষণার পর পদত্যাগ করেছিলেন নওয়াজ।
পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম জিওটিভি জানায়, নওয়াজের সঙ্গে তার মেয়ে মরিয়মকেও সাত বছরের কারাদণ্ডের সাজা দিয়েছেন আদালত। সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর শ্যালক ক্যাপ্টেন অবসরপ্রাপ্ত সফদারকে এক বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এছাড়া নওয়াজকে ৮০ লাখ এবং মরিয়মকে ২০ লাখ ব্রিটিশ পাউন্ড জরিমানা করা হয়েছে।
বেশ কয়েক দিন ধরে শুনানির পর শুক্রবার এই রায় ঘোষণা করা হয়। শুক্রবার তিনবার সময় পাল্টানোর পর স্থানীয় সময় সাড়ে ৩টায় রায় ঘোষণা করেন বিচারক। রায় ঘোষণার সময় বিচারক দুই পক্ষের আইনজীবীকে চেম্বারে ডাকেন। সেখানে কোনো সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিকে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। রায় ঘোষণার বিলম্বের কারণ সম্পর্কে বিচারক জানান, রায়ের কপি বিতরণে ফটোকপি করা প্রয়োজন ছিল। এজন্যই দেরি হয়েছে।
দেরিতে রায় ঘোষণার জন্য গত বৃহস্পতিবার আদালতে আবেদন জানিয়েছিলেন নওয়াজের আইনজীবী। আগামী সপ্তাহে লন্ডন থেকে নওয়াজ দেশ ফিরবেন এই যুক্তিতে ওই আবেদন করা হলে বিচারক বশির তা খারিজ করে দেন।
স্ত্রী বেগম কুলসুম নওয়াজের চিকিৎসার জন্য গত ১৪ জুন সপরিবারে লন্ডন যান নওয়াজ শরিফ। অ্যাভেনফিল্ড এলাকার বাসায় বসে মেয়ে মরিয়ম আর সাবেক অর্থমন্ত্রী ইসহাক ধরের সঙ্গে বসে মামলার রায় ঘোষণা শোনেন তিনি। আর তার শ্যালক অবসরপ্রাপ্ত ক্যাপ্টেন সফদার আসন্ন ২৫ জুলাই পাকিস্তানের সাধারণ নির্বাচনের প্রচারণায় খায়বার পাখতুন প্রদেশের মানেসরা এলাকায় ছিলেন। সেখান থেকেই রায় শুনেছেন তিনি।
লন্ডনের সূত্রের বরাত দিয়ে জিওটিভির খবরে বলা হয়েছে, রায় শোনার পর স্ত্রীকে নিয়ে হারলি স্ট্রিট ক্লিনিকে রওনা দেন নওয়াজ। রায় ঘোষণার আগে মেয়ে মরিয়ম এক টুইটার বার্তায় নওয়াজকে পিএমএলএন-এর সিংহ অভিহিত করে বলেন, রায় যাই হোক না কেন কোনো কিছুতেই ছাড় দেওয়া হবে না।
পরে আরেক টুইটে তিনি লেখেন, ‘এসব কোনো কিছুই নওয়াজ শরিফের জন্য নতুন নয়, অতীতে নির্বাসন, অযোগ্যতা এমনকি যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ সামলেছেন তিনি।’
আর নির্বাচনি প্রচারণায় নওয়াজের শ্যালক সফদার বলেছেন, রায় ঘোষণাকে ভয় পান না তিনি।
এদিকে বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, লন্ডনে চারটি বিলাসবহুল ফ্ল্যাট কেনাকে কেন্দ্র করে নওয়াজ শরিফের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ আনা হয়। এই মামলার রায় গতকাল সকালেই ঘোষণা করার কথা ছিল, কিন্তু আদালত কয়েক দফা পিছিয়ে বিকালের পর রায় ঘোষণা করেন। নওয়াজ শরিফ বরাবরই দুর্নীতির এই অভিযোগকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে দাবি করে আসছেন।
উল্লেখ্য, নব্বইয়ের দশকে লন্ডনে পার্ক লেনের অ্যাভেনফিল্ড হাউসে চারটি বিলাসবহুল ফ্ল্যাট কেনে নওয়াজের পরিবার। পাকিস্তানের জাতীয় জবাবদিহি সংস্থা ন্যাশনাল অ্যাকাউন্টিবিলিটি ব্যুারোর (এনএবি) কৌঁসুলি আদালতকে বলেন, নওয়াজ এই ফ্ল্যাটগুলি কেনার অর্থের বৈধ আয় দেখাতে পারেননি। যদিও নওয়াজের পরিবারের দাবি, বৈধ আয়ের অর্থ দিয়ে এসব ফ্ল্যাট কিনেছেন তারা। তবে এনএবির জিজ্ঞাসাবাদে এসব ফ্ল্যাট কেনার বিষয়ে নওয়াজের পরিবারের সদস্যরা ভিন্ন রকম তথ্য দেন।
২০১৫ সালে পানামা পেপারস কেলেঙ্কারিতে নাম আসে নওয়াজের। ওই সময় জানা গিয়েছিল, বেশ কয়েকটি অফশোর কোম্পানির সঙ্গে নওয়াজ শরিফের ছেলেমেয়েদের যোগসূত্র রয়েছে। অভিযোগ আছে, এই কোম্পানিগুলোকে ব্যবহার করে বিদেশে অর্থপাচার করা হয়েছে এবং বিদেশে নানা সম্পদ কেনা হয়েছে। আলোচনায় ছিল লন্ডনে কেনা এই বিলাসবহুল ফ্ল্যাটগুলোও। শেষতক সেই ফ্ল্যাটের কারণেই কারাদণ্ড হলো নওয়াজ ও তার মেয়ের।
আদালতের রায়ে বলা হয়েছে, ফ্ল্যাট কেনার অর্থের বৈধ উৎস দেখাতে ব্যর্থ হয়েছেন নওয়াজ। আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের দায়ে তাকে ১০ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। এ ছাড়া এনএবিকে অসহযোগিতা করা দায়ে দেওয়া হয়েছে এক বছরের কারাদণ্ড। তবে দুটি সাজা একই সঙ্গে চলবে। তাই নওয়াজকে ১০ বছর কারাগারে থাকতে হবে।
অন্যদিকে অবৈধ কর্মকাণ্ডে উৎসাহ দেওয়ার কারণে সাজা পেয়েছেন নওয়াজকন্যা মরিয়ম। এ জন্য তাকে দেওয়া হয়েছে সাত বছরের কারাদণ্ড। আবার এনএবিকে অসহযোগিতা করা দায়ে দেওয়া হয়েছে এক বছরের কারাদণ্ড। তবে দুটি সাজা একই সঙ্গে চলায় মরিয়মকে সাত বছর কারাগারে থাকতে হবে। আর তার স্বামী ক্যাপ্টেন সফদারকে এক বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে এনএবিকে অসহযোগিতা করার দায়ে।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির খবরে বলা হয়েছে, দুর্নীতির অভিযোগে নওয়াজ শরিফের বিরুদ্ধে মোট চারটি মামলা হয়েছে। শুক্রবার যে মামলাটির রায় হয়েছে, তা এগুলোরই একটি। এই মামলার প্রায় শতাধিক শুনানিতে অংশ নিতে হয়েছিল নওয়াজ ও তার মেয়েকে। লন্ডনে বসে সরাসরি মামলার রায় শোনার কথা তাদের। নওয়াজের দুই ছেলে হাসান ও হুসেইনেও সেখানে আছেন। তবে ক্যাপ্টেন সফদার পাকিস্তানে থাকলেও আদালতে হাজির হননি।
পানামা পেপারস কেলেঙ্কারিতে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সরে যেতে হয়েছিল নওয়াজ শরিফকে। দেশের সর্বোচ্চ আদালত তাকে অযোগ্য ঘোষণা করেছিলেন। আদালত তাকে রাষ্ট্রীয় যে কোনো পদে আজীবন নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন। পরে আদালতের রায়ে দলীয় প্রধানের পদও ছাড়তে হয় নওয়াজকে।