ঝুঁকি বেশি থাকায় অনেক বিনিয়োগকারী সেকেন্ডারি মার্কেটের চেয়ে প্রাইমারি মার্কেটকে নিরাপদ মনে করেন। তারা ঝুঁকিবিহীন রিটার্ন আশা করেন। কিন্তু এখন প্রাইমারি মার্কেটটি ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। আইপিও’র মাধ্যমে বাজারে আসা বেশিরভাগ কোম্পানি দুই থেকে তিন বছরের মাথায় ‘জেড’ ক্যাটেগরিতে নেমে যাচ্ছে। কোনো কোনো কোম্পানিকে তালিকাচ্যুত করা হচ্ছে; আবার কোনো কোনোটি দেউলিয়া হয়ে গেছে। প্রশ্ন হচ্ছে, এ ধরনের কোম্পানিকে নিয়ন্ত্রক সংস্থা কীভাবে বা কীসের ভিত্তিতে বাজারে অন্তর্ভুক্ত করার অনুমোদন দিল। গতকাল এনটিভির মার্কেট ওয়াচ অনুষ্ঠানে বিষয়টি আলোচিত হয়। হাসিব হাসানের গ্রন্থনা ও সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান এবং দি ডেইলি স্টারের বিজনেস এডিটর সাজ্জাদুর রহমান।
ড. মিজানুর রহমান বলেন, অনেক বিনিয়োগকারী সেকেন্ডারি মার্কেটের চেয়ে প্রাইমারি মার্কেটকে নিরাপদ মনে করেন। সেকেন্ডারি মার্কেটে ঝুঁকি বেশি থাকায় প্রাইমারি মার্কেটের প্রতি ঝোঁক বেশি। তারা ঝুঁকিবিহীন রিটার্ন আশা করেন। কিন্তু এখন প্রাইমারি মার্কেটটি ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। আইপিও’র মাধ্যমে বাজারে আসা বেশিরভাগ কোম্পানি দুই থেকে তিন বছরের মাথায় ‘জেড’ ক্যাটেগরিতে নেমে যাচ্ছে। কোনো কোনো কোম্পানি তালিকাচ্যুত হচ্ছে; আবার কোনো কোনোটি দেউলিয়া হয়ে গেছে। এ ধরনের কোম্পানিগুলোকে নিয়ন্ত্রক সংস্থা কীভাবে বা কীসের ভিত্তিতে বাজারে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য অনুমোদন দিল। আবার এখন মানি ও ক্যাপিটাল মার্কেটে তারল্য সংকট চলছে। এ সংকট অব্যাহত থাকলে অনেক ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান ব্যবসা চালিয়ে যেতে ব্যর্থ হতে পারে। তাই তারল্য সংকট উত্তরণে বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ নিতে হবে। আবার পুঁজিবাজারকে ম্যাক্রো অর্থনীতি থেকে বিচ্ছিন্নভাবে দেখার সুযোগ নেই। কারণ, মানি মার্কেটে যখন ইতিবাচক কোনো পরিবর্তন হয়, তখন সেটির ইতিবাচক প্রভাব পুঁজিবাজারেও দেখা যায়। আবার যখন মানি মার্কেটে সংকট দেখা দেয়, তখন তার প্রভাব ক্যাপিটাল মার্কেটেও পড়ে। কারণ, একটির সঙ্গে আরেকটি ওতপ্রোতভাবে জড়িত।
সাজ্জাদুর রহমান বলেন, সম্প্রতি বিএসইসি বাজার স্থিতিশীল রাখার জন্য বেশকিছু ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বিশেষ করে মিউচুয়াল ফান্ডে স্টকের পরিবর্তে নগদ লভ্যাংশ দিতে হবে, প্লেসমেন্ট শেয়ারে লগইন মেয়াদ এক বছর থেকে দুবছর করা হয়েছে, স্পন্সরদের শেয়ার চার বছর পর্যন্ত ধরে রাখতে হবে, সাধারণ বিনিয়োগকারীর জন্য আইপিও কোটা ৫০ শতাংশে উন্নীত করা হয়েছে। এছাড়া বিনিয়োগকারীদের করমুক্ত আয়সীমা ২৫ হাজার থেকে বাড়িয়ে ৫০ হাজার টাকা করা হয়েছে। আসলে বিষয়গুলোর জন্য বিএসইসি ও সরকার প্রশংসার দাবিদার। যেহেতু ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত কোনো কর দিতে হবে না, তাই যারা বিচক্ষণ বিনিয়োগকারী, তারা ব্যাংকে বিনিয়োগ না করে পুঁজিবাজারে ভালো কোম্পানি দেখে বিনিয়োগ করতে পারেন। কিন্তু এর কোনো সফলতা পুঁজিবাজার থেকে পাওয়া যাচ্ছে না। আবার দেশে আইনের অভাব নেই। কিন্তু সেগুলো সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে না। যেমন, পুঁজিবাজার-সংক্রান্ত আইনে বলা আছে: বাজারে অন্তর্ভুক্ত কোম্পানির পরিচালক বা স্পন্সরদের এককভাবে দুই শতাংশ এবং একত্রে ৩০ শতাংশ শেয়ার থাকতে হবে। এটি ২০১১ বা ২০১২ সালের সিদ্ধান্ত; কিন্তু এখনও বিষয়টি বাস্তবায়ন করা হয়নি। প্রশ্ন হচ্ছে, তাহলে নিয়ন্ত্রক সংস্থা কী করছে?
তিনি আরও বলেন, নিয়ন্ত্রক সংস্থার বর্তমান চেয়ারম্যান প্রায় আট থেকে ৯ বছর ধরে বাজারপ্রধানের দায়িত্বে রয়েছেন। গত ৯ বছর ধরে তিনি দায়িত্বে থাকা অবস্থায় বাজারকে গতিশীল অবস্থানে নিতে পারেননি। কিন্তু এ বিষয়ে কেন কোনো প্রশ্ন উঠছে না বা পরিবর্তনের কোনো আভাসও দেখা যাচ্ছে না।
শ্রুতিলিখন: শিপন আহমেদ