নতুন কোনো কোম্পানি বাজারে আসার আগে তাদের আর্থিক প্রতিবেদন আকর্ষণীয়ভাবে প্রকাশ করে, কিন্তু পুঁজিবাজারে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার দু-এক বছর পরে সেসব কোম্পানি আর খুঁজে পাওয়া যায় না। বাজারে নতুন কোম্পানি আনার ক্ষেত্রে ইস্যু ম্যানেজার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কিন্তু দুর্বল কোম্পানি আনার জন্য আজ পর্যন্ত তাদের কোনো শাস্তি দিতে দেখা যায়নি। গতকাল এনটিভির মার্কেট ওয়াচ অনুষ্ঠানে বিষয়টি আলোচিত হয়। মোশতাক আহমেদ সাদেকের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন পুঁজিবাজার বিশ্লেষক মাহমুদ হোসেন, এফসিএ ও ইকোনোমিক রিপোর্টার্স ফোরামের প্রেসিডেন্ট সাইফ ইসলাম দিলাল।
মাহমুদ হোসেন বলেন, বাজারে বিভিন্নভাবে কারসাজি হচ্ছে। বেশি কারসাজি হয় যখন নতুন কোনো কোম্পানি বাজারে আসে। তখন ওই কোম্পানি তাদের আর্থিক প্রতিবেদন আকর্ষণীয়ভাবে প্রকাশ করার পর বাজারে অন্তর্ভুক্ত হয়। কিন্তু কিছুদিন পরে ওইসব কোম্পানি বাজারে খুঁজে পাওয়া যায় না। পরে এসব কোম্পানি নিয়ে বিভিন্ন ধরনের প্রশ্ন ওঠে। আবার বাজারে কোম্পানি আনার ক্ষেত্রে ইস্যু ম্যানেজার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কিন্তু আজ পর্যন্ত তাদের কোনো শাস্তি দিতে দেখা যায়নি। বিনিয়োগকারীরা তাদের কষ্টে অর্জিত সঞ্চয় বাজারে বিনিয়োগ করে। কিন্তু বাজার যদি প্রতিনিয়ত এভাবে পড়তে থাকে এবং কারসাজি করে সাধারণ বিনিয়োগকারীর টাকা নিতে থাকে, তাহলে কীভাবে বিনিয়োগকারীরা আস্থা ফিরে পাবে এবং দৈনিক তিন হাজার কোটি টাকা লেনদেন হবে। আমরা বলি অর্থনীতি অনেক এগিয়ে যাচ্ছে। অর্থনীতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে পুঁজিবাজারের লেনদেন তিন হাজার কোটি টাকা হওয়া উচিত। অনেক অর্থনীতিবিদ ও পুঁজিবাজার বিশ্লেষক বলেন, পুঁজিবাজারকে স্বাভাবিক করতে হলে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান বিশেষ করে কেন্ত্রীয় ব্যাংক, বিএসইসি, ডিএসই, সিএসইসহ আরও যে প্রতিষ্ঠানগুলো রয়েছে, সেখানে নতুন নেতৃত্ব আনতে হবে। যারা উদ্যোগী, যোগ্য ও সৎ তাদেরকে আনতে হবে। ধার করা জ্ঞানে এ বাজারে তিন হাজার কোটি টাকা লেনদেন হওয়া সম্ভব নয়।
তিনি আরও বলেন, দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের জন্য পুঁজিবাজার থেকে অর্থ উত্তোলন করতে হবে এবং স্বল্পমেয়াদির জন্য ব্যাংক থেকে নিতে হবে। আসলে এটা কি সম্ভব হবে? কারণ দেশের ৬০ শতাংশ ব্যবসায়ীই এর সুবিধাভোগী। তাদের বিপরীতে এ আইন করলে তারা কতটুকু মেনে নেবেন, এটাই প্রশ্ন।
সাইফ ইসলাম দিলাল বলেন, পুঁজিবাজার হচ্ছে আস্থার জায়গা। এখানে বিনিয়োগকারীদের জোর করে আনা যাবে না। বাজারে আস্থা তৈরি করার দায়িত্ব কার? অবশ্যই নিয়ন্ত্রক সংস্থার। আর বাজারে প্রতিনিয়ত কারসাজি হচ্ছে। এজন্য দৃশ্যমান তেমন কোনো শাস্তি দিতে দেখা যায়নি এবং কারসাজি বন্ধে খুব একটা ভুমিকা রাখতে পারছে না। তবে হ্যাঁ, কারসাজিকারীদের শাস্তি হয়েছে। যেমন বাজার থেকে পাঁচ থেকে ৫০ কোটি টাকা নিলে তার বিপরীতে শাস্তিস্বরূপ পাঁচ থেকে ৫০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এটাকে আশানুরূপ কোনো শাস্তি বলা যায় না। প্রতিবেশী ভারতের পুঁজিবাজারে লক্ষ করলে দেখা যায়, ২০১১ সালে বাজারে কারসাজির কারণে আম্বানিকে ৫০ কোটি রুপি জরিমানা করা হয়েছিল এবং দুই বছর পুঁজিবাজারে নিষিদ্ধ করা হয়। এখানে সেটা দেখা যায় না। এক বছর ধরে বাজারে স্বল্পমূলধনি কোম্পানি নিয়ে আসছে যারা, তাদের দুর্বল কোম্পানি আনার জন্য দৃশ্যমান কোনো শাস্তি দেওয়া হচ্ছে না। আর ভালো কোম্পানি এলে অনেক ঝামেলায় পড়তে হয়। বাজার এখন কাদের দখলে? যদি বলি বাজার এখন জুয়াড়িদের দখলে, তাহলে বিনিয়োগকারীরা আসবে না। আস্থা ফিরে না এলে বাজারও ভালো হবে না। বাজার স্থিতিশীল রাখার জন্য নিয়ন্ত্রক সংস্থা এবং সরকার বিভিন্নভাবে চেষ্টা করছে। যতই চেষ্টা করা হোক না কেন কোনো লাভ হবে না, যদি কারসাজিকরীদের উপযুক্ত বা বড় ধরনের দৃশ্যমান শাস্তি না দেওয়া হয়। দেশে অনেক বেসরকারি ভালো মানের কোম্পানি রয়েছে এবং ওইসব কোম্পানি ভালো ব্যবসা করছে, কিন্তু বাজারে আসছে না।
শ্রুতিলিখন: শিপন আহমেদ