Print Date & Time : 17 June 2025 Tuesday 6:12 pm

দুর্বল-বিতর্কিত প্রতিষ্ঠানকে তালিকাভুক্তি নয়

 

সম্পদের তথ্য ও প্রিমিয়াম নিয়ে বিতর্কের মধ্যেই নাকি গত তিন বছরে বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান তালিকাভুক্ত হয়েছে স্থানীয় পুঁজিবাজারে। তবে সঠিকভাবে যাচাই-বাছাই না করায় তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বাড়লেও সামগ্রিক পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে কি না, সন্দেহ আছে তা নিয়ে। উল্টো তালিকাভুক্তির পর শেয়ারদর কমে যাওয়ায় ক্ষতির মুখে পড়েছেন বিনিয়োগকারীরা। তার মধ্যে পাঁচটি কোম্পানির শেয়ারদর এখনও ইস্যুমূল্যের নিচে অবস্থান করছে বলে খবর রয়েছে গতকালের শেয়ার বিজে। আমাদের প্রতিনিধি জানিয়েছেন, ২০১৩ সালের নভেম্বর থেকে চলতি বছর ৭ ফেব্রুয়ারির আগ পর্যন্ত ফিক্সড প্রাইস পদ্ধতিতে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়েছে ৪০টি প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে কমপক্ষে ১৮টি প্রতিষ্ঠান নিয়েছে অভিহিত মূল্যের সঙ্গে প্রিমিয়াম। খেয়াল করার মতো বিষয়, ২০১০-১১ সালে সৃষ্ট শেয়ারবাজার বিপর্যয়-পরবর্তী সময়ে এ ‘প্রিমিয়াম’ ও কিছু প্রতিষ্ঠানের দেওয়া সম্পদের তথ্য নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছিল। তার পরও অনুমোদন পায় একশ্রেণির প্রতিষ্ঠান। এদিকে তিন বছরের মধ্যে ওইসব প্রতিষ্ঠানের প্রকৃত হাল প্রস্ফুটিত হয়ে ওঠে বিনিয়োগকারীদের সামনে। বলার অপেক্ষা রাখে না, এ ঘটনায় হতাশ অনেক বিনিয়োগকারী; কেউ কেউ প্রতারিত বোধ করলেও অবাক হওয়া যাবে না। লক্ষণীয়, যে তিন বছরে ওই পাঁচ কোম্পানি দুরবস্থায় পতিত হয়েছে, সেই সময় সার্বিকভাবে পুঁজিবাজারে পরিলক্ষিত হয়েছে উন্নতি। তারে মানে, মৌলভিত্তি ঠিক থাকলে ইসু্যুমূল্যের নিচে নামতে পারতো না ওই প্রতিষ্ঠানের শেয়ারদর। প্রশ্ন হলো, তাহলে কী দেখে প্রতিষ্ঠানগুলোকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল? বিষয়টি বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) খতিয়ে দেখা উচিত।

নানা তরফ থেকে বারবারই বলা হচ্ছে, স্থিতিশীলতা দেখা দিলেও আমাদের পুঁজিবাজার এখনও স্বাভাবিক গতি ফিরে পায়নি। মাঝেমধ্যে অপ্রত্যাশিত উন্নতি ও অবনতি দেখা যাচ্ছে। সেগুলোর মধ্যে এখন পর্যন্ত কোনো বিধ্বংসী প্রবণতা দেখা যায়নি বলেই মত সিংহভাগ বিশেষজ্ঞের। দুর্ভাগ্যজনক হচ্ছে, স্থানীয় পুঁজিবাজারে হঠাৎ হঠাৎ এমন সব উন্নয়ন দেখা যাচ্ছেÑযেগুলো বেয়ার মার্কেট-পরবর্তী রূপান্তরমূলক সময়ের জন্য ঠিক উপযুক্ত নয়, বরং সন্দেহজনক। আবার আকস্মিকভাবে এমন তথ্য আবিষ্কার হচ্ছে, যার প্রভাবে লাভের আশায় বাজারে ভিড়তে থাকা ‘মুখপোড়া’ বিনিয়োগকারীরা বাজার থেকে পিঠটান দিচ্ছেন দ্রুত। কথা হলো, প্রতিটি পুঁজিবাজারেরই কিছু প্রাকৃতিক উপাদান থাকে; যেগুলো নিয়ন্ত্রণে আনা প্রায় অসম্ভব। তবে এর বেশিরভাগ উপাদানকেই নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব বলে অনেকের বিশ্বাস। উদাহরণ হিসেবে বলা যেতে পারে, মৌলভিত্তির দিক থেকে নড়বড়ে পঁাঁচটি প্রতিষ্ঠানকে বাজার থেকে পুঁজি উত্তোলনের অনুমোদন দেওয়া হলো, তা সহজেই রোধ করা যেত। জানা ব্যবসায় একটি প্রতিষ্ঠান তার ঘোষিত মডেল অনুযায়ী কত দূর যেতে পারে, তিন-চার বছরে তা অনুমান কঠিন নয়। এজন্য বিভিন্ন গাণিতিক মডেলই রয়েছে, যেগুলোয় পুরোপুরি না হলেও আংশিকভাবে ওই কোম্পানির স্বল্পমেয়াদি ভবিষ্যৎ নির্ণয় সম্ভব। অথচ অনুমোদন দেওয়ার আগে এসব প্রাথমিক প্রক্রিয়া যথাযথভাবে সম্ভব না হওয়ায় দেখা দিয়েছে বিপত্তি। তিন বছর পর আলোচিত কোম্পানির নেতিবাচক পারফরম্যান্স দেখে কেটে পড়ছেন বিনিয়োগকারীরা। এমন পরিস্থিতিতে এসইসি’র উচিত আইনানুগ কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া। পাশাপাশি ভবিষ্যতে কোনো দুর্বল বা বিতর্কিত কোম্পানি যেন প্রবেশ করতে না পারে, সে ব্যাপারে দৃষ্টি রাখতে হবে।