দুর্বার গতিতে চলছে রানার

আর্থিকভাবে সফল রানার গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ। এ গ্রুপের বিস্তারিত তুলে ধরেছেন শরিফুল ইসলাম পলাশ

আশির দশকের শুরুতে প্রতিষ্ঠানটির যাত্রা শুরু। সম্বল ছিল ২০ হাজার টাকা। দেড় যুগের চেষ্টার ফসল হিসেবে ২০০০ সালে রানার অটোমোবাইলসের পথচলা শুরু মোটরসাইকেল আমদানির মধ্যদিয়ে। আরও এক দশক পর বর্তমানে নিজ কারখানায় বাণিজ্যিকভাবে মোটরসাইকেল উৎপাদন করছে। পণ্যের মান ও সেবা সন্তোষজনক হওয়ায় দেশের ৮০ সিসির মোটরসাইকেলের বাজারের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে কোম্পানিটি শক্ত অবস্থান গড়ে তুলেছে। আর ওই প্রতিষ্ঠানকে কেন্দ্র করে প্রায় এক ডজন কোম্পানি নিয়ে আজকের ব্যবসাসফল রানার গ্রুপ।
শুনতে সহজ গল্পের মতো মনে হলেও অনেক চড়াই-উতরাই পেরিয়ে গ্রুপটিকে আজকের অবস্থানে আসতে হয়েছে ব্যবসায়ী গ্রুপটিকে। বহু প্রতিকূলতা কাটিয়ে অটোমোবাইলসের পাশাপাশি অন্য খাতেও ব্যবসা সম্প্রসারণ করেছে রানার গ্রুপ।
বর্তমানে তাদের অঙ্গপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে রানার মোটরস লিমিটেড, রানার প্রপার্টিজ লিমিটেড, রানার ল্যান্ড ডেভেলপমেন্ট লিমিটেড, রানার অয়েল অ্যান্ড গ্যাস লিমিটেড, রানার লুব অ্যান্ড এনার্জি, রানার এগ্রো প্রোডাক্টস লিমিটেড, রানার সিস্টেম টেকনোলজি, রানার ব্রিকস লিমিটেড ও বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়।
ব্যবসা সফল রানার গ্রুপের কর্ণধার হাফিজুর রহমান খান। তিনি ১৯৫৫ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি রাজশাহীতে জš§গ্রহণ করেন, পৈতৃক নিবাস নওগাঁয়। বাবা মরহুম কোরেশ আলী খান। মা মরহুমা পরিজান নেসা। নওগাঁয় উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। অসচ্ছল পরিবারে বড় হলেও চাকরির প্রতি কোনো আগ্রহ ছিল না তার। সব সময়ই নিজের মতো করে কিছু করার চেষ্টা করতেন তিনি। পরিবারের কথা চিন্তা করে পড়ালেখা শেষে চাকরি নিলেও সেখানে মন বসাতে পারেননি। এরপর ব্যবসায়ী হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে পূরণে চাকরি ছেড়ে ব্যবসায় নামেন। শুরুতে পুঁজি ছিল মাত্র ২০ হাজার টাকা। সাহস ও পরিশ্রমের মিশেলে ১৯৮৩ সালে একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। এরপর ধীরে ধীরে সফল উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ী হয়ে ওঠা।
রানার গ্রুপের এগিয়ে চলার পাথেয় পণ্যের মান ও বিক্রয়োত্তর সেবা। এজন্য সময়োপযোগী পদক্ষেপ নিয়েছে তারা। যেমন স্থানীয়ভাবে মোটরসাইকেলের ইঞ্জিন ও পার্টস তৈরির জন্য চীনা কোম্পানি ডায়াংয়ের সঙ্গে ১০ বছরমেয়াদি চুক্তি করেছে রানার অটোমোবাইলস। নিজস্ব মডেলের মোটরসাইকেল উৎপাদনে সব ধরনের কারিগরি ও গবেষণা সহায়তা দিচ্ছে ডায়াং। রানার অটোমোবাইলসের কারখানা ময়মনসিংহের ভালুকায়। বর্তমানে সেখানে ৮০ থেকে ১২৫ সিসির মোটরসাইকেল তৈরি হচ্ছে। শিগগির ১৫০ সিসি মোটরসাইকেল বাজারে আনার পরিকল্পনাও শেষ পর্যায়ে রয়েছে। বর্তমানে দেশে ৮০ সিসির মোটরসাইকেলের বাজার রানারের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। গ্রুপের আরেক কোম্পানি রানার ব্রিকস অবকাঠামো খাতের উন্নয়নে কোরিয়ার প্রযুক্তিগত সহায়তায় গড়ে উঠেছে। এককথায় বললে, গ্রুপটির প্রত্যেকটি কোম্পানি-ই পণ্য উৎপাদন, বিপণন ও বিক্রয়োত্তর সেবার ক্ষেত্রে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার ও গবেষণার ওপর জোর দিচ্ছে। ভবিষ্যতে আরও বহুদূর যেতে চায় গ্রুপটি।
বর্তমানে রানার গ্রুপে প্রায় এক হাজার ৯০০ কর্মী কর্মরত। কর্মীদের পেশাগত দক্ষতা বাড়াতে দেশ ও দেশের বাইরে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নেয় প্রতিষ্ঠানটি। সব কর্মী ও পরিবারের সদস্যদের চিকিৎসাসেবাও নিশ্চিত করছে রানার গ্রুপ। এ গ্রুপের কর্মচারীদের সন্তানদের লেখাপড়ায় উৎসাহ দিতে ২০০৬ সালে বৃত্তি প্রদান কর্মসূচি চালু করা হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে মাস্টার্স পর্যন্ত ছাত্রছাত্রীদের বৃত্তি দেওয়া হচ্ছে।
বাণিজ্যিকভাবে এগিয়ে থাকার পাশাপাশি পিছিয়ে পড়া মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের কাজ করছে গ্রুপটি। শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য রানার ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট গঠন করা হয়ছে। অটিস্টিক শিশুদের কল্যাণে স্কুল পরিচালনায় ট্রাস্ট থেকে অর্থসহায়তা দেওয়া হয়। এছাড়া উচ্চশিক্ষায় অধিকার নিশ্চিত করতে রানারের হাত ধরে ২০১২ সালে রাজশাহীতে নির্মাণ করা হয়েছে বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের মাধ্যমে উত্তরবঙ্গে উচ্চশিক্ষায় ভূমিকা রাখছে রানার গ্রুপ। মানবিক, সামাজিক বিজ্ঞান, বিজ্ঞান, প্রকৌশল ও প্রযুক্তি শাখায় শিক্ষা প্রদান করে এ বিশ্ববিদ্যালয়। এখান থেকে প্রাপ্ত মুনাফা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নে ব্যয় করে রানার গ্রুপ। শিক্ষার পাশাপাশি খেলাধুলার মানোন্নয়নেও রানার গ্রুপ কাজ করে চলেছে। জাতীয় পর্যায়ে বিভিন্ন প্রতিযোগিতায়ও পৃষ্ঠপোষকতা করে এ গ্রুপটি। হ


সহজ কিস্তিতে উন্নত বাইক
বাংলাদেশের বাজারে রানার অটোমোবাইলস লিমিটেডই প্রথম সাধারণ মানুষের কাছে বাইক পৌঁছে দেওয়ার জন্য সহজ কিস্তিতে বাইক বিক্রি শুরু করে। শুধু কিস্তি সুবিধা নয়, কোনো ধরনের ইন্টারেস্ট ছাড়া তুলনামূলক সহজ শর্তে প্রতিষ্ঠানটির বাইক কিনতে পারছে ক্রেতারা। সঙ্গে বিক্রয়োত্তর সেবা ও উপহার তো থাকছেই।
তথ্যমতে, কোনো ধরনের লাভ ছাড়াই রানার কিস্তিতে বাইক কেনার সুবিধা দিচ্ছে। কিছু সহজ শর্ত পূরণ করে যে কেউ তিন মাস থেকে আড়াই বছরের কিস্তিতে বাইক কিনতে পারবেন। এক্ষেত্রে তিন মাসের কিস্তিতে দামের সঙ্গে বাড়তি কোনো ধরনের লাভ নেওয়া হয় না। ছয় মাসের কিস্তিতে ৯ শতাংশ ও এক বছরের বেশি সময়ের জন্য ১২ শতাংশ লাভ নেওয়া হয়। রানারের মোটরসাইকেল কিনতে ডাউন্ড পেমেন্টের অঙ্ক গাড়ির মডেল ও কিস্তির সময়ের ওপর নির্ভর করে। দামের সর্বনিন্ম ১৫ শতাংশ থেকে সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশ পর্যন্ত ডাউন্ট পেমেন্ট হিসেবে নেওয়া হয়।
কিস্তিতে বাইক কেনার জন্য ক্রেতাকে মডেল পছন্দ করে ২০০ টাকা দিয়ে নির্ধারিত ফরমে আবেদন করতে হয়। আবেদনের পর তথ্যগুলো যাচাই-বাছাই করা হয়। এরপর সর্বোচ্চ তিন কার্যদিবসের মধ্যে আবেদনকারীকে বাইক বুঝিয়ে দেওয়া হয়।
কিস্তিতে বাইক কেনার জন্য জাতীয় পরিচয়পত্র কিংবা পাসপোর্টের ফটোকপি, স্থায়ী ও অস্থায়ী ঠিকানার প্রমাণস্বরূপ জন্মনিবন্ধন সনদ, বাসাভাড়ার চুক্তিপত্র বা ইউটিলিটি বিলের ফটোকপি, চাকরিজীবী হলে বেতনের সিøপ কিংবা কর্মস্থলের প্রত্যয়নপত্র আর ব্যবসায়ী হলে ছয় মাসের ব্যাংক স্টেটমেন্ট বা ইনকাম ট্যাক্স রিটার্ন লাগবে। কিস্তিতে বিক্রীত বাইকের রেজিস্ট্রেশন হবে রানার অটোমোবাইলস লিমিটেডের নামে। কিস্তি শেষে নাম পরিবর্তন করা যাবে।
প্রত্যেকটি বাইকের ইঞ্জিনে ছয় বছর ওয়ারেন্টি দেয় রানার। এ সময়ের মধ্যে কোনো সমস্যা বা ত্রুটি দেখা দিলে তা কোম্পানির পক্ষ থেকে মেরামত করে দেওয়া হয়। কেনার তারিখ থেকে তিন বছরে ৯ বার ফ্রি সার্ভিসিংয়ের সুযোগ দিচ্ছে কোম্পানিটি। প্রথম বছরে চারবার, দ্বিতীয় বছরে তিনবার ও তৃতীয় বছরে দুইবার সার্ভিসিংয়ের জন্য কোনো খরচ লাগে না। সেইসঙ্গে প্রতিটি বাইকের জন্য কেনার তারিখ থেকে এক বছরের বিমা সুবিধা দেওয়া হয়। এ সুবিধার মধ্যে দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যুর জন্য সর্বোচ্চ এক লাখ টাকা বিমার ব্যবস্থা রয়েছে। সেইসঙ্গে রানার চিতা ও রানার বাইক-রিক্সি ছাড়া সব বাইকে টুলবক্স, হেলমেট, রেইন কোট, চাবির রিং, লেগ গার্ড, শাড়ি গার্ড প্রভৃতি থাকছে উপহার হিসেবে।

 

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০