Print Date & Time : 22 June 2025 Sunday 10:54 am

দুর্যোগ ঝুঁকিকে গুরুত্ব দিচ্ছে না ব্যাংকগুলো

নিজস্ব প্রতিবেদক: প্রাকৃতিক বিপর্যয়, অগ্নিকাণ্ড ও আকস্মিক দুর্ঘটনার ঝুঁকি বা দুর্যোগ ঝুঁকির কারণে নিশ্চিতভাবেই প্রবৃদ্ধি ব্যাহত হয়। কিন্তু এ ঝুঁকিকে এখনও গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় আনছে না ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান। দুর্যোগ ঝুঁকিকে আর্থিক ঝুঁকির অন্তর্ভুক্ত করে যথার্থ কাঠামোবদ্ধ কর্মপন্থা প্রণয়নের সময় এসেছে। বিআইবিএম’র গবেষণায় এ বিষয়টির গুরুত্ব তুলে ধরা হয়েছে।

গতকাল বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট (বিআইবিএম) মিলনায়তনে ‘দুর্যোগ ঝুঁকি চিহ্নিতকরণ: বাংলাদেশ পরিপ্রেক্ষিত’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন বিআইবিএম’র অধ্যাপক ও পরিচালক (প্রশিক্ষণ) ড. শাহ মো. আহসান হাবীব।

এ গবেষণায় দেখা গেছে, এশিয়া বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মানবসৃষ্ট দুর্যোগপ্রবণ অঞ্চল। কিন্তু এ অঞ্চলেই দুর্যোগ ঝুঁকিকে সবচেয়ে বেশি অবহেলার সঙ্গে বিবেচনা করা হয়। আবার এ সচেতনতায় বাংলাদেশের অবস্থান এশিয়ার মধ্যে সর্বনিম্ন।

গবেষণা জরিপে দেখা গেছে, দুর্যোগ মোকাবিলায় ব্যাংকগুলোকে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার পক্ষে মত দিয়েছেন ৪৭ শতাংশ ব্যাংকার। ১৭ শতাংশ ব্যাংকার জানিয়েছেন সচেতনতা প্রয়োজন।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, দুর্যোগ ঝুঁকির প্রভাব ব্যাংক খাতে সুদূরপ্রসারী। এর প্রভাবে আক্রান্ত হয় ঋণ, নিরাপত্তা, তারল্য, সুদের হার, দক্ষতা, সুনাম ও সামষ্টিক অর্থনীতি।

ড. আহসান হাবীব মত প্রকাশ করেন, দুর্যোগ ঝুঁকি ব্যবস্থাপনায় বিমা কোম্পানির ভ‚মিকা থাকলেও আমাদের দেশে এ খাতটি নির্ভরযোগ্যভাবে বিকশিত হতে পারেনি। তবে বিমার মতো প্রোডাক্টকে ব্যাংকগুলো নিজেদের ব্যবসার অন্তর্ভুক্ত করতে পারে।

একই সেমিনারে ‘বাংলাদেশের ব্যাংক খাতে ব্যাসেল চুক্তি অভিযোজনের প্রভাব’ শীর্ষক আরেকটি গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়। বিআইবিএম’র অধ্যাপক মো. নেহাল আহমদ প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন।

২০০৭-০৯ সালের বিশ্বের ব্যাংক খাতে নাটকীয় বিপর্যয়ের পরিপ্রেক্ষিতে ‘ব্যাসল-৩’ নীতির আবির্ভাব। পর্যাপ্ত পরিমাণে মূলধন সংরক্ষণের মাধ্যমে ঝুঁকি মোকাবিলা করাই এ নীতির মূলকথা।

এ গবেষণায় তুলে ধরা হয়েছে, ২০১০ থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে মূলধন সংরক্ষণে ভারত, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার তুলনায় বাংলাদেশের সূচক সবচেয়ে কম।

৩৬টি ব্যাংকের তথ্যের ভিত্তিতে পরিচালিত এ গবেষণায় দেখা গেছে, ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদের বিপরীতে মূলধন (সিআরএআর) সংরক্ষণে বিশেষায়িত ব্যাংকগুলো ২০১০ থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে ধারাবাহিকভাবে নেতিবাচক অবস্থায় রয়েছে। ২০১০ সালে মূলধন ছিল নির্ধারিত মূলধনের সাত দশমিক ২৫ শতাংশ কম। ২০১৬ সালে এ অনুপাত ৩৩ দশমিক ৬৭ শতাংশ।

আবার ২০১৩ থেকে ১৬ সালের রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোতে বাণিজ্যিক ব্যাংকে মূলধন সংরক্ষণে নিম্নমুখী প্রবণতা লক্ষ করা যায়। নিয়ন্ত্রক সংস্থার জন্য যা উদ্বেগের বিষয়। খেলাপি ঋণের ফলে প্র্রভিশন বৃদ্ধির কারণে সরকারের পক্ষ থেকে মূলধন সরবরাহের মাধ্যমে এ ব্যাংকগুলোকে সচল রাখা হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। তবে বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংক ও বহুজাতিক ব্যাংকগুলো এ লক্ষ্যমাত্রা পূরণে সফল। মোটের ওপর ব্যাংক খাতের মূলধন সংরক্ষণ ৯ দশমিক ৯৩ শতাংশে পৌঁছছে।

সভায় উপস্থিত বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর বলেন, বাংলাদেশের মতো দেশে দুর্যোগে ব্যাংক খাত থমকে যায়। প্রায়ই সুদ মওকুফ, ঋণ পুনঃতফসিল করতে হয়। এতে ব্যাংক খাতে বিরূপ প্রভাব পড়ে। তিনি আরও বলেন, ব্যাসল-৩ বাস্তবায়ন পর্যায়ে রয়েছে। বিআইবিএম’র গবেষণায় পাওয়া সুপারিশগুলো ব্যাসল-৩ বাস্তবায়নে সহযোগিতা করবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক এবং বিআইবিএম’র সুপারনিউমারারি অধ্যাপক ইয়াছিন আলি বলেন, অনেক ব্যাংকে মিড লেভেল কর্মীদের ছাঁটাই করা হচ্ছে। আবার অন্য খাতের লোকজনকে বড় বেতনে ব্যাংকে উচ্চ পদে বসানো হচ্ছে। এটি ব্যাংক খাতের জন্য ভালো খবর নয়। এ সংস্কৃতি ব্যাংক খাতে দক্ষ মানবসম্পদ বিকাশে বাধা সৃষ্টি করবে।

বিআইবিএম’র সুপারনিউমারারি অধ্যাপক এবং পূবালী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক হেলাল আহমদ চৌধুরী বলেন, ব্যাসল-৩ বাস্তবায়নে ব্যাংকের পরিচালনা পরিষদকে সচেতন হতে হবে। বোর্ডকে প্রতিটি ধাপ বোঝানোর দায়িত্ব টপ ম্যানেজমেন্টের।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাইন্যান্স বিভাগের অধ্যাপক ড. মাহমুদ ওসমান ইমাম বলেন, দেশে কিছু ব্যাংককে যত দ্রæত একীভ‚ত করা যায়, ততই ভালো।

বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মনজুর আহমেদ। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর আবু হেনা মোহা. রাজী হাসান। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিআইবিএম’র মহাপরিচালক ড. তৌফিক আহমদ চৌধূরী। সেমিনারে স্বাগত বক্তব্য রাখেন পরিচালক (গবেষণা উন্নয়ন ও কনসালট্যান্সি) ড. প্রশান্ত কুমার ব্যানার্জি।