Print Date & Time : 20 June 2025 Friday 9:26 pm

দুর্যোগে প্রযুক্তির ব্যবহার, অর্থায়ন ও সমন্বিত উদ্যোগ জরুরি

নিজস্ব প্রতিবেদক:তথ্য-প্রযুক্তির বর্তমান সময়ে যে-কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় নতুন নতুন প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিতকরণের বিকল্প নেই। এ ধরনের প্রযুক্তি ও অবকাঠামো নির্মাণে বেসরকারি খাতকে উৎসাহিত করতে আর্থিক ও নীতিসহায়তা একান্ত অপরিহার্য বলে জানিয়েছেন বক্তারা। গতকাল শনিবার ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) এবং সুপার প্রজেক্ট কনসোরটিয়াম যৌথভাবে আয়োজিত ‘স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে দুর্যোগ ঝুঁকি ব্যবস্থাপনায় বেসরকারি খাতের অংশগ্রহণ’ শীর্ষক জাতীয় সিম্পোজিয়ামে এমন অভিমত দেন বক্তারা।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস এবং ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম ওই সিম্পোজিয়ামে বিশেষ অতিথি হিসেবে ভার্চুয়ালি যোগদান করেন। এছাড়া এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন, বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান লোকমান হোসেন মিয়া এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মিজানুর রহমান এ অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। 

অনুষ্ঠানে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, জনজীবন ও অর্থনৈতিক নিরাপত্তা নিশ্চিতকল্পে শিল্পকারখানা, অফিস-আদালত ও বসতবাড়ি প্রভৃতি ক্ষেত্রে ফায়ার ড্রিল বাস্তবায়ন এবং বিশেষ করে ঢাকা শহরে অনাকাক্সিক্ষত দুর্যোগ প্রতিরোধ, বিদ্যুৎ, পানিসহ অন্যান্য সেবা সংযোগের ম্যাপিং খুবই জরুরি। তিনি বলেন, তৈরি পোশাক খাতের ফ্যাক্টরিগুলোয় কমপ্লায়েন্সের বিষয়টিকে প্রাধান্য প্রদান করা হয়েছে, ফলে আন্তর্জাতিক মানের কারখানা বাংলাদেশে তৈরি হচ্ছে এবং অন্যান্য শিল্প খাতেও এ ধরনের উদাহরণ অনুসরণ করা প্রয়োজন। এছাড়া বেসরকারি খাতে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা গ্রহণকে উৎসাহিত করার লক্ষ্যে এ কার্যক্রম বাস্তবায়নে স্বল্পসুদে ঋণ প্রদানসহ প্রয়োজনীয় নীতি সহায়তা প্রদানের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।      

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৭৫টি ওয়ার্ডের প্রতিটিতে প্রায় ৪০০ স্বেচ্ছাসেবককে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে, যারা যে-কোনো অনাকাক্সিক্ষত দুর্যোগ মোকাবিলায় সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করবে এবং সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মোকাবিলায় প্রশিক্ষণ প্রদান ও ড্রিলের ওপর অধিকহারে মনোনিবেশ করা হচ্ছে। তিনি জানান, সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগের মাধ্যমেই দুর্যোগ মোকাবিলা করা সম্ভব। তিনি আশা প্রকাশ করেন, প্রাইভেট সেক্টর ইমারজেন্সি অপারেশন সেন্টারের (পিইওসি) ওয়েবসাইটে দুর্যোগবিষয়ক তথ্য প্রদানের মাধ্যমে তা মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

বিডা’র নির্বাহী চেয়ারম্যান লোকমান হোসেন মিয়া নিরাপদ ভবন নির্মাণ নিশ্চিতকল্পে বিল্ডিং কোড অনুসরণের আহ্বান জানান। তিনি বলেন, জীবনের সঙ্গে ঝুঁকি ওতপ্রোতভাবে জড়িত, তাই যে-কোনো ধরনের দুর্যোগ মোকাবিলায় সরকার ও বেসরকারি খাতের সম্পৃক্তকরণের মাধ্যমে একটি সমন্বিত পরিকল্পনা প্রণয়নের কোনো বিকল্প নেই। তিনি আরও বলেন, যেকোন দুর্যোগ মোকাবিলায় তথ্য-প্রযুক্তি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে এবং সব স্তরে এ ধরনের নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার নিশ্চিতকরণে সরকারের আর্থিক সহযোগিতা ও নীতি সহায়তা অব্যাহত রাখার ওপর জোরারোপ করেন।   

অনুষ্ঠানে ‘প্রাইভেট সেক্টর ইমারজেন্সি অপরাশেন সেন্টারের (পিইওসি) ওয়েবসাইট’-এর উদ্বোধন করা হয়, যেখানে দুর্যোগ মোকাবিলায় স্বেচ্ছাসেবক দলের তথ্যাদি এবং অগ্নিনির্বাপণে ব্যবহƒত যন্ত্রপাতির ব্যবহার ও প্রাপ্তির বিভিন্ন তথ্য সমন্বিত করা হয়েছে।      

সিম্পোজিয়ামের উদ্বোধনী বক্তব্যে ঢাকা চেম্বারের সভাপতি সামীর সাত্তার বলেন, শিল্প খাত আমাদের অর্থনীতির প্রাণ, তাই অর্থনীতির টেকসই উন্নয়নের বৃহত্তর স্বার্থে শিল্পের পাশাপাশি জনজীবনে যে-কোনো দুর্যোগ মোকাবিলায় কার্যকর সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ ও এর বাস্তবায়ন একান্ত অপরিহার্য। জিডিপিতে শিল্প খাতের অবদান প্রায় ৩৬%, এ অবস্থায় সামগ্রিক অর্থনীতিকে সব ধরনের দুর্যোগের ঝুঁকি মোকাবিলায় কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ জরুরি।  

এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন বলেন, বাংলাদেশ ক্রমেই ট্রিলিয়ন ডলার অর্থনীতির দিকে ধাবিত হচ্ছে এবং সম্ভাবনাময় অর্থনীতির বৃহত্তর স্বার্থে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় দক্ষতা উন্নয়নের কোনো বিকল্প নেই। তিনি বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগের পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে বাংলাদেশ, তাই শুধু ঢাকাতেই নয়, বরং সমগ্র বাংলাদেশের ঝুঁকি মোকাবিলায় একটি সমন্বিত পরিকল্পনা প্রণয়ন করা জরুরি।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মিজানুর রহমান দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার দক্ষতা ও সক্ষমতা আনয়নের পাশাপাশি সরকারি-বেসরকারি সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণের ওপর জোরারোপ করেন। এছাড়া সিম্পোজিয়ামে ‘দুর্যোগ ঝুঁকি ব্যবস্থাপনায় ফিন্যান্সিং স্ট্র্যাটেজি’ এবং দুর্যোগ ঝুঁকি ব্যবস্থাপনায় তথ্য-প্রযুক্তির ব্যবহার’ শীর্ষক দুটি প্যারালাল সেশন অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে নির্ধারিত আলোচকরা বিষয়বস্তুর ওপর বিস্তারিত আলোকপাত করেন।  

সিম্পোজিয়ামে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন ঢাকা চেম্বারের ঊর্ধ্বতন সহসভাপতি এসএম গোলাম ফারুক আলমগীর (আরমান)। উল্লেখ্য, ডিসিসিআই, অ্য্যাকশনএইড বাংলাদেশ, ইউনাইটেড পারপাস এবং ওয়ার্ল্ড ভিশন যৌথভাবে ‘সুপার প্রজেক্ট কনসোরটিয়াম’ বাস্তবায়ন করছে, যার সহায়তায় রয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন সিভিল প্রটেকশন অ্যান্ড হিউম্যানিটারিয়ান এইড।