মো. মামুন হাসান: ভৌগোলিক অবস্থান বৈশিষ্ট্যের কারণে বাংলাদেশ অতিমাত্রায় দুর্যোগ প্রবণ। বাংলাদেশ মৌসুমি বায়ুর প্রভাব এলাকায় অবস্থিত। এর উত্তর রয়েছে হিমালয় পর্বতমালা আর উত্তর-পূর্বে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত এলাকা আসাম-মিজোরাম। দক্ষিণে বঙ্গোপসাগরের ৫৮০ কিলোমিটার দীর্ঘ তটরেখা চোঙ্গের মতো। দেশের উত্তর-পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব কোনায় সামান্য পরিমাণে পাহাড়ি এলাকা বাদে পুরো দেশটা নিচু সমভূমি। তিনটি বড় নদীÑপদ্মা, ব্রহ্মপুত্র ও মেঘনা দেশের মাঝ দিয়ে বঙ্গোপসাগরে পড়েছে। গ্রীষ্মকালে হিমালয় ও আসাম-মিজোরাম থেকে বয়ে আসে হিমালয়ের বরফ গলা পানি ও বর্ষা মৌসুমে বিস্তীর্ণ এলাকার বৃষ্টিপাতের পানিÑএই তিনটি নদী দিয়ে প্রবাহিত হয়। এদিকে, এপ্রিল-মে ও অক্টোবর-নভেম্বর মাসে বঙ্গোপসাগর প্রতিনিয়ত নিম্নচাপ সৃষ্টি হয়। এর অনেকগুলো আবার ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেয়। অনেক সময় প্রবল ঘূর্ণিঝড় ও ঘূর্ণিঝড়ের সঙ্গে মারাত্মক জলোচ্ছ্বাস উপকূল অঞ্চলে আঘাত হানে। এসব কারণে প্রতিবছরই ঝড়, বন্যা, নদী ভাঙন ও খরায় দেশের কোনো না কোনো অঞ্চল আক্রান্ত হয়। উপরন্তু, বাংলাদেশের জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকি ক্রমেই মূর্ত হয়ে উঠছে। ঋতুচক্র ও আবহাওয়া অস্বাভাবিক হেরফের দেখা দিচ্ছে। এর ফলে ঝড়ঝঞ্ঝা, বন্যা, নদী ভাঙন ও খরার মতো আপদ পৌনঃপুনিক ও তীব্র হয়ে উঠছে। সাধারণ মাত্রার আপদেও অনেক লোকের ক্ষতি হয় ও জনগোষ্ঠীর বিরাট অংশ মারাত্মক দুর্যোগের মুখোমুখি হয়। এছাড়া সিসমিক জোন অর্থাৎ ইউরেশিয়ান প্লেট, ইন্ডিয়ান প্লেট ও বার্মা প্লেটের মাঝামাঝি অবস্থানে থাকার কারণে বাংলাদেশ ভূমিকম্প ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। বৈশ্বিক উষ্ণায়নের কারণে বাংলাদেশের অবস্থান অত্যন্ত নাজুক।
যুক্তরাজ্যভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান গ্রান্থাম রিসার্চ ইনস্টিটিউট ২০২৩ সালের অক্টোবরে ‘অন ক্লাইমেট চেঞ্জ অ্যান্ড দ্য এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড সেন্টার ফর ক্লাইমেট চেঞ্জ ইকোনমিকস’ নামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। তাতে তারা দেখিয়েছে, বাংলাদেশে চরমভাবাপন্ন আবহাওয়া ৪৬ শতাংশ বেড়েছে। সরাসরি প্রভাব পড়ছে বাংলাদেশের মানুষের জীবন, জীবিকা ও স্বাস্থ্যের ওপর। আর বিশ্ব আবহাওয়াবিষয়ক সংস্থা ডব্লিউএমও আরও এক ধাপ এগিয়ে বলছে, ২০২৩ সালের চেয়েও ২০২৪ সালের আবহাওয়া আরও ভয়ংকর ও চরমভাবাপন্ন আচরণ করতে পারে। এর ফলে বিশ্বজুড়ে দুর্যোগের বিপদ তো বটেই, রোগবালাইয়ের প্রাদুর্ভাবও বাড়তে পারে।
বাংলাদেশে বহুবার বহুভাবে দুর্যোগ এসেছে। বন্যা, জলোচ্ছ্বাস, ঘূর্ণিঝড়, হারিকেন, টর্নেডে, খরা, শৈত্যপ্রবাহ প্রভৃতি প্রাপ্ত তথ্যের মধ্যে ১৭৯৫ (জুন), ১৮২২ (মে), ১৮৭২ (অক্টোবর), ১৮৭৬ (অক্টোবর), ১৮৯৭ (অক্টোবর), ১৯৬০ (অক্টোবর), ১৯৬১ (মে), ১৯৬৩ (মে), ১৯৬৫ (মে), ১৯৭০ (নভেম্বর), ১৯৮৫ (মে), ১৯৯১ (এপ্রিল), এর ঘূর্ণিঝড়, হারিকেন, জলোচ্ছ্বাস, ১৮৯৭ (অক্টোবর)-এর ভূমিকম্প, ১৯৮৮, ১৯৯৮ ও ২০০০ বন্যা, ১৯৫৭ ও ১৯৭৯ সালের খরা এবং ১৯৯৭-৯৮ (ডিসেম্বর-জানুয়ারি) ও ২০০৩ সালের শৈত্যপ্রবাহ এবং ২০০৭ সালে চট্টগ্রামে অতিবর্ষণজনিত পাহাড়ধস, ২০০৭ সিডর, ২০০৮ নার্গিস, ২০০৯ আইলা, ২০১৩ মহাসেন, ২০১৫ কোমেন, ২০১৬ রোয়ানো এবং ২০১৭ সালের ঘূর্ণিঝড় মোরা ছিল সবচেয়ে ভয়াবহ ও স্মরণীয়। ক্ষয়ক্ষতির অভিজ্ঞতায় দেখা যায়, প্রতিনিয়ত বাংলাদেশের উপকূলের অনেক নতুন নতুন উপকূলীয় এলাকা ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ‘মনুষ্য সৃষ্ট দুর্যোগে’ ১৯৭১ সালে এদেশের স্বাধীনতা অর্জনের জন্য মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে প্রায় ৩০ লাখ মানুষের জীবন দিতে হয়েছে।
দুর্যোগের এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য সরকার বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করে তা বাস্তবায়নের পথে হাঁটছে। আর এ জন্য দরকার উপযুক্ত দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা। এটি এমন একটি প্রক্রিয়া, যা প্রাকৃতিক বা মনুষ্যসৃষ্ট দুর্যোগের আগে, দুর্যোগের সময় এবং দুর্যোগের পরে গৃহীত পদক্ষেপের একটি সিরিজ নিয়ে গঠিত। এর মূল লক্ষ্য হলো দুর্যোগের প্রভাব কমানো, ক্ষয়ক্ষতি হ্রাস করা এবং ক্ষতিগ্রস্তদের দ্রুত পুনরুদ্ধার করা। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার প্রধান ধাপগুলোর মধ্যে প্রতিরোধ, প্রস্তুতি, প্রতিক্রিয়া, পুনর্বাসন ও পুনর্গঠন অন্যতম। এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা জনগণের জীবন, সম্পদ, এবং পরিবেশকে দুর্যোগের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে রক্ষা করতে সহায়ক হয়। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার প্রধানতম উদ্দেশ্য দুর্যোগের সময় জীবন, সম্পদ এবং পরিবেশের যে ক্ষতি হয়ে থাকে তা এড়ানো বা ক্ষতির পরিমাণ হ্রাস করা; প্রয়োজন অনুযায়ী ক্ষতিগ্রস্ত জনগণের মধ্যে অল্প সময়ে সকল প্রকার ত্রাণ পৌঁছানো ও পুনর্বাসন নিশ্চিত করা এবং দুর্যোগ-পরবর্তী পুনরুদ্ধার কাজ ভালোভাবে সম্পন্ন করা।
বাংলাদেশে দুর্যোগ ঝুঁকি-হ্রাস ও দুর্যোগ মোকাবিলাবিষয়ক কার্যক্রমকে সমন্বিত, লক্ষ্যভিত্তিক ও শক্তিশালী করা এবং সব ধরনের দুর্যোগ মোকাবিলায় কার্যকর দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কাঠামো গড়ে তোলার লক্ষ্যে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা আইন ২০১২, জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা নীতিমালা-২০১৫, জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা ২০১৬-২০২০, ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ, রক্ষণাবেক্ষণ ও ব্যবস্থাপনা নীতিমালা-২০১১, মৃতদেহ ব্যবস্থাপনা নির্দেশিকা-২০১৬, দুর্যোগবিষয়ক স্থায়ী আদেশাবলি (এসওডি) ২০১৯ ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ দলিল প্রণীত হয়েছে। এর মাধ্যমে বিভিন্ন পরিকল্পনায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে প্রতিবন্ধী, নারী, বয়স্ক ব্যক্তি ও শিশুসহ দুর্গত জনগোষ্ঠীর চাহিদা নিরূপণ ও বাস্তবায়ন। ২০১৫-২০৩০ সাল মেয়াদে বাস্তবায়নের জন্য প্রণীত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) এবং দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাসের সেন্দাই ফ্রেমওয়ার্ক। উল্লিখিত আইন, বিধি, পরিকল্পনা ও নীতিমালার আলোকে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা ও সেন্দাই ফ্রেমওয়ার্কের লক্ষ্যমাত্রা বিবেচনায় নিয়ে সরকার দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় স্বল্প, মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদি টেকসই উন্নয়ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
বাংলাদেশ একটি দুর্যোগপ্রবণ দেশ, যেখানে প্রায়ই ঘূর্ণিঝড়, বন্যা, নদীভাঙন, ভূমিকম্প এবং অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঘটে। এসব দুর্যোগ মোকাবিলায় দেশের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ব্যবস্থা উন্নত করার জন্য আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা এবং উদাহরণ থেকে শেখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। জাপানের সেন্দাই শহর, যা তার উন্নত দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অবকাঠামোর জন্য বিশ্বব্যাপী পরিচিত, বাংলাদেশে দুর্যোগ মোকাবিলায় একটি মডেল হিসেবে কাজ করতে পারে।
ইউনাইটেড ন্যাশনস অফিস ফর ডিজাস্টার রিস্ক রিডাকশন (ইউএনআইএসডিআর) এবং জাপানের যৌথ উদ্যোগে ২০১৫ সালের ১৪-১৮ মার্চ জাপানের সেন্দাই সিটিতে থার্ড ওয়ার্ল্ড কনফারেন্স অন ডিজাস্টার রিস্ক রিডাকশন (ডব্লিউসিডিআরআর) অনুষ্ঠিত হয়। বিভিন্ন দেশের দীর্ঘ আলোচনা ও সমঝোতার ভিত্তিতে ভূমিকম্প ও বিরূপ জলবায়ুর প্রভাব এবং মানব সৃষ্ট দুর্যোগ মানুষের জীবন-জীবিকা ও সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমিয়ে আনার লক্ষ্যে সেন্দাই ফ্রেমওয়ার্ক ফর ডিজাস্টার রিস্ক রিডাকশন ২০১৫-২০৩০ গৃহীত হয়। এ নতুন ঝুঁকিহ্রাস কাঠামোতে ১টি প্রত্যাশিত ফলাফল, ১টি লক্ষ্য, ৭টি বৈশ্বিক উদ্দেশ্য, ৪টি অগ্রাধিকার কর্মপরিকল্পনা রয়েছে। এ সম্মেলন দুর্যোগঝুঁকি হ্রাসে গৃহীত দলিলের মধ্যে (১৫ নম্বর অনুচ্ছেদ : সেন্দাই ফ্রেমওয়ার্ক ২০১৫-২০৩০) দুর্যোগের কথা উল্লেখ আছে। সেন্দাই কর্মকাঠামো (সেন্দাই ফ্রেমওয়ার্ক ফর ডিজাস্টার রিস্ক রিডাকশন-এসএফডিআরআর ২০১৫-২০৩০) হলো একটি আন্তর্জাতিক চুক্তি; যা প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং অন্যান্য বিপর্যয়ের ঝুঁকি হ্রাস করার জন্য একটি সমন্বিত পদ্ধতি নির্ধারণ করে।
সেন্দাই কর্মকাঠামো বাংলাদেশ সরকারের কর্মকাঠামোর সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। তাই টেকসই উন্নয়নের জন্য এর সম্পূর্ণ বাস্তবায়ন খুবই জরুরি। সরকারের গৃহীত দুর্যোগ সহনশীলতা কৌশল এসএফডিআরআরকাঠামোর সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। আমরা দেখতে পাই, সেন্দাই কর্মকাঠামো চারটি অগ্রাধিকারের ওপর প্রতিষ্ঠিত এবং যা অষ্টম-পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা-সংক্রান্ত লক্ষ্য ও কার্যক্রমের সঙ্গে সমন্বিত। অগ্রাধিকারগুলো ১. দুর্যোগ ঝুঁকি অনুধাবন ও বোধগম্য করা, ২. দুর্যোগঝুঁকি ব্যবস্থাপনায় সুশাসন নিশ্চিত করা, ৩. দুর্যোগ সহনশীলতা বৃদ্ধিতে বিনিয়োগ, ৪. দুর্যোগ সাড়াদানে প্রস্তুতি জোরদারকরণ এবং আগের চেয়ে ভালো অবস্থায় ফিরিয়ে আনার জন্য কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ।
সেন্দাই ফ্রেমওয়ার্ক ফর ডিজাস্টার রিস্ক রিডাকশন-এসএফডিআরআর ২০১৫-২০৩০ এর ভিত্তিতে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি দুর্যোগ ঝুঁকিহ্রাস ও প্রস্তুতি কর্মপরিকল্পনা তৈরি করা এবং তা বাস্তবায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশের টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করা যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা যেতে পারেÑ
ভূমিকম্প সহনশীল অবকাঠামো: সেন্দাই শহরের মতো উন্নত ভূমিকম্প সহনশীল ভবন নির্মাণ কৌশল বাংলাদেশে বাস্তবায়িত হলে ভূমিকম্পের ক্ষয়ক্ষতি অনেকাংশে কমানো সম্ভব হবে। বাংলাদেশের শহরগুলোয়, বিশেষ করে ঢাকা, চট্টগ্রাম এবং সিলেটের মতো ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকায়, এই প্রযুক্তির প্রয়োগ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সুনামি এবং ঘূর্ণিঝড় প্রতিরোধ ব্যবস্থা: বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকাগুলোয় সুনামি এবং ঘূর্ণিঝড় প্রতিরোধে সেন্দাইয়ের মতো উঁচু বাঁধ এবং প্রাকৃতিক বেষ্টনী গড়ে তোলা যেতে পারে। যেমনÑ বাংলাদেশের কক্সবাজার, পটুয়াখালী এবং খুলনার মতো এলাকা এই প্রযুক্তি থেকে বিশেষভাবে উপকৃত হতে পারে। আধুনিক সতর্কতা ব্যবস্থা: সেন্দাইয়ের মতো আধুনিক সতর্কতা ব্যবস্থা বাংলাদেশেও বাস্তবায়িত হলে দুর্যোগের পূর্বাভাস দ্রুত জনগণকে জানানো সম্ভব হবে। এর ফলে মানুষ দ্রুত নিরাপদ স্থানে সরে যেতে পারবে, যা জীবন বাঁচাতে সহায়তা করবে।
উন্নত উদ্ধার ও সহায়তা ব্যবস্থা: দুর্যোগের পরপরই দ্রুত এবং সমন্বিত উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনার জন্য সেন্দাইয়ের মডেল অনুসরণ করে বাংলাদেশেও একটি উন্নত উদ্ধার ও সহায়তা ব্যবস্থা গড়ে তোলা যেতে পারে। এটি নিশ্চিত করবে যে দুর্যোগ-পরবর্তী সময়ে মানুষ দ্রুত সেবা ও সহায়তা পাবে। জনসচেতনতা ও প্রশিক্ষণ: সেন্দাইয়ের মতো নিয়মিত জনসচেতনতা প্রচার এবং দুর্যোগ মোকাবিলায় প্রশিক্ষণ দেয়া হলে, বাংলাদেশের জনগণ দুর্যোগের সময় আরও দক্ষতার সঙ্গে প্রতিক্রিয়া জানাতে পারবে। এটি স্কুল, কলেজ এবং কমিউনিটি পর্যায়ে বাস্তবায়ন করা যেতে পারে। স্থানীয় পরিস্থিতির সঙ্গে সামঞ্জস্য: সেন্দাই মডেলের পুরোপুরি বাস্তবায়ন সম্ভব নাও হতে পারে, কারণ বাংলাদেশের ভৌগোলিক এবং পরিবেশগত অবস্থা ভিন্ন। তবে স্থানীয় পরিস্থিতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সেন্দাইয়ের কৌশলগুলো বাস্তবায়ন করা গেলে তা বাংলাদেশের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে। জনগণকে জানানো সম্ভব হবে। এর ফলে মানুষ দ্রুত নিরাপদ স্থানে সরে যেতে পারবে, যা জীবন বাঁচাতে সহায়তা করবে।
ওয়ার্ল্ড রিস্ক রিপোর্ট-২০১১ অনুযায়ী, দুর্যোগের ঝুঁকি ও বিপদাপন্নতার দিক থেকে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান যথাক্রমে ৬ষ্ঠ ও ১৫তম। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব, অপরিকল্পিত নগরায়ণ, প্রকৃতিতে মানুষের অপরিকল্পিত হস্তক্ষেপ, নদীশাসন ইত্যাদির প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ নানা প্রভাবজনিত কারণে দুর্যোগে বাংলাদেশের বিপদের আশঙ্কা কয়েকগুণ বেড়েছে। বিভিন্ন সময়ে দুর্যোগগুলোর ফলে একদিকে যেমন জানমালের ক্ষতি হয়েছে, অন্যদিকে তেমনি অর্থনৈতিক ক্ষতির পরিমাণও অনেক বেড়ে গেছে। এ অবস্থা নিঃসন্দেহে বাংলাদেশকে তার উন্নয়ন অগ্রযাত্রা থেকে পিছিয়ে দিচ্ছে।
ভৌগোলিক অবস্থানগত কারণেই বাংলাদেশ প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে পুরোপুরি মুক্তি পাবে না। বিশ্বের বৃহত্তম ব-দ্বীপ বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের ফলে বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে। সেন্দাই কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশের টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করা গেলে জীবন ও সম্পদের সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি অনেকাংশে কমিয়ে আনা যেতে পারে। দুর্যোগ সহনীয়, টেকসই ও নিরাপদ দেশ গড়ার লক্ষ্যে সকল স্তরের সকল পর্যায়ের কার্যক্রম সফলভাবে পরিচালিত করতে পারলে দুর্যোগের ক্ষতি থেকে জীবন, সম্পদ ও পরিবেশকে বহুলাংশে রক্ষা করা সম্ভব।