নিজস্ব প্রতিবেদক: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বস্ত্র খাতের কোম্পানি দুলামিয়া কটনের লোকসান কয়েক বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে। এতে প্রতিষ্ঠানটির পুঞ্জীভূত লোকসান বাড়ছে। তবে অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে এ প্রতিষ্ঠানের শেয়ারদরও। কোনো ধরনের সংবেদনশীল তথ্য ছাড়াই এক মাসের ব্যবধানে এ প্রতিষ্ঠানের শেয়ারদর বেড়েছে প্রায় ১৮ শতাংশ। আর গত এক বছরের ব্যবধানে এ শেয়ারের দর বেড়েছে দেড়গুণের বেশি। প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারের এভাবে দর বৃদ্ধিকে স্বাভাবিকভাবে দেখছেন না সাধারণ বিনিয়োগকারী থেকে শুরু করে বাজারসংশ্লিষ্ট কেউ-ই।
প্রতিষ্ঠানটির আর্থিক প্রতিবেদনে দেখা যায়, চলতি হিসাববছরের তিন প্রান্তিকে (জুলাই-মার্চ) শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছে তিন টাকা ২১ পয়সা। আগের আর্থিক বছরে একই সময়ে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি লোকসানের পরিমাণ ছিল তিন টাকা ১৩ পয়সা। এদিকে তিন প্রান্তিক শেষে প্রতিষ্ঠানটির মোট লোকসানের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২৪ লাখ ৪০ হাজার টাকা। আগের বছর একই সময়ে যার পরিমাণ ছিল ২৩ লাখ ৬৩ হাজার টাকা।
নিয়ম অনুযায়ী, কোনো প্রতিষ্ঠানের লোকসান বাড়লে বাজারে ওই শেয়ারের দর কমার প্রবণতা দেখা যায়। কিন্তু এ প্রতিষ্ঠানের বেলায় তার উল্টো চিত্র পরিলক্ষিত হচ্ছে। ১২ কার্য দিবস আগে এ প্রতিষ্ঠানের প্রতিটি শেয়ারদর ছিল ৪৩ টাকা ৩০ পয়সা। সর্বশেষ কার্যদিবসে এর প্রতিটি শেয়ার লেনদেন হয় ৫০ টাকা ৮০ পয়সায়। অন্যদিকে গত এক বছরের মধ্যে এ কোম্পানির শেয়ার সর্বনিম্ন ১৭ টাকা এবং সর্বোচ্চ ৬০ টাকা দরে কেনাবেচা হতে দেখা গেছে। এর জের ধরে প্রতিষ্ঠানটিকে নোটিস প্রদান করে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)। তবে জবাবে প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তাদের কাছে কোনো মূল্য সংবেদনশীল তথ্য নেই।
এদিকে বিগত বছরগুলোর আর্থিক প্রতিবেদনে দেখা যায়, এ প্রতিষ্ঠানের লোকসান ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে। ২০১৪-১৫ আর্থিক বছরে প্রতিষ্ঠানটির লোকসানের পরিমাণ ছিল এক কোটি ৮৮ লাখ টাকা। পরের আর্থিক বছরে যা বেড়ে হয় দুই কোটি ২১ লাখ টাকা। ২০১৬-১৭ আর্থিক বছরে এটা বেড়ে হয় দুই কোটি ৮৩ লাখ টাকা। সর্বশেষ ২০১৭-১৮ আর্থিক বছরে লোকসানের পরিমাণ দাঁড়ায় তিন কোটি টাকা।
১৯৮৯ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিটি বর্তমানে ‘জেড’ ক্যাটেগরিতে অবস্থান করছে, কারণ কয়েক বছর ধরে প্রতিষ্ঠানটি শেয়ারহোল্ডারদের কোনো লভ্যাংশ দিতে পারছে না।
এদিকে বাজারে গুজব রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির শেয়ার নিয়ে কারসাজি হচ্ছে। একটি চক্র ইচ্ছা করে কৃত্রিমভাবে শেয়ারদর বাড়াচ্ছে। তারা এটা করছে নিজেদের ফায়দা হাসিলের জন্য। তাই এ ধরনের শেয়ার থেকে দূরে থাকার পরমর্শ দেন বাজারসংশ্লিষ্টরা। তারা বলেন, দ্রুত লাভ করার জন্য যারা এসব কোম্পানিতে বিনিয়োগ করেন, তারা লাভের বদলে বেশিরভাগ সময় লোকসানি হয়ে ফিরে যান।
এ প্রসঙ্গে ডিবিএ’র প্রেসিডেন্ট শাকিল রিজভী বলেন, বিনিয়োগ করার আগে কোম্পানির আর্থিক অবস্থা দেখে নেওয়া উচিত। পৃথিবীর অন্যান্য দেশে এ কালচার থাকলেও আমাদের দেশে এর ব্যতিক্রম দেখা যায়। এখানকার বেশিরভাগ বিনিয়োগকারীই প্রতিষ্ঠানের আর্থিক অবস্থা বিবেচনা না করে অন্যের কথা শুনে বিনিয়োগ করতে ভালোবাসেন। আর এখান থেকে যখন লোকসানি হয়ে ফেরেন তখন তারা অন্যের ওপর দোষ চাপাতে চান। তাদের এ মনোভাব ত্যাগ করতে হবে। মনে রাখতে হবে পুঁজি নিজের, তাই সবার আগে নিজের পুঁজির নিরাপত্তার কথা ভাবতে হবে। এদিকে কোম্পানির বর্তমান অবস্থান জানার জন্য যোগাযোগ করা হলে কারও সাড়া পাওয়া যায়নি।

Print Date & Time : 22 June 2025 Sunday 12:36 pm
দুলামিয়া কটন পুঞ্জীভূত লোকসানে থেকেও বাড়ছে দর
পত্রিকা ♦ প্রকাশ: