মো. হাসানুজ্জামান পিয়াস: কোনো বিষয়ে অতিরিক্ত চিন্তা থেকে দুশ্চিন্তা হয়। দুশ্চিন্তা আমাদের দেহ ও মনে সমস্যা সৃষ্টি করে। দৈনন্দিন জীবন, পরিবার, কর্মক্ষেত্রে কিংবা অন্য অনেক বিষয় নিয়ে অনেকের দুশ্চিন্তার অন্ত নেই। দুশ্চিন্তার ফলে ক্ষুধা কমে যায়। ঘুম নষ্ট হয়। সামাজিক সম্পর্ক খারাপ হয়। কাজের গতি কমে যায়। আরও গুরুতর মানসিক ও শারীরিক সমস্যা দেখা দিয়ে থাকে। তাই শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ থাকতে হলে দুশ্চিন্তাকে গুডবাই জানানোর কোনো বিকল্প নেই
কারণ খুঁজে বের করুন
দুশ্চিন্তার প্রভাব বেশি থাকলে তা বাদ দিয়ে চিন্তা করতে পারবেন নাÑএটাই স্বাভাবিক। খুঁজে বের করুন কী কারণে দুশ্চিন্তা হচ্ছে, সমস্যা কোথায়? এরপর ঠান্ডা মাথায় ভাবুন এর সম্ভাব্য সমাধান কী হতে পারে। সমাধানের জন্য শুরুতে সহজ উপায়টি বেছে নিন।
সমস্যাগুলো লিখে রাখুন
প্রাত্যহিক জীবনের নানা সমস্যা থেকে দুশ্চিন্তা আসে। ফলে মস্তিষ্কে চাপ পড়ে। এ চাপ কমিয়ে আনতে প্রতিদিনের সমস্যাগুলো লিখে রাখুন। এ অভ্যাসের কারণে মানসিক চাপ অনেকটা হালকা হয়ে যায়। গবেষণায় দেখা গেছে, সমস্যা লিখতে বসলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে অনেক সমস্যার সমাধান হয়ে যায়। তাই দুশ্চিন্তার কারণগুলোর একটা তালিকা করুন, দেখবেন অল্প কয়েকটি লেখার পর আর কোনো কারণ খুঁজে পাচ্ছেন না। এর মধ্যে কিছু সমস্যা রয়েছে, যেগুলো কমবেশি সবারই থাকে। উপলব্ধি করবেন যে, আপনার আসলে দুশ্চিন্তা করার খুব বেশি কারণ নেই।
দৈনন্দিন কাজের তালিকা রাখুন
একসঙ্গে অনেক কাজের ব্যস্ততা আপনাকে মানসিক চাপে ফেলতে পারে। তাই একটা নোটবুকে দৈনন্দিন কাজের তালিকা লিখে ফেলুন। গুরুত্ব অনুযায়ী একটা একটা করে শেষ করুন। একটা শেষ হলে তার পাশে দাগ দিয়ে রাখুন। অনুভব করবেন, মাথাটা অনেক হাল্কা হয়ে গেছে।
পরামর্শ নিন
অনেক সময় কোনো বিষয়ে নিজে নিজে সিদ্ধান্ত নেওয়া বেশ কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে। সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগলে দুশ্চিন্তা বেড়ে যায়, তাই কাছের মানুষের সঙ্গে আলোচনা করে নিতে পারেন। সমস্যা কারও সঙ্গে শেয়ার করলে বা আপনার দুশ্চিন্তার বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করলে মন অনেক হালকা হয়। অন্যের পরামর্শে দুশ্চিন্তার বিষয়গুলোর সমাধান পেতেও পারেন। ফলে কিছুটা স্বাভাবিকবোধ করবেন। সেই সমস্যা বা সমস্যাগুলো খোলামনে আলোচনা করুন স্ত্রী বা স্বামী, বন্ধু বা আত্মীয় বা কোনো শুভাকাক্সক্ষীর সঙ্গে, যার ওপর আপনার আস্থা আছে।
মেডিটেশন করুন
দেহ ও মনের সুস্থতার জন্য অত্যন্ত কার্যকরী ব্যায়াম মেডিটেশন। এটি মানসিক চাপ দূর করে মনকে শান্ত করবে। কষ্টদায়ক অনেক বিষয় থেকে মুক্তি দেবে।
যোগাযোগ রাখুন
প্রতিবেশী, আত্মীয়স্বজন, সহপাঠী বা বন্ধুদের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে থাকবেন না। তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখার চেষ্টা করুন। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশ নিন। সহপাঠীদের খোঁজ-খবর রাখুন। মাঝে মাঝে গল্প করুন। দেখবেন নিজেকে অনেক হাল্কা লাগছে।
সবার প্রিয় নয়
মানুষ চায় নিজেকে সবার কাছে জনপ্রিয় করে তুলতে। অথচ এটি একটি ব্যর্থ চেষ্টা। একজন মানুষ সবার কাছে কখনও প্রিয় হতে পারে না। তাই এই চিন্তা বাদ দিলে সুখী হওয়া যায়। দুশ্চিন্তামুক্ত থাকা যায়।
না বলতে শিখুন
দুশ্চিন্তাকে দূরে রাখতে হলে আপনাকে ‘না’ বলা শিখতে হবে। সুন্দর করে বুঝিয়ে ‘না’ বলুন। দেখবেন কেউ রাগ বা অসন্তুষ্ট হবেন না।
ধৈর্য ধরুন
ধৈর্য মানুষের একটি অসাধারণ গুণ। অনেকে কোনো সমস্যা সমাধান মুহূর্তের মধ্যে না করতে পারলে দুশ্চিন্তা আর হতাশায় ভোগেন। কিন্তু দেখা যায় কয়েকদিন পর এমনিতেই সমস্যার সমাধান হয়ে যায়। দুশ্চিন্তার পরিবর্তে ধৈর্য ধরুন।
পর্যাপ্ত ঘুম
দুশ্চিন্তামুক্ত থাকতে পর্যাপ্ত ঘুম অত্যন্ত জরুরি। রাতে জেগে থাকা শরীরের জন্য ক্ষতিকর। তাই সুস্থ থাকতে প্রতিদিন ছয় থেকে আট ঘণ্টা ঘুম জরুরি। তবে ঘুমটা রাতে হওয়া ভালো।
অ্যালকোহল থেকে বিরত থাকুন
অ্যালকোহল রক্তচাপ বাড়িয়ে দেয়, যা দুশ্চিন্তা বাড়িয়ে দেবে বহুগুণ। এটি আপনার হƒৎপিণ্ড অকার্যকর করে দিতে পারে। নেশাজাতীয় দ্রব্য কখনোই শরীরের জন্য ভালো কিছু বয়ে আনবে না। তাই সুস্থ থাকতে অ্যালকোহল বাদ দিন।
স্বাস্থ্যকর খাবার খান
দুশ্চিন্তা কমাতে স্বাস্থ্যকর খাবার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এর ফলে মানুষের মধ্যে স্বাস্থ্য নিয়ে দুশ্চিন্তার উদ্রেক ঘটে। প্রচুর পরিমাণে শাকসবজি, ফলমূল, শস্যদানা, ছোট মাছ ও সামুদ্রিক মাছ খাওয়ার অভ্যাস করুন।
ব্যস্ত রাখুন
দুশ্চিন্তা থেকে রক্ষা পাওয়ার সহজ একটি উপায় নিজেকে ব্যস্ত রাখা। মস্তিষ্ককে কোনো গুরুত্বপূর্ণ কাজে লাগিয়ে দিন।
কায়িক শ্রম করুন
পরিশ্রম যেমন সাফল্যের চাবিকাঠি, তেমনি সুস্বাস্থ্যের জন্য জরুরি। কায়িক পরিশ্রম মনের অতিরিক্ত চিন্তার প্রবণতাকে দূরে ঠেলে দেয়। কেবল মানসিক নয়, শারীরিক অনেক সমস্যার সমাধান হয়ে যায় প্রতিদিন অন্তত আধা ঘণ্টা পরিশ্রম করা হলে।
হাসুন
গবেষণায় দেখা গেছে, হাসি হƒদযন্ত্রকে শক্তিশালী করে। নানা অসুখ থেকে রক্ষা করে। নিয়মিত আমোদ-প্রমোদ ও হাসি মনের ওপর প্রভাব বিস্তার করে। ফলে দুশ্চিন্তা থেকে রক্ষা পাই আমরা।
ক্যাফেইনকে না
ক্যাফেইন ইন্দ্রিয়কে সজাগ করে ও মানসিক চাপবর্ধক হরমোনের পরিমাণ বাড়িয়ে দিতে পারে। এটার কিছু ভালো দিক থাকলেও পরিহার করাই উত্তম।
বেড়াতে যান
দুশ্চিন্তা কমানোর জন্য ঘুরে বেড়াতে পারেন। সবুজের মধ্যে যান। গাছপালা কিংবা সমুদ্র দেখে মনটাকে ভালো করতে পারেন।
ডাক্তারের পরামর্শ নিন
শরীরের মতো মনেরও তেমন রোগ হয়। এর ভালো চিকিৎসাও আছে। চিকিৎসায় এসব রোগ ভালো করা যায়। কিন্তু আমরা অনেকেই মনের রোগের ব্যাপারে খুবই উদাসীন। তাই চিন্তা, আবেগ ও স্মৃতিশক্তির কোনো পরিবর্তন লক্ষ করলে ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
Add Comment